জসপ্রীত বুমরা রানআপ শুরু করেছেন, তাঁর দৌড়ের সঙ্গে বাড়ছে দর্শকদের উন্মাদনা। ভারতীয় ফাস্ট বোলারের ছোড়া বলে অস্ট্রেলিয় ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার রক্ষণাত্মক খেলছেন। তা দেখে দর্শকদের চিৎকার বেড়ে যাচ্ছে কয়েক ডেসিবল। ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে ৫ অক্টোবর। কিন্তু চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের আজকের আবহ দেখার পর কে বিশ্বাস করবে সেটা! বিশ্বকাপে এর আগের চারটি ম্যাচে দর্শকের উন্মাদনা ছিল না বললেই চলে। সেই অর্থে বিশ্বকাপের শুরু যেন হলো অস্ট্রেলিয়া–ভারতের আজকের ম্যাচ দিয়েই। আর দিন শেষে ভারত জেতায় দর্শকদেরও পয়সা উসুল।
স্বাগতিকদের জয়টা অবশ্য সহজে ধরা দেয়নি। স্পিন দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ১৯৯ রানে থামিয়েও জিততে কষ্টই হয়েছে ভারতের। ২ রানে প্রথম ৩ উইকেট হারিয়ে বড় বিপদে পড়ে রোহিত শর্মার দল। মিচেল মার্শ ক্যাচ না ফেললে দলের ২০ রানে বিরাট কোহলিও আউট হতে পারতেন। সুযোগটা তিনি লুফে নিয়েছেন দুই হাতে। লোকেশ রাহুলের সঙ্গে দেড় শ ছাড়ানো জুটি গড়ে নিশ্চিত করেন ভারতের ৬ উইকেটের জয়। প্রথম ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপের স্বস্তির শুরু পেয়ে গেল ভারত।
অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণের মূল শক্তি গতি। ভারত বিশ্বকাপে মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে এসে প্রথম ম্যাচেই স্পিনারের অভাব হাড়েহাড়ে টের পেল প্যাট কামিন্সের দল। খেলা হচ্ছে ভারতের অন্যতম ‘স্পিন সেন্টার’ চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের উইকেটে, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া দলে আছেন শুধু অ্যাডাম জ্যাম্পা। অনিয়মিত বোলার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও হাত ঘুরিয়েছেন। কিন্তু সেটা কোহলি-রাহুলদের বিপদে ফেলার মতো নয়। ভারতকে যা একটু চাপে ফেলতে পেরেছেন পেসাররাই।
সেটাও ইনিংসের শুরুতে। প্রথম ওভারেই মিচেল স্টার্কের বলে স্লিপে ক্যাচ ঈশান কিষান। অনেক বাইরের আউট সুইংয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যামেরন গ্রিনের হাতে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি। পরের ওভারে আরেক ওপেনার রোহিত শার্মাও আউট। জস হ্যাজেলউডের ভালো লেংথ থেকে ভেতরে আসা বলে এলবিডব্লু হন তিনি। চারে নামা শ্রেয়াস আইয়ার একই ওভারে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ কাভারে। তিনজনই মাঠ ছাড়েন কোনো রান না করেই।
ভারতের রান তখন ৩ উইকেটে ২, ২০ রানে ৪ উইকেটও হতে পারত। অষ্টম ওভারে হ্যাজেলউডের বাউন্সারে পুল শট খেলার চেষ্টা করেন কোহলি। কিন্তু বাড়তি বাউন্সে বল খুঁজে নেয় ব্যাটের কানা। শর্ট মিড উইকেট থেকে দৌড়ে এসে বলের নিচে এসেও বল হাতে রাখতে পারেননি মার্শ। মার্শের ওই ভুলে ম্যাচের ছবিটাই পাল্টে যায়। কোহলি ও রোহিতের কেউই এরপর বড় কোনো ঝুঁকি নেননি। দরকারও ছিল না। ক্রিজে টিকে থাকলেই জয় নিশ্চিত জেনে খুবই হিসেবি ব্যাটিং করেছেন দুজন।
কোহলি ১১৬ বল খেলে ৬টি চারে ৮৫ রান করেছেন। রাহুলের সঙ্গে কোহলির ২১৫ বলে ১৬৫ রানের জুটিতে ভেঙে যায় অস্ট্রেলিয়ার জয়ের আশা। হ্যাজেলউডের বলে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে কোহলি আউট হলেও রাহুল ১১৫ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কার সৌজন্যে অপরাজিত ছিলেন ৯৭ রানে। ৮ বলে ১১ রান করে অপরাজিত ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়াও।
কোহলি-রাহুলের মতো একটা বড় জুটির অভাব ছিল অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে। ভারতের দুই স্পিনার কুলদীপ যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজার সামনে টিকতে পারেনি ওয়ার্নার-স্মিথরা। ৪৯.২ ওভার ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়া রান করেছে ১৯৯। ভারতের তিন স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা ও কুলদীপ যাদবের ৩০ ওভার থেকে মাত্র ১০৪ রান নিতে পেরেছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা, স্পিনারদেরই তারা দিয়েছেন ৬ উইকেট।
খেলা যেহেতু চেন্নাইতে, অস্ট্রেলিয়া তাকিয়ে ছিল ওয়ার্নারের দিকে। সফল আইপিএল ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ার্নারের সুনাম আছে। স্পিন সহায়ক উইকেটেও তিনি ভালো শুরু এনে দেবেন, এমন প্রত্যাশা ছিলই। ৫২ বলে ৪১ রান করে কুলদীপের বলে আউট হওয়ার আগে ওয়ার্নার দলের সে আশা পূরণও করছিলেন। টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন স্মিথও। কিন্তু জাদেজার বাঁহাতি স্পিনে ৭১ বলে ৪৬ রানে থামে তাঁর ইনিংস। শেষ দিকে মিচেল স্টার্কের ২৮ রানের সৌজন্যে অস্ট্রেলিয়া শেষ পর্যন্ত দুই শ ছুঁই ছুঁই রান করে। কিন্তু ভারতের মাটিতে ভারতকে হারাতে যথেষ্ট ছিল না সেই রান।