সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে যাওয়ার পর নিজেদের মধ্যে কথাবার্তার সময় পেল কোথায় বাংলাদেশ দল! পরদিনই যে নেমে যেতে হয়েছে সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে। এ কারণেই ম্যাচ শেষে মোসাদ্দেক জানালেন, প্রথম ম্যাচ শেষে দলের মধ্যে তেমন কোনো আলোচনাই হয়নি। সিরিজে টিকে থাকতে হলে দ্বিতীয় ম্যাচে জিততে হবে—এটা তো সবার জানাই ছিল।
বাঁচা–মরার সেই ম্যাচে অন্য এক বাংলাদেশকেই দেখা গেল। টসে হেরে বোলিংয়ে নেমে মোসাদ্দেক হোসেন তাঁর অফ ব্রেক দিয়ে খেলার গতিপথ অনেকটাই ঠিক করে দিয়েছিলেন। ৩১ রানের মধ্যে জিম্বাবুয়ের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে এলোমেলো করে দিলেন প্রতিপক্ষকে। ৪ ওভার বল করে ২০ রানে ৫ উইকেট—মোসাদ্দেকের ক্যারিয়ার–সেরা বোলিংই শুধু নয়, হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টি–টোয়েন্টিতে সেরা বোলিং পারফরম্যান্সও।
৩১ রানে ৫ উইকেট হারিয়েও জিম্বাবুয়ের সংগ্রহটা মন্দ হয়নি। সেটি সিকান্দার রাজার কল্যাণেই। কালকের মতো আজও সিকান্দার দারুণ ব্যাটিংয়ে (৫৩ বলে ৬২) দলের সংগ্রহটা ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৬–এ নিয়ে যান। মোসাদ্দেকের ৫ উইকেট যেমন জিম্বাবুয়েকে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখতে দেয়নি, ঠিক তেমনি রান তাড়ায় বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছেন লিটন দাস, ৩৩ বলে ৫৬ রান করে।
ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নুরুলও এ দুজনের নামই নিলেন, ‘বোলিংয়ে সুরটা ঠিক করে দিয়েছে মোসাদ্দেক, ব্যাটিংয়ে ঠিক তেমননি লিটন। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স।’
এই ম্যাচের আগে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে মোসাদ্দেকের উইকেট ছিল ৭টি। অনেকটা অনিয়মিত বোলার হিসেবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যবহৃত হন তিনি। তবে নিজেকে ‘অনিয়মিত বোলার’ মানতে আপত্তি আছে মোসাদ্দেকের। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সেটিই বললেন, ‘আমি যখন বোলিং করি, তখন কখনোই ভাবি না যে আমি অনিয়মিত বোলার। বোলিংয়ে আমি সব সময় নিয়মিত বোলারের দায়িত্বটাই নেওয়ার চেষ্টা করি।’
যেকোনো সাফল্যের পেছনেই পরিকল্পনা থাকে। আজ বোলিংয়ের আগে নিজেদের পরিকল্পনাটাও জানিয়েছেন মোসাদ্দেক, ‘উইকেটটা যদি দেখেন, বোলারদের জন্য খুব যে সহায়ক ছিল, সেটা বলব না। অবশ্যই উইকেট খুব ভালো ছিল। অধিনায়ক আমাকে বল দিয়ে বলেছিলেন রান আটকানোর কথা।’
সেই রান আটকানোর বোলিং করতে গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে টি–টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সেরা বোলিং করে ফেলেছেন। শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই নয়, স্বীকৃত ক্রিকেটেই এই প্রথম ৫ উইকেট মোসাদ্দেকের। যদিও এটাকেও বড় করে দেখাতে চাইলেন না তিনি, ‘আমি কোনো কিছু মাথায় নিয়ে বোলিং করিনি। ভালো জায়গায় বল ফেলেছি, সে জন্য হয়তো সফল হয়েছি।’
মোসাদ্দেক অনেকটাই এগিয়ে রেখেছিলেন কাজ, তারপরও তা শেষ করতে হতো। নুরুল হাসানের মতো মোসাদ্দেকও সফল রান তাড়ার মূল কৃতিত্বটা অনুমিতভাবেই দিলেন লিটনকে, ‘প্রথম ম্যাচ কিংবা এই ম্যাচে, লিটন কিন্তু প্রতিদিনই আমাদের জন্য সুন্দর একটা শুরু করে দিচ্ছে। আমাদের দলের জন্য এটা খুবই ভালো, একটা ম্যাচে রান তাড়া করতে যা করা দরকার, সেটা লিটন আমাদের জন্য করছে। শেষের দিকে শান্ত (নাজমুল হোসেন) এবং আফিফ (আফিফ হোসেন) নিজেদের ম্যাচুরিটি দেখিয়েছে।’
আগামী পরশু মঙ্গলবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ। সিরিজ–নির্ধারকও। আজকের দারুণ জয় যে সেই ম্যাচের জন্য টনিক, সেটাও ফুটে উঠল মোসাদ্দেকের কথায়, ‘এই ম্যাচে আমরা যা যা করেছি, সেগুলো ঠিকঠাক রাখতে পারলে আমরা শেষ ম্যাচেও জিতব।’