লর্ডসে অভিষেক হচ্ছে জশ টাংয়ের
লর্ডসে অভিষেক হচ্ছে জশ টাংয়ের

চায়ের কাপ তুলতে পারতেন না, সেই টাংয়ের অভিষেক হচ্ছে লর্ডসে

জশ টাং এর আগে কখনো লর্ডসে খেলেননি।

ক্রিকেটের মক্কায় আগেও এসেছেন, তবে খেলা দেখতে। উস্টারশায়ারের অনূর্ধ্ব-১০ দলে খেলেছিলেন ছয় বছর বয়সে, সে হিসাবে কাউন্টি ক্লাবটির সঙ্গে এই পেসার আছেন প্রায় দুই দশক। তবে লর্ডসে কখনো খেলা হয়নি। বৃহস্পতিবার টাং লর্ডসে নামবেন, এবার সরাসরি ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ইংল্যান্ডের ৭১১ নম্বর টেস্ট ক্রিকেটার হচ্ছেন টাং।

অথচ ২৫ বছর বয়সী টাং বছরখানেক আগেও ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করেছিলেন। চায়ের কাপ তোলার মতো স্বাভাবিক কাজই যখন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছিল, তখন ক্রিকেট খেলার ভাবনা মাথায় থাকেই–বা কীভাবে! কাঁধের দুর্লভ এক চোটে পড়ে হতাশাগ্রস্ত টাংয়ের ভাবনায় ছিল অবসর নেওয়া। ক্রিকেট বাদ দিয়ে জীবনে কী করবেন, এজেন্ট ফিল ওয়াটসনের সঙ্গে সে আলোচনাও করেছিলেন।

থোরাসিস আউটলেট সিনড্রোম নামের ওই অসুখের কারণে নিজের ডান হাতে কোনো অনুভূতি ছিল না টাংয়ের। দুই দফা অস্ত্রোপচারের পরও অবস্থার উন্নতি ছিল না তেমন। ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের আগস্ট—টাংয়ের জীবনের চরম দুঃসময়। বিশেষ করে শীতের সময়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করাই অস্বাভাবিক রকম কঠিন ছিল তাঁর কাছে, ক্রিকেট খেলার ভাবনা তো অনেক দূরের ব্যাপার।

দুজন বিশেষজ্ঞর পরামর্শে যখন উন্নতি নেই, ডেভিড মারে নামের তৃতীয় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন টাং। আরেক দফা অস্ত্রোপচার, এরপর বোটক্স নামের ইনজেকশন। টাংকে সে ইনজেকশন দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল এমন—দেখাই যাক না কী হয়! সে ইনজেকশনেই বদলে যায় সব।

ছয় বছর বয়স থেকে উস্টারশায়ারের হয়ে খেলেন জশ টং

টাং মাঠে ফেরেন আবার। এসেক্সের বিপক্ষে নিজের প্রত্যাবর্তনের ওই ম্যাচে ৮ ওভার বোলিং করে ৪১ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। ক্যারিয়ারের নতুন শুরুটাও হয় ওখান থেকেই। ইংল্যান্ড লায়নস দলে ডাক পান শ্রীলঙ্কা সফরে। তবে এত দ্রুত টেস্ট অভিষেক হবে, সেটি তিনি নিজেও ভাবতে পারেননি। টেস্ট অভিষেক কেন, টেস্ট দলে ডাক পেয়েই বিস্মিত ছিলেন টাং।

সপ্তাহখানেক আগে নিউজিল্যান্ডের অপরিচিত এক নম্বর থেকে ফোন আসে টাংয়ের কাছে। ওপ্রান্তে ছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার খবরটিও প্রধান কোচ ম্যাককালামের কাছেই পান তিনি। স্বাভাবিকভাবেই সেটি বিশ্বাস হচ্ছিল না তাঁর।

জেমস অ্যান্ডারসন, ওলি রবিনসনের চোটের শঙ্কা ছিল, টাংকে ব্যাকআপ হিসেবেই ডেকে পাঠানো হয়েছিল বলে ভাবা হয়েছিল। এমনকি দলের সঙ্গে থাকা ক্রিকেটাররাও ভেবেছিলেন, টাং এসেছেন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতেই। তবে দুটি অনুশীলন সেশনে টাংকে দেখেই ম্যাককালামের মনে হয়েছে, তিনি টেস্ট খেলতে প্রস্তুত। সে অনুযায়ী দলও ঘোষণা করেছে ইংল্যান্ড।

টাংকে নিয়ে ম্যাককালাম বলেছেন, ‘দেখে মনে হয়েছে, সে বেশ দ্রুতগতিতে বোলিং করে, দারুণ সব স্কিলও আছে। অবশ্যই সে একটু কাঁচা হীরার মতন। ক্যারিয়ারজুড়েই চোট ছিল, তবে সম্প্রতি দীর্ঘ একটা সময়জুড়ে চোটের বাইরে সে, সেটিও তার পক্ষে এসেছে। আমাদের মনে হয়েছে, তার কাছে রোমাঞ্চকর কিছু আছে, এ কারণেই দলে নেওয়া হয়েছে। তাকে দেখে অসাধারণ মেধাবী একজন মনে হয়েছে।’

ইংল্যান্ডের ৭১১তম টেস্ট ক্রিকেটার জশ টাং

ক্যারিয়ারজুড়ে চোটের সঙ্গে লড়াই করেছেন যিনি, অন্যদের চোটে সেই তাঁরই অভিষেকের দুয়ার খুলে গেল। টাংয়ের অভিষেক শুধু তাঁর নিজের জন্য নয়, তাঁর পরিবার, কাউন্টির জন্যই বিশেষ একটি ঘটনা। টাং নিজেই বলেছেন, ‘উস্টারে বড় একটা ঘটনাই হতে যাচ্ছে এটি। ছয় বছর বয়স থেকে সেখানে খেলছি, এরপর বয়সভিত্তিক দল, প্রথম পেশাদার চুক্তি। উস্টারের অনেকেই আমার ক্যারিয়ারে প্রভাব রেখেছে। আমার এই ভ্রমণে সহায়তা করার জন্য তাদের সবার প্রতিই কৃতজ্ঞ আমি।’

তবে বাবা ফিলের জন্য টাংয়ের অভিষেক বেশ আবেগময় একটি ব্যাপারই হতে যাচ্ছে। এমনিতে তিনি ক্রিকেট কোচ, বৃহস্পতিবার উস্টারশায়ারের উদীয়মান খেলোয়াড় প্রোগ্রামের প্রধান গেভিন হেইনসের সঙ্গে তাঁর একটা কাজ থাকার কথা ছিল। তবে আবেগপ্রবণ ফিলকে চেনেন বলে তাঁকে আগেভাগেই লর্ডসের যাওয়ার অনুমতিটা দিয়ে রেখেছেন হেইনস।

টাংকে এ টেস্টে মূলত খেলানো হচ্ছে ক্রিস ওকসকে বাদ দিয়ে। লর্ডসে সেঞ্চুরি, ৫ উইকেট, ম্যাচে ১০ উইকেট—তিন ধরনের অনার্স বোর্ডেই নাম আছে ওকসের। বেশ কিছুদিন পর টেস্ট দলে ফেরা এই অলরাউন্ডারই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবেন, ধরে নেওয়া হয়েছিল এমন।

সবকিছুই তাই টাংয়ের কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকছে, ‘অসাধারণ এক অনুভূতি। ভাষা হারিয়ে ফেলছি। দলে ডাক পাওয়া থেকে শুরু করে এখন একাদশে সুযোগ পাওয়া—স্বপ্নপূরণের মতো ব্যাপার। লর্ডসে খেলার কোনো রকম প্রত্যাশা ছাড়াই এসেছিলাম।’

বৃহস্পতিবার টেস্ট ক্যাপ পাবেন, তবে জাতীয় দলের হেলমেট তাঁর কাছে এসেছে আগেই। তবে যে বাক্সে এসেছে, তার ওপর টাং বানানটা ভুল ছিল। আপাতত টাংয়ের আশা, জার্সিতে তাঁর নামের বানানটা ঠিক থাকবে। টাং লর্ডসে খেলতে নামছেন, এটুকু আশা তিনি করতেই পারেন।