ওয়ার্নারের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন ক্লার্ক (ডানে)
ওয়ার্নারের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন ক্লার্ক (ডানে)

বলছেন ক্লার্ক: সিনিয়রদের সহায়তা না পেলে শুরুতেই বাদ পড়তেন ওয়ার্নার

ক্যারিয়ারে কম বিতর্কে জড়াননি ডেভিড ওয়ার্নার। মাঠে ও মাঠের বাইরে সেসব কর্মকাণ্ডের কারণে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) অনেক আগেই কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে তাঁকে বাদ দিয়ে দিত বলে মনে করেন সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। তবে মেধা ও সামর্থ্যের কারণে সিনিয়র ক্রিকেটার ও বোর্ড কর্তাদের সহায়তা ও সমর্থন পেয়েছিলেন বলেই খেলে যেতে পেরেছেন ওয়ার্নার, ক্লার্ক জানিয়েছেন এমন।

২০১১ সালে ওয়ার্নারের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন ক্লার্ক। ২০১৫ সালে তাঁর অধীনেই বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ওয়ার্নার। ২০১৮ সালে কেপটাউনে বল টেম্পারিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় তখনকার সহ-অধিনায়ক ওয়ার্নারকে, তবে তার আগেই বেশ কয়েকবার বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি।

২০১৩ সালে বার্মিংহামের একটি পানশালায় ইংল্যান্ডের জো রুটকে ঘুষি মেরে অ্যাশেজের প্রথম দুই টেস্টে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ওয়ার্নার। সে সময় অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ছিলেন ক্লার্ক। ওয়ার্নারের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টের আগে ইএসপিএনের একটি শোতে ক্লার্ক বলেন, ‘ডেভি সব সময়ই একটু দৃঢ় চেতা, যার মতো একজনকে দলে পেতে ভালোবাসতাম—সেই ইনটেন্ট, আগ্রাসী অ্যাপ্রোচ। কিন্তু সে মাঠের বাইরেও একই ছিল, ছোটখাটো একটা ষাঁড়। এগোনোর পথে ঝামেলাতেও পড়েছে।’

২০১১ সালে টেস্ট অভিষেক হয় ওয়ার্নারের, সে সময় অধিনায়ক ছিলেন মাইকেল ক্লার্ক

কিন্তু ওয়ার্নার সব সময়ই সমর্থন পেয়ে এসেছেন বলে জানান ক্লার্ক, ‘তবে আমার মনে হয়, সে অনেক সহায়তা ও সমর্থন পেয়েছে। নিশ্চিতভাবেই সিনিয়র খেলোয়াড় ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার মধ্য থেকে। সেটিই তার চুক্তি বাতিল হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে। তার জন্য একটু লড়াইও করতে হয়েছে। কারণ, সে দলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অধিনায়ক হিসেবে আত্মবিশ্বাস (ছিল) যে সে ক্যারিয়ারের শুরুতে আমাদের সবার মতোই তরুণ, যে সামনে এগোতে শিক্ষা পাবে।’

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট কাঠামোতে ওয়ার্নার ব্যতিক্রমী একজনই। ১৩২ বছরের ইতিহাসে প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে কোনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচের অভিজ্ঞতা ছাড়াই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। শেষের আগে ওয়ার্নারের প্রশংসা করেছেন ক্লার্ক, ‘ডেভি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলে সর্বোচ্চ পর্যায়েই শিখেছে, যেটি করা সহজ নয়। ফলে তাকে অনেক কৃতিত্ব দিতে হবে।’

তবে ওয়ার্নারকে নিয়ে শুরুতে সংশয় ছিল বলেও জানান ক্লার্ক, ‘তার বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ার, ওপেনিং করা তো অনেক কঠিন। ডেভি যেভাবে খেলত, অনেক সংশয় ছিল। সে কি টেস্ট ক্রিকেটে টিকতে পারবে? টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড় হিসেবে শুরু করেছিল এবং ঝুঁকিও ছিল। আমার মনে হয়, প্রথম দিন থেকেই সবাই তার মেধার ছাপ দেখেছে, এত প্রতিভা। অন্য অনেক খেলোয়াড়ই যা করতে পারে না, সেটির সামর্থ্য (ছিল)। আর সে ওপেনিং ব্যাটসম্যানের ভূমিকাতেই এসব করেছে কিন্তু ইনটেন্ট ঠিক রেখে। যেটি বলার চেয়ে করা কঠিন।’

কেন কঠিন, ক্লার্ক ব্যাখ্যা করেছেন সেটিও, ‘ম্যাথু হেইডেন এমন একজন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান, ওপেনিংয়ে এসে যিনি সুরটা ধরিয়ে দিতেন। আমি হেইডোস ও মাইকেল স্ল্যাটারকে নেমে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় খেলতে দেখতে ভালোবাসতাম। মনে হয় ডেভি সে ঘরানা ধরে রেখেছে। বল যদি ফুললেংথে থাকে, ইনিংসের শুরুতে সে ড্রাইভ করত। যদি শর্ট লেংথে থাকে, তাহলে পুল বা হুক করত, সে রান করতে চাইত। তবে টেস্ট ক্রিকেটে একেবারে নতুন বলে এটি বলার চেয়ে করা কঠিন। অনেক প্রশংসা প্রাপ্য তার।’

সিডনিতে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলবেন ওয়ার্নার

সিডনি হতে যাচ্ছে ওয়ার্নারের শেষ টেস্ট, পাশাপাশি ওয়ানডে থেকেও অবসর নিয়েছেন তিনি। যদিও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছেন ওয়ার্নার। তবে ক্লার্কের মতে, এ ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই বিদায় বললে সেটি উপযুক্ত হতো ওয়ার্নারের জন্য, ‘মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে (তার) সরে যাওয়ার আদর্শ সময় এটি, তবে সে টি-টোয়েন্টি খেলে যেতে চায়। এখন ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি খেলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক খেলার মাঝে ভারসাম্য লাগবে। অবশ্যই দলে জায়গা করে নিতে হবে। মনে হয় তার ঘরোয়া ফর্মের দিকে নির্বাচকেরা দেখবেন। (তবে) আমাদের অনেক তরুণ খেলোয়াড় উঠে আসছে টি-টোয়েন্টিতে, যাদের বিশ্বকাপে নেওয়া হতে পারে। এরপরও ডেভি যেভাবে তিন সংস্করণেই খেলেছে, তাকে কৃতিত্ব দিতে হবে।’