বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে রেখেছেন আগেই। কিন্তু তখন জানা ছিল না আচমকাই জাতীয় দল থেকে ডাক আসবে। ঝামেলাটা বেধেছে দুটোর সময় সাংঘর্ষিক হয়ে যাওয়ায়। তবে ঝামেলা শুধু বিয়ের অনুষ্ঠান ও খেলার ব্যস্ততা একই সময়ে হয়ে যাওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। গোলমাল বাধার বড় কারণ খেলার ভেন্যু এবং বিয়ের আয়োজনস্থলের মধ্যে দূরত্ব পাঁচ হাজার মাইল। খেলাটা পাকিস্তানে আর বিয়েটা ইংল্যান্ডে।
এ ক্ষেত্রে সহজ সমাধান বিয়ের সময় পিছিয়ে দেওয়া। কিন্তু সে পথে হাঁটতে মন সায় দেয়নি। অগত্যা বড় এক ‘চ্যালেঞ্জ’ই নিয়ে ফেলেছেন ওলি স্টোন। ইংল্যান্ডের এই পেসার পাকিস্তানে খেলবেন, খেলা শেষ করে দেশের উদ্দেশে উড়াল দেবেন, বিয়ে সেরে আবার পাকিস্তানে ফিরবেন।
৩০ বছর বয়সী স্টোনের খেলা–বিয়ে–খেলা পর্বের এই অধ্যায়ের মঞ্চায়ন ঘটতে যাচ্ছে অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। বাগদত্তা জেসের সঙ্গে তাঁর বিয়ে অনুষ্ঠান ১২ অক্টোবর। ইস্ট অব ইংল্যান্ডের নরফোকে বিয়ের আয়োজনের সব প্রস্তুতিই এখন শেষের পথে। এর মধ্যে স্টোনকে যেতে হচ্ছে পাকিস্তানে। সেখানে স্বাগতিকদের সঙ্গে তিন টেস্টের সিরিজ খেলবে ইংল্যান্ড। মুলতানে সিরিজের প্রথম ম্যাচ শুরু হবে ৭ অক্টোবর। খেলার পঞ্চম ও শেষ দিন ১১ অক্টোবর। এর ২৪ ঘণ্টা পরই পাঁচ মাইল দূরে স্টোনের বিয়ের অনুষ্ঠান।
বিবিসি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উভয়কুল রক্ষার এই পরিস্থিতিকে স্টোন মূল্যায়ন করেছেন এভাবে, ‘ব্যাপারটা কিছুটা পাগলাটে। তবে দারুণ সমস্যাও।’ স্টোন তাঁর দীর্ঘদিনের প্রেমিকা জেসকে বিয়ের প্রস্তাব দেন ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে। তখন ইংল্যান্ড দল নিয়ে তাঁর কোনো ভাবনা ছিল না। তখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে তিনটি টেস্ট খেলেছেন, যার সর্বশেষটি ২০২১ সালে।
স্টোন ও জেস ভেবেছিলেন, ২০২৪ সালের অক্টোবরে কোনো ব্যস্ততা থাকবে না, কাউন্টি শেষ হয়ে যাবে এর আগেই। কিন্তু জিমি অ্যান্ডারসন টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর ইংল্যান্ডের ম্যানেজমেন্ট যাঁদের দলে থিতু করার পরিকল্পনা নিয়েছে, স্টোন তাদের অন্যতম। এরই মধ্যে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি ম্যাচও খেলেছেন।
‘আমাকে যখন শ্রীলঙ্কা সিরিজের ইংল্যান্ড স্কোয়াডে ডাকা হলো, জেস আর আমি ভাবছিলাম পাকিস্তান সিরিজেও দলে রাখলে কী হবে! জেস বলছিল, বিয়েটা সে পেছাতে রাজি আছে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে দেখি, সব ঠিকঠাক রেখে এগোনো যায় কি না। সে আমার জন্য যে ছাড়টা দিয়েছে, আমি অন্তত চেষ্টা করে দেখি’—বলছিলেন স্টোন।
পরে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রব কি এবং কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জানান, বিয়ের অনুষ্ঠান থাকলেও প্রথম টেস্টে খেলতে প্রস্তুত আছেন, এরপর দেশে ফিরে বিয়েটা সেরে আবার দ্বিতীয় টেস্টের আগেই দলে যোগ দেবেন। তারাও রাজি হওয়াতে এখন পর্যন্ত পরিকল্পনায় বদল আনতে হয়নি স্টোনকে।
মুলতানে স্টোনকে খেলতেই হবে এমন নয়। পাকিস্তান সফরের ইংল্যান্ড দলে মোট ছয়জন পেসার আছেন। এর মধ্যে ক্রিস ওকসও আছেন, যিনি স্টোনসের বিয়েতে অন্যতম অতিথি। স্টোনস ভেবে রেখেছেন, মুলতান টেস্টের একাদশে না থাকলেও পঞ্চম দিন পর্যন্ত দলের সঙ্গে থাকবেন, ‘ম্যাচ যদি পঞ্চম দিনের শেষ বল পর্যন্তও যায়, আমি দলের সঙ্গে থাকব। আমি নিশ্চিত, পরের দিন কিছুটা ব্যথা থাকবে, তবে সেটাও ভালোই। যখন ওকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তখন থেকে এ রকম কিছুরই অপেক্ষা করছি আমি।’