সাকিব আল হাসান ছিলেন রংপুর রাইডার্সের টেবিলে। বিপিএলে সাকিবের সাবেক দল ফরচুন বরিশালের টেবিলে দেখা যাচ্ছিল তামিম ইকবালকে। মেহেদী হাসান মিরাজও ছিলেন সেখানে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করা তাওহিদ হৃদয় এসেছেন তাঁর নতুন দলের ড্রাফট টেবিলে। গতবারের মতো এবারও সিলেট স্ট্রাইকার্স দলে খেলবেন নাজমুল হোসেন। আজ তাঁকে দেখা গেল স্ট্রাইকার্সের ড্রাফট টেবিলে। তাসকিন আহমেদ, মোসাদ্দেক হোসেন বিপিএলে নতুন দল দুর্দান্ত ঢাকার হয়ে ড্রাফট এসেছেন।
আজ ঢাকার একটি হোটেলে জাতীয় দলের এই তারকা ক্রিকেটারদের উপস্থিতিতে হয়ে গেল বিপিএলের দশম আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফট। দল সাজানোর এই আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাই জানালেন তাঁদের দল কেমন হয়েছে। বরিশালের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করা তামিমকে ড্রাফট শেষে নিজেদের পারফরম্যান্সে খুশিই মনে হলো, ‘আমরা যে ধরনের দল করতে চাচ্ছিলাম, অলমোস্ট ৯৫%, আমরা ওই ধরনের টিম করতে পেরেছি। যে খেলোয়াড়কে আমরা টার্গেট করেছিলাম, মোস্টলি ওদের পেয়েছি। আমরা খুশি।’
বরিশালের গত বছরের দল থেকে ধরে রাখা ক্রিকেটারদের মধ্যে ছিলেন আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ। আজ ড্রাফট থেকে দলে ভিড়িয়েছে মুশফিকুর রহিমকে। তামিম দুই অভিজ্ঞকে দলে পেয়ে খুব খুশি, ‘এটা বড় প্লাস পয়েন্ট। আমার কাছে মনে হয় তারা অনেক সফল বিপিএলে, এত অভিজ্ঞ (খেলোয়াড়) থাকা একটা দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তরুণদেরও সাপোর্ট আছে। আপনি যদি আমাদের দলটা দেখুন, দুটিরই মিশ্রণ আছে।’
তামিম নিজে কীভাবে বরিশালের সঙ্গে চুক্তি করলেন, সে গল্পটাও জানিয়েছেন আজ, ‘মিজান (ফরচুন বরিশালের কর্ণধার) ভাই আসলে বিপিএল নিয়ে কিছু বলেননি, উনি বলেছেন তার সঙ্গে কফি খাওয়ার কথা। ওভাবেই কফি খেতে খেতে আলোচনা এবং ওটার মধ্যে বিপিএলের ব্যাপারটা আলোচনায় আসে।’
এর আগে করোনার সময় পাঁচ দলের বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি লিগে ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলেছিলেন তামিম। আরও একবার একই দলে ফেরার পেছনে অতীত অভিজ্ঞতাও একটা কারণ, ‘আপনারা জানেন ওইটা খুবই কঠিন সময় ছিল। আমি যেহেতু এখানে একবার খেলেছি, সো আমি ওনাকে ভালোভাবে জানি। যেকোনো সফল ফ্র্যাঞ্চাইজিতে যেকোনো ক্রিকেটারই খেলতে চাইবে, তারা সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি। যে কারণে বেশি সময় লাগেনি (ভাবতে)।’
বরিশালের ধরে রাখা ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজও। দল নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘আমি শেষ বছর ছিলাম বরিশাল দলে, আমরা হয়তো অল্পের জন্য ভালো কিছু করতে পারিনি। আমি আশা করি যে দলটা করা হয়েছে, যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের দলটা ভারসাম্যপূর্ণ হয়েছে। এখন শুধু মাঠে ভালো খেলতে হবে।’
ড্রাফট টেবিলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের পারফরম্যান্সেও সন্তুষ্ট জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাজমুল। তাঁর দাবি, ‘আমরা যা চেয়েছিলাম, সেটা হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, এবারও আমাদের ভালো করা সম্ভব।’ দলটির ধরে রাখা ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন মাশরাফি বিন মুর্তজা। আজ তিনি ড্রাফট টেবিলে না থাকলেও দলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন নাজমুল। গতবারের রানার্সআপ দল সিলেট এবারও বিপিএলে ভালো করবে, এমন আশা জাতীয় দলের এই ক্রিকেটারের।
গতবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস বরাবরের মতো এবারও একঝাঁক তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে দল সাজিয়েছে। ড্রাফট থেকে বেরিয়ে দলটির মালিক নাফিসা কামাল এবারও শিরোপা ধরে রাখার প্রত্যাশার কথা জানান। বিপিএলের দশম আসর নিয়ে কী প্রত্যাশা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘আমাদের দেখে কি মনে হয় অন্য কোনো প্রত্যাশা থাকতে পারে? এখন থেকেই চিন্তা করছি কখন আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে মাঠে ফাইনালের দিন ট্রফি নিয়ে, ইনশা আল্লাহ।’
কুমিল্লার ধরে রাখা ও সরাসরি চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে আজকের ড্রাফটের পারফরম্যান্স, সব মিলিয়ে কুমিল্লায় আরও একবার তারার হাট বসতে যাচ্ছে। নাফিসাও এতে খুশি, ‘দলটা আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো হয়েছে। যেহেতু ড্রাফটের আগে আমরা কিছুটা কাজ করতে পেরেছি বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে। আমাদের পছন্দ এবং সন্তুষ্টি অনুযায়ী আমরা অনেক খেলোয়াড় নিতে পেরেছি। বেশির ভাগই পুরোনো খেলোয়াড়, হাতে গোনা এক-দুজন নতুন আসবেন। যেমন ইফতিখার, জামান খান। বাকি সবাই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অনেক পুরোনো খেলোয়াড়, তারা কেবল তাদের পুরোনো ঠিকানা, পরিবারে ফিরছে।’
নতুনদের মধ্যে আলোচিত নাম তাওহিদ হৃদয়। গত বছর সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে দারুণ খেলার পর জাতীয় দলেও সে ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন তিনি। কুমিল্লা সেই তাওহিদকে এবার সরাসরি চুক্তিতে দলে ভিড়িয়েছে। নাফিসা এ নিয়ে বললেন, ‘নতুন খেলোয়াড় যাদের নিয়ে দল করেছি যেমন তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে আমি খুবই রোমাঞ্চিত। আমাদের যেটা সংস্কৃতি, বিদেশিরা অভিজ্ঞ হয় আর স্থানীয়রা তরুণ, চ্যালেঞ্জিং, নতুন এবং এক্সাইটিং। এই কম্বিনেশনটা আমাদের জন্য কাজ করে।’
কাগজে-কলমে রংপুর রাইডার্সও বেশ ভালো দল। ধরে রাখা ও সরাসরি চুক্তির তালিকায় রংপুরে তারকার ভিড়। সাকিব তো আছেনই। স্থানীয়দের মধ্যে আছেন নুরুল হাসান, শেখ মেহেদী হাসান ও হাসান মাহমুদ। বিদেশিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাবর আজম, এহসানউল্লাহ, মাথিশা পাথিরানা, ব্রান্ডন কিং, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও নিকোলাস পুরান। আজ ড্রাফট থেকে রনি তালুকদার ও শামীম হোসেনকে দলে নিয়েছে রংপুর। বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে রংপুরের প্রথম চাওয়া ছিল রাকিবুল হাসান। কিন্তু রাকিবুলকে বরিশাল নেওয়ায় আরেক বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদকে নিয়েছে রংপুর।
সব মিলিয়ে রংপুরের কোচ সোহেল ইসলামকে সন্তুষ্টই মনে হলো, ‘সব মিলিয়ে ভালোই বলব। আমাদের কম্বিনেশনের জন্য রনি ও শামীমকে দরকার ছিল। ওদের আমরা শুরুতেই নিতে পেরেছি। আর তারকাদের সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে বলব, শিরোপা জিততে হলে বড় নাম লাগেই। একটা মানসিকতার ব্যাপার থাকে, কাগজে-কলমের ব্যাপার থাকে। সেদিক থেকে অবশ্যই নিজেদের কিছুটা এগিয়ে রাখব।’