নিজেকে বদলেছেন মোহাম্মদ নাঈম, রান করেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। জাতীয় দলে ফেরার পর এখন তাঁর চোখ বিশ্বকাপেও।
জাতীয় দলের নেটে মোস্তাফিজুর রহমানকে সহজে বিস্মিত হতে দেখা যায় না। তিনি অনুশীলনে আসেন। হাসিঠাট্টা করেন। নিজের যা করার তা করে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান। কিন্তু গত পরশু নিজের বোলিংয়ে মোহাম্মদ নাঈমের একটি শট দেখে একটু যেন অবাকই হলেন এই বাঁহাতি পেসার। অফ স্টাম্পের বাইরের ভালো লেংথের বলে নাঈম লফটেড ড্রাইভ করলেন কল্পিত মিড অনের ওপর দিয়ে। শুধু মোস্তাফিজ নন, নেটের পেছনে দাঁড়ানো প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের হাততালি দেখে মনে হয়েছে, তিনিও বেশ খুশি।
মোস্তাফিজের অবাক হওয়ার কারণটা পরে পরিষ্কার হলো। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে দুই বছর পর জাতীয় দলে ফেরা নাঈমকে সাধারণত মিড অন বা কাভারের ওপর দিয়ে খেলা ওই শটটা খেলতে দেখা যেত না। সম্প্রতি তিনি এই শটটা আয়ত্ত করেছেন। স্পিনারদের বিপক্ষে সুইপ শটও নাঈমের অস্ত্রাগারের নতুন সংযোজন। এ তো গেল ক্রিকেটীয় দক্ষতার কথা। নাঈমের দ্রুত রান করার মানসিকতার কথা না বললেই নয়। টিকে থাকতে হলে মেরে খেলতে হবে, এই ভাবনায় ব্যাটিং করেই এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ রান (৯৩২ রান, ৯১.৬৪ স্ট্রাইক রেট) করেছেন নাঈম। যে পারফরম্যান্স তাঁকে এনে দিয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলে জায়গা।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সম্ভাব্য তৃতীয় ওপেনার হিসেবে আলোচনায় আছে নাঈমের নাম। ২০২২ সালের আগস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ ম্যাচ খেলা নাঈমও তাই স্বপ্ন দেখছেন, ‘বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন কার না থাকে। আমারও আছে। তবে আপাতত আফগানিস্তান সিরিজ নিয়ে ভাবছি।’ আফগানিস্তান সিরিজটা আবার নাঈমের জন্য নতুন শুরুর মতো। ২০২০ সালে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া নাঈম এখন পর্যন্ত ম্যাচ খেলেছেন মাত্র দুটি। দেশের হয়ে ৩৫টি টি-টোয়েন্টি খেললেও নাঈমের ওয়ানডে ক্যারিয়ার যেন শুরুই হয়নি।
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল হতে কী দরকার, তা নাঈমের জানা হয়ে গেছে এত দিনে। গত বছর আগস্টে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়ার পর সে উপলব্ধি হয় ২৩ বছর বয়সী এই বাঁহাতির, ‘আমার টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইক রেট নিয়ে একটা কথা উঠেছিল। আমি তাই আমার শরীরী ভাষা থেকে শুরু করে সবকিছুতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। যেন একনিষ্ঠ হয়ে খেলতে পারি, সেই চেষ্টা করেছি।’
নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার গল্প শোনাতে গিয়ে নাঈম আরও বলেছেন, ‘দল থেকে বাদ পড়ার পর আমি এনসিএলে একটা সেঞ্চুরি করেছিলাম ১১০ বলে। এরপর বিসিএল ওয়ানডে ও প্রিমিয়ার লিগে সেটা ধরে রেখেছি। নতুন ধাঁচে খেলা শুরু করলে সেটার সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নিতেও সময় লাগে। বিসিএলে এসে সেটা ভালোভাবে অনুভব করতে শুরু করি। আমি সেই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলাম। আর প্রিমিয়ার লিগে তো দেখলেনই। মাথায় ছিল, হয়তো ব্যর্থ হব, কিন্তু আমার স্ট্রাইক রেট যেন ঠিক থাকে।’
স্ট্রাইক রেট ঠিক রাখতে হলে নাঈমের শট বাড়াতে হতো। কাট আর পুল শটে বরাবরই দারুণ এই বাঁহাতি স্পিনের বিপক্ষে সুইপ শট খেলতেন না। ছিল না লফটেড ড্রাইভও। এবারের প্রিমিয়ার লিগে তিনি দুটি শটই খেলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে, পেয়েছেন সাফল্য, ‘প্রিমিয়ার লিগে সুইপ শট খেলেছি ১১টা, এর মধ্যে ৯টা চার হয়েছে। অথচ এর আগে আমি জীবনে মনে হয় ২৫টা সুইপও খেলিনি (হাসি)। সুইপ ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা কঠিন। আর কাভার আর মিড অফ দিয়ে এবার অনেক রান করেছি। এই জায়গায় উন্নতি করায় আমি ১৫-২০টা চার বেশি মেরেছি।’
এই যে নিজেকে এভাবে বদলানো, এর জন্য নাঈমের কৃতজ্ঞতা তিন সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস, নাঈম ইসলাম ও আফতাব আহমেদের কাছে। নাফীস ও নাঈমের সতীর্থ হিসেবে প্রিমিয়ার লিগ ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ নাঈম। দুজনই তাঁর ব্যাটিংয়ের খুঁটিনাটি জানেন। প্রিমিয়ার লিগ ক্যারিয়ারের শুরুতে আফতাব ছিলেন নাঈমের কোচ। নিজের জেলা ফরিদপুরের কোচ মোখলেসুর রহমানের নামটা আলাদা করে বললেন নাঈম।
তবে নাঈম এটাও জানেন, তাঁর এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। আর সে পথটা শুরু হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে।