পুনের মাঠটা বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিশ্চয়ই পছন্দের। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের এই বিশ্বকাপের ম্যাচটা হয়েছিল এই মাঠে। সেদিন আগে ব্যাটিং করে উদ্বোধনী জুটিতে ৯৩ রান করেছিলেন লিটন দাস ও তানজিদ হাসান। এমন শুরুর পরও বাংলাদেশ দল সেদিন ২৫৬ রানের বেশি করতে পারেনি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আজও বাংলাদেশের খেলা একই মাঠে। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আজও ভালো শুরু এনে দিয়েছেন। ব্যতিক্রম শুধু মাঝের ওভারের ব্যাটিং। সেখানে তাওহিদ হৃদয়ের ৭৪ রানের ইনিংসের সৌজন্যে বাংলাদেশের রানটা গিয়ে দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ৩০৬। এই বিশ্বকাপে আজই প্রথম বাংলাদেশের রান তিন শ ছাড়াল।
ভারতের ম্যাচের মতো আজও লিটন ও তানজিদ শুরুর কয়েকটি ওভার দেখে খেললেও পাওয়ারপ্লের শেষের ওভারগুলোতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। দ্রুত রান তোলায় এগিয়ে ছিলেন তানজিদ। ক্রিজ ছেড়ে খেলে অস্ট্রেলীয় পেসারদের বলে বাউন্ডারি খুঁজে নিচ্ছিলেন তিনি। লিটন সেই তুলনায় হিসাবি ব্যাটিং করছিলেন। দুজনে পাওয়ারপ্লের ১০ ওভারে ৬২ রান তোলেন।
তবে দুই ওপেনারই বড় ইনিংস খেলার দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। ইনিংসের ১১.২ ওভারে শন অ্যাবটের বলে লেগের দিকে ঠেলে খেলতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন তানজিদ। ডিপ মিড উইকেট ও ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে রেখে শর্ট বল করেছিলেন অ্যাবট। বলটায় পুল শট খেলতে গেলে দুই ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ তোলার ভয় ছিল। তানজিদ তাই লেগের দিকে ঠেলে এক রান নিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু বল লিডিং এজ হয়ে যায় অ্যাবটের হাতে।
তানজিদের আউটে ভাঙে ৭৬ রানের উদ্বোধনী জটি। আউট হওয়ার আগে ৩৪ বলে ৬টি চারে ৩৬ রান করেন তানজিদ। ১৬.৪ ওভারে ভুলটা করেন লিটন। এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি অ্যাডাম জাম্পার বলে লং অনে ক্যাচ তোলেন লিটন। সেই ওভারটা লং অন, লং অফ ফিল্ডার বাইরে রেখে বল করছিলেন জাম্পা। লিটন লেগ স্টাম্পের বলটি খেললেন ঠিক লং অফে থাকা মারনাস লাবুশেনের হাতে। ৪৫ বল খেলে ৫টি চারে ৩৬ রান করা লিটনের ইনিংস থামে তাতে।
তখন দলের রান ১০৬। ২ ওপেনারকে হারালেও রানের গতি কমতে দেননি তিনে নামা নাজমুল হোসেন। তাওহিদ হৃদয়ও চারে ব্যাটিংয়ের সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছিলেন দারুণ ব্যাটিংয়ে। দুজনই মাঝের ওভারের চ্যালেঞ্জটা উতরে যাচ্ছিলেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে। এক-দুইয়ের সঙ্গে বাউন্ডারির মিশেলে ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি রান আসছিল।
মনে হচ্ছিল, এই জুটিই বাংলাদেশের রানটাকে নিয়ে যাবে অনেক দূর। ২৮তম ওভারে নাজমুলের রানআউট সেটি হতে দেয়নি। অ্যাবটের বাউন্সার স্কয়ার লেগে পুল করে দৌড়ে এক রান নেওয়ার পর আরও একটি রানের আশায় দৌড় শুরু করেন নাজমুল। কিন্তু ততক্ষণে শর্ট মিড উইকেট থেকে দৌড়ে বলের কাছে পৌঁছে গেছেন লাবুশেন। সেখান থেকে দারুণ এক থ্রোতে নাজমুলকে রানআউট করেন তিনি। ৫৭ বল খেলে ৪৫ রান করা নাজমুলের ইনিংসটির ইতি ঘটে তাতে। হৃদয়ের সঙ্গে ৬৬ বলে ৬৩ রানের জুটিও থামে।
লাবুশেনের ফিল্ডিংয়ে থেমেছে বাংলাদেশের আরও একটি সম্ভাবনাময় ইনিংস। ছন্দে থাকা মাহমুদউল্লাহ ক্রিজে এসেই প্রতি–আক্রমণে রান বাড়াতে থাকেন। দ্রুত ৩টি ছক্কায় স্ট্রাইক রেট বাড়িয়ে নেন তিনি। হৃদয়কে নিয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের রানটাকে দুই শ’র ওপারে নিয়ে যান। তিন শ রানের মঞ্চও গড়ে দিয়েছেন। এমন সময় লাবুশেনের ফিল্ডিং আরও একবার বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে আঘাত করে। হ্যাজলউডের করা ৩৫.৪ ওভারে হৃদয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে রানআউট হন মাহমুদউল্লাহ। ২৮ বলে ৩টি ছক্কা ও ১টি চারে ৩২ রানে থামে মাহমুদউল্লাহর ইনিংস।
আরেক অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ইনিংস বড় হতে দেননি জাম্পা। নিজের শেষ স্পেলে এসেই মুশফিককে (২৪ বলে ২১ রান) মিড উইকেটে কামিন্সের ক্যাচ বানান। দুই অভিজ্ঞকে হারালেও বাংলাদেশের রান বাড়াতে থাকেন হৃদয়। ৬১ বলে অর্ধশত করেন। ৪৭তম ওভারে স্টয়নিসের ফুল টসে ছক্কা মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে ৭৯ বলে ৭৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন তিনি। ৫টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল হৃদয়ের ইনিংসে। এরপর বাংলাদেশের রানটাকে এই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো তিন শ রানে নিয়ে যান মিরাজ (২০ বলে ২৯ রান)।