বোল্ড হয়ে ফিরে যাচ্ছেন নাজমুল হোসেন
বোল্ড হয়ে ফিরে যাচ্ছেন নাজমুল হোসেন

ব্যাটিং–ধসের নতুন দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশ

আরও একবার ভালো বোলিংয়ের বিপক্ষে মুখ থুবড়ে পড়ল বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের বিগ স্ক্রিন ঠিক পশ্চিম গ্যালারির ওপরে। সাকিব আল হাসান সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন। আফগানিস্তান দলও সেদিকে তাকিয়ে। থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের জন্য সবার অপেক্ষা। পশ্চিম গ্যালারির দর্শকেরাও মাথা ঘুরিয়ে একই দিকে তাকিয়ে।

পিচিং-ইনলাইন, ইমপ্যাক্ট-ইনলাইন, উইকেট-আম্পায়ারস কল। এরপর বড় করে লেখা উঠল—আউট। সিদ্ধান্তটা দেখার পর আফগানদের উদ্‌যাপন পাশ কাটিয়ে সাকিব হাঁটা দিলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। আর পশ্চিম গ্যালারির দর্শক আসন ছেড়ে ধীরে ধীরে মাঠ ছাড়তে শুরু করলেন। বাংলাদেশের জেতার যা একটু আশা ছিল, তা ওই সাকিবের আউটে শেষ।

সাকিবের বিদায়ে অনেকটাই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের জেতার আশা

জেতার কথাটা শুনে অনেকেরই হয়তো ভ্রু কুঁচকে যাবে। প্রশ্ন তুলবেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩০০ তাড়া করা এত সোজা নাকি? রেকর্ড ঘাঁটলে দেখবেন, ৩০০ করেও আফগানিস্তানের হারের ঘটনা মাত্র একবারই ঘটেছে। ২০২২ সালে পালেকেল্লেতে শ্রীলঙ্কা আফগানদের ৩১৩ রান পেরিয়ে জিতেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ তো এমন চ্যালেঞ্জের অপেক্ষায়ই ছিল। বিশ্বকাপ ভাবনা মাথায় রেখে ভালো উইকেটে বড় স্কোর তাড়া করার অভ্যাস গড়ার স্লোগান যে এ বছরের শুরু থেকেই দিচ্ছিলেন ক্রিকেটাররা। চট্টগ্রাম ও সিলেটের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বেশি বেশি ওয়ানডে খেলার কারণও এটাই।

প্রথম ম্যাচের মতো লিটন কালও আউট হয়েছেন বল বাতাসে তুলে। মুজিব উর রেহমানের বলে দুটি বাউন্ডারির পর পঞ্চম ওভারে ফজলহক ফারুকিতে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ আউট। ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেনকে তো বোকা বানিয়ে মাঠছাড়া করেন মুজিব।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের সর্বশেষ দুটি ওয়ানডে সিরিজে সে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সফল হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে দৃশ্যপট পাল্টে গেল। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ৯ উইকেটে ১৬৩ রানে। কাল ৩৩১ রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে আরও একবার ধস বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। বিশ্বমানের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বাংলাদেশের বড় রান করার সামর্থ্য যাতে আরও একবার প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ, বাংলাদেশও খেলেছে তাদের সেরা দল নিয়ে। তামিম ইকবাল ছাড়া নিয়মিতরা সবাই যে ছিলেন একাদশে।

আফগান বোলিংয়ে দুর্বলতা খুঁজে পাওয়াও কঠিন

আফগান বোলিংয়ে দুর্বলতা খুঁজে পাওয়াও কঠিন। স্পিন শক্তিতে ঠাসা আফগানদের বোলিংয়ে গত দুই বছরে যোগ হয়েছে ফজলহক ফারুকির মতো পেসাররা। কিন্তু এই দলের বিপক্ষেই বাংলাদেশকে খেলতে হবে এশিয়া কাপে। এরপর ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে। তার আগে ব্যাটসম্যানদের এমন ভরাডুবি আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরানোরই কথা।

আউটের ধরনের কারণেই লিটনদের নিয়ে এই দুশ্চিন্তা। এই সিরিজে দুই দলের প্রথম দেখায় উইকেট ছিল অসম বাউন্সের। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সেদিনের শট নির্বাচনও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। লিটন তো সেদিনের ভুলগুলোকে ‘সিলি মিসটেক’ বলেছেন। এটাও বলেছেন, এই ভুলগুলো না করলে পরের ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ। কাল বাংলাদেশকে সে ভুল করতে হয়নি। আফগানদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনেই ভেঙে পড়েছে ব্যাটিং।

প্রথম ম্যাচের মতো লিটন কালও আউট হয়েছেন বল বাতাসে তুলে। মুজিব উর রেহমানের বলে দুটি বাউন্ডারির পর পঞ্চম ওভারে ফজলহক ফারুকিতে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ আউট। ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেনকে তো বোকা বানিয়ে মাঠছাড়া করেন মুজিব।

ষষ্ঠ ওভারে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা মুজিবের বলটি ভেতরে না এসে বেরিয়ে খুঁজে নেয় নাজমুলের অফ স্টাম্প। কীভাবে বলটা বেরিয়ে গেল, নাজমুল বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। দুই বছর ওয়ানডে খেলতে নামা ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমের ইনিংসও দীর্ঘ হতে দেননি ফারুকি। অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হয়েছেন নাঈম। এই ঘটনা ইনিংসের নবম ওভারের।

পাওয়ার প্লেতেই যখন ৩ উইকেট নেই, তখন ৩০০ রান তাড়া করা অতিকল্পনা। তখনো আফগানদের বোলিং আক্রমণের সবচেয়ে অভিজ্ঞ রশিদ খান ও মোহাম্মদ নবী বোলিংয়ে আসেননি। যখন এসেছেন, তখন ৩ ওভারের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রশিদের গুগলি না বুঝে বোল্ড তাওহিদ হৃদয় ও আফিফ হোসেন। সাকিব এলবিডব্লু নবীর বলে।

মুশফিকুর রহিমের এরপরের লড়াইটা তো হারের ব্যবধান কমানো ছাড়া আর কিছুই নয়। ম্যাচ শেষে লিটন আঙুল তুললেন ওই শুরুর ধসে, ‘ওপেনার হিসেবে ২০-২৫ ওভার ব্যাটিং করতে পারলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। উইকেট হাতে থাকলে আপনি ৩০০-এর বেশি রান তাড়া করতে পারবেন।’

লিটন আরও একবার ব্যর্থ হয়েছেন

পরে সংবাদ সম্মেলনে অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজও আঙুল তুলেছেন টপ অর্ডারের দিকেই, ‘আমাদের টপ অর্ডার যদি ভালো খেলত, যদি জুটি হতো, তাহলে খেলাটা গভীরে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতো। তখন হয়তো জয়ের আশা জাগত।’

বড় রান তাড়া করার সমীকরণ এটাই। কিন্তু বাংলাদেশ দল টানা দুই ম্যাচে সমীকরণটা মেলাতে পারল না।