ডাচ পেসার পল ফন মিকেরেন
ডাচ পেসার পল ফন মিকেরেন

খাবার ডেলিভারি থেকে ‘কমলা ইতিহাস’ ডেলিভারি

তিনি হাসতে ভালোবাসেন। সে জন্যই ডাকনাম ‘স্মাইলার’ (যিনি হাসতে ভালোবাসেন)। নামটা অবশ্য নেদারল্যান্ডস দলে তাঁর সতীর্থরা দেননি। ডাচ পেসার পল ফন মিকেরেন এই ডাকনামটা পেয়েছেন সমারসেটের হয়ে খেলার সময়। তা নামটা যেখান থেকেই পান না কেন, মিকেরেনের তো হাসতে বাধা নেই।

এমনিতেই হাসিখুশি থাকা মিকেরেন এবার তো হাসতে হাসতে পেট ফাটানোর উপলক্ষও পেয়েছেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোনো টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে জয় পেয়েছে তাঁর দল। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সেই ইতিহাস গড়ার পথে মিকেরেন নিজেও পেয়েছেন ২ উইকেট। এরপর আর হাসি ঠেকানো যায়!

একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, হাসিখুশিময় মানুষের জীবনেই নাকি কষ্ট বেশি। ডাচ এই পেসারের জীবনে আসলেই তেমন কষ্ট আছে কি না, তা তো জানার উপায় নেই। তবে তাঁর গল্পটা কিন্তু আর পাঁচটা সাধারণ ক্রিকেটারের মতো নয়। মাঠের ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জ সামলে মিকেরেনকে সামলাতে হয়েছে বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জও। সেখানেও নিংড়ে দিতে হয়েছে নিজেকে। ব্যর্থ নয়, সফল হয়েছেন সেখানেও।

মাত্র তিন বছর আগেও মিকেরেনের জীবনটা অন্য রকম ছিল। মিকেরেন তখনো হাসতেন তবে সে হাসির পেছনে লুকিয়ে ছিল কষ্টের ছায়া। ৩ বছর আগে করা সেই টুইটের কথাই ভাবুন না! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগের নাম টুইটার) লিখেছিলেন, ‘আজকের দিনটায় ক্রিকেট খেলার কথা ছিল। কিন্তু শীতের সময়টা পার করার জন্য আমি এখন উবারে খাবার ডেলিভারি করছি। কীভাবে সময় পাল্টায়! তবু মুখের হাসিটা ধরে রাখুন।’ মিকেরেনের এই টুইটে হাসি ও কান্নার দুরকম ইমোজিই ছিল। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পিছিয়ে ২০২২ সালে নেওয়া হয়েছিল। বিশ্বকাপে খেলতে না পারার হতাশায় অমন পোস্ট করেছিলেন মিকেরেন।

পরের বছর ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে সময়টা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন মিকেরেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি হল্যান্ডে থাকি না। যে কারণে আমি ডাচ ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তিতে নেই। চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে আপনাকে সেখানে থাকতে হবে। কাউন্টি চুক্তিটাও তখন নেই, তাই ক্রিকেট থেকে আমার কোনো আয় ছিল না। নতুন আয়ের ক্ষেত্র খুঁজছিলাম। চাকরিও করতে চেয়েছি আবার ক্লাব ও দেশ ডাকলে যেন যেতে পারি, সেটাও চেয়েছি। তাই সব মিলিয়ে উবার ও ডেলিভারিতে কাজ করেছি। কারণ, এখানে অ্যাপ খুলেই কাজ শুরু করা যায়। আমি রেস্তোরাঁ বা পানশালায় আটকে থাকতে চাইনি।’

মিকেরেন গতকাল দুই উইকেট নিয়েছেন

কোভিডের সেই কঠিন সময়টাই নাকি মিকেরেনকে আরও ভালো মানুষ ও ক্রিকেটার দুটোই বানিয়েছে। মিকেরেন বলছিলেন, ‘কোভিড আমাকে দেখিয়েছে ক্রিকেটের বাইরেও দুনিয়ায় অনেক কিছু আছে। শীতের সময়টা কাটাতে আমাকে লড়াই করতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দিন শেষ এটা আমাকে ভালো মানুষ ও ক্রিকেটার বানিয়েছে।’

কোভিডের দিনগুলোয় লড়াই শেষে মিকেরেনের আনন্দের উপলক্ষ পেতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। ২০২১ সালেই প্রথম ডাচ ক্রিকেটার হিসেবে সিপিএল খেলেন এই পেসার। প্রথমবার সিপিএল খেলেই জেতেন শিরোপা। সেন্ট কিটসকে শিরোপা জেতানোর পথে বল হাতে নেন ৮ উইকেট। মিকেরেন এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছেন ৩টি। যেখানে ১২ ইনিংসে নিয়েছেন ১৮ উইকেট।

মিকেরেনের ওয়ানডে ক্রিকেটের গল্পটা অবশ্য টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মতো নয়। তিনটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা এই পেসার এবারই প্রথম খেলছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপে। এমনকি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যে রূপকথার জন্ম দিয়েছিল ডাচরা, সেই দলেরও অংশ ছিলেন না। কারণ, ইংল্যান্ডে তখন কাউন্টি মৌসুম চলছিল। পরে বিশ্বকাপের দলে ফেরেন।

প্রথমবার সিপিএল খেলেই শিরোপা জেতেন মিকেরেন

১৬ ওয়ানডেতে ২০ উইকেট নেওয়া মিকেরেনও নজরেও আসেন টি-টোয়েন্টি দিয়েই। ২০১৬ সালে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১১ রানে ৪ উইকেট নেন এই পেসার। সেই বছর পা রাখেন কাউন্টি ক্রিকেটে। ২০১৬ থেকে ২০১৯—এই ৩ বছর খেলেছেন সমারসেটের হয়ে। বর্তমানে তিনি খেলছেন গ্লুচেস্টারশায়ারে। বিশ্বকাপের আগে এই দলের হয়ে বেশ কয়েকটি ওয়ানডে খেলেছেন। সেই অভিজ্ঞতাই হয়তো এখন কাজে লাগছে। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৩ ম্যাচ খেলে ৫ উইকেট নিয়েছেন মিকেরেন।