ভেন্যু ও উইকেট একই। নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে যে মাঠে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটা হয়েছে, আজ তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচও হচ্ছে একই উইকেটে। সেদিনও বাংলাদেশ আগে বোলিং করে কিউইদের ব্যাটিংয়ে ধস নামায়। আজও তা–ই হলো। পার্থক্য একটাই—শেষ ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ দলের পেসারদের আধিপত্য ছিল স্পষ্ট। আজ বাংলাদেশের নতুন বলে পেসারদের আধিপত্যে ভাগ বসিয়েছেন স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান।
এতে ১.৩ ওভারের মধ্যে ১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছিল নিউজিল্যান্ড। টি-টোয়েন্টিতে এর আগে কখনোই এত কম রানে ৩ উইকেট হারায়নি কিউইরা। পাওয়ারপ্লেতেই ২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছে স্বাগতিকেরা। সেখান থেকে নিউজিল্যান্ডের মান রক্ষা করেন জিমি নিশাম। একের পর এক উইকেট পতনের পরও তাঁর ২৯ বলে ৪৮ রানের ইনিংস নিউজিল্যান্ডকে ৯ উইকেটে ১৩৪ রানে পৌঁছাতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের হয়ে ৩ উইকেট শরীফুল ইসলামের। ২টি করে উইকেট শেখ মেহেদী হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমানের।
বাংলাদেশের বোলিং দাপটের শুরুটা হয় মেহেদীর হাত ধরে। নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার টিম সেইফার্ট ও ফিন অ্যালেন—দুজনই গতিময় বোলিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সে জন্যই ইনিংসের প্রথম ওভারেই স্পিনার মেহেদীর হাতে বল তুলে দেন নাজমুল হোসেন। সেটি কাজেও দেয়। ইনিংসের চতুর্থ বলেই তিনি দলকে উইকেট এনে দেন। জায়গা বানিয়ে তাঁকে অফসাইডে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন সেইফার্ট। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে একটু টার্ন করে ভেতরে ঢুকছিল বলটি, একটু নিচুও হয়েছিল। সেইফার্ট (০) তাতে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি।
আরেক ওপেনার অ্যালেনকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শরীফুল। নিজের প্রথম ওভারেই সুইং ও অ্যাঙ্গেল কাজে লাগিয়ে বিভ্রান্তিতে ফেলেন অ্যালেনকে। ফল? দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই শরীফুলের বাড়তি বাউন্স মেশানো বলে স্লিপে ক্যাচ অ্যালানের (১)। সৌম্য সরকার সহজ ক্যাচ লুফে নিলে ৮ বলের মধ্যে ২ ওপেনারকে হারিয়ে বিপদে পড়ে নিউজিল্যান্ড।
শরীফুল সেখানেই থামেননি। পরের বলেই সদ্য ক্রিজে আসা মারকুটে ব্যাটসম্যান গ্লেন ফিলিপসের (০) প্যাড খুঁজে নেন। সুইংয়ে ভেতরে আসা বলে শটই খেলেননি ফিলিপস! শেষ পর্যন্ত এলবিডব্লিউ হয়ে মাঠ ছাড়েন। নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে রান তখন ১, উইকেট ৩। পরপর দুই বলে উইকেট নিয়ে শরীফুল তখন হ্যাটট্রিকের সামনে। সদ্য ক্রিজে আসা মার্ক চ্যাপম্যান শরীফুলের হ্যাটট্রিক বল সামলে নিলেও বেশিক্ষণের জন্য উইকেট পতন থামাতে পারেননি।
ড্যারেল মিচেল ক্রিজে এসেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করেন। বাংলাদেশের পেস, স্পিনে রান করার মতো একমাত্র ব্যাটসম্যান মনে হচ্ছিল তাঁকেই। কিন্তু মিচেলও মারতে গিয়ে উল্টো ভুল লাইনে খেলতে গিয়ে আউট হন। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মেহেদীর ফ্লাইট মেশানো বলে সোজা মারতে গিয়ে বোল্ড হন মিচেল। ২ বাউন্ডারিতে ১৫ বলে ১৪ রান করেন। ২০ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
মেহেদীর দ্বিতীয় ওভার ছিল সেটি। স্পেলের পরের দুই ওভারে কোনো উইকেট না পেলেও এক প্রান্ত থেকে রান থামিয়ে রেখেছেন তিনি। ইনিংসের ৯ম ওভারের মধ্যেই ৪ ওভার শেষ মেহেদীর। এতে মাত্র ১৪ রান নিতে পেরেছে নিউজিল্যান্ড। পরের ওভারে আরেক স্পিনার রিশাদ হোসেন বোলিংয়ে এসেই ব্রেক থ্রু এনে দেন। ১৯ বলে ১৯ রান করে থিতু মার্ক চ্যাপম্যান দ্রুত রানের জন্য তরুণ রিশাদের ওভারটি বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু মারতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে ধরা পড়েন। তখনো ইনিংসের ১০ ওভার শেষ হয়নি, দলের রান মাত্র ৫০, নিউজিল্যান্ডের ৫ ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছেন।
মাঝের ওভারে অবশ্য নিউজিল্যান্ডের মান রক্ষা করেছেন জিমি নিশাম ও মিচেল স্যান্টনার। দুজন মিলে ৩১ বলে ৪১ রান যোগ করলে নিউজিল্যান্ডের রানটা ৯০-এর ঘরে পৌঁছায়। তবে দুই বাঁহাতির জুটিকে বড় হতে দেননি শরীফুল। ১৫তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারে বোলিংয়ে এসে স্যান্টনারকে শর্ট মিড উইকেটে থাকা সৌম্যর তালুবন্দী করান তিনি। আউট হওয়ার আগে ২২ বল খেলে ২৩ রান করেন স্যান্টনার।
ভালো খেলছিলেন নিশাম। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় নিউজিল্যান্ডের রানটাকে নিয়ে যান এক শর ওপারে। কিন্তু ১৭তম ওভারে মোস্তাফিজের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল টসে ড্রাইভ করে কাভার বাউন্ডারিতে আফিফের হাতে ধরা পড়েন নিশাম। ২৯ বল খেলে ৪৮ রান করেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার, স্ট্রাইক রেট ১৬৫। কিউইদের রান তখন ৭ উইকেটে ১১০। উইকেটসংখ্যাটা ৮ হতে পারত পরের ওভারেই। শরীফুলের করা সেই ওভারে টিম সাউদি দুবার ক্যাচ তোলেন। দুবারই সহজ ক্যাচ ধরার সুযোগ হাতছাড়া করেন রিশাদ ও রনি তালুকদার।
পরের ওভারে অবশ্য মোস্তাফিজের বলে মিড উইকেট ক্যাচ তোলেন সাউদি। আফিফ ক্যাচ ধরলে ৮ রানে থামে সাউদির ইনিংস। ইনিংসের শেষ ওভারে প্রথম উইকেটের দেখা পান তানজিম হাসান। বাউন্সারে ইশ সোধিকে আউট করেন তিনি। তবে নিউজিল্যান্ডের রানটাকে ১৩৪–এ নিয়ে যান অ্যাডাম মিলন। তাঁর ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ১২ বলে ১৬ রান।