‘তোমাদের শাহাদাত নামের একজন পেসার ছিল না? লর্ডসে ৫ উইকেট ছিল সম্ভবত।’
কথা বলতে বলতে হঠাৎ এই প্রতিবেদককে প্রশ্নটা করলেন জোনাথন ট্রট। ‘শাহাদাত’ মানে যে শাহাদাত হোসেন, এটা বুঝতে দেরি হলো না।
লর্ডসের যে টেস্টের কথা ট্রট বলছেন, ২০১০ সালের সেই টেস্টটা তাঁর আলাদা করে মনে রাখার একটা কারণও আছে। ট্রটের ক্যারিয়ার–সেরা ২২৬ রানের ইনিংসটি সেই ম্যাচেই। এবং শেষ পর্যন্ত ট্রটের উইকেটটা শাহাদাতই পেয়েছিলেন। ওই ইনিংসে ৯৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে শাহাদাত নাম তুলেছিলেন লর্ডসের অনার্স বোর্ডে।
এখন আফগানিস্তানের কোচ জোনাথন ট্রটের তাই শাহাদাতকে মনে থাকতেই পারে।
তবে সেই শাহাদাত যে হারিয়ে গেছেন অনেক আগেই, সেটা ট্রটের অজানা। মাশরাফি বিন মুর্তজার পর টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট পাওয়া এই পেসার এখন ঘরোয়া ক্রিকেটেও কোনো দলে সুযোগ পান না।
সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলেছেন ২০২১ সালে, টি-টোয়েন্টি সংস্করণের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। সর্বশেষ লিস্ট ‘এ’ ও প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তাঁকে দেখা গেছে ২০১৯ সালের প্রিমিয়ার লিগ ও জাতীয় ক্রিকেট লিগে।
এখন যে অবস্থাই হোক, ১৩ বছর আগে ট্রটের চোখে শাহাদাতই ছিলেন বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের প্রতীক। ৮০ মাইল বেগে শাহাদাতের ছোট ছোট সুইং ইংলিশ কন্ডিশনের জন্য খারাপ ছিল না। তবে তখন নতুন বলে পেসারদের কয়েক ওভারের পর বাকি সময়টা তো স্পিনাররাই হাত ঘোরাতেন! তখন বাংলাদেশ দল মানেই স্পিনের বিরাট এক বিজ্ঞাপন। কন্ডিশন যেমনই থাকুক, স্পিনই একমাত্র ভরসা।
এবার কোচের ভূমিকায় বাংলাদেশে এসে সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলো ট্রটের। বাংলাদেশ ক্রিকেট যে শাহাদাতের সময় পার করে অনেকটা পথ এগিয়েছে, সেটা ট্রট অনুধাবন করলেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের পেসারদের বোলিং দেখে, ‘হ্যাঁ, এখন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বাউন্স, অনেক বেশি গতি আছে পেস আক্রমণে। তাসকিন, ইবাদতরা দারুণ গতিতে বল করছে। ওরা ভালো সিমার।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটে বয়ে যাওয়া এই পেস-বিপ্লবের পেছনে বিপিএলের বড় ভূমিকা দেখছেন সাবেক এই ইংলিশ ক্রিকেটার, ‘আমার মনে হয়, বিপিএলের একটা বড় ভূমিকা আছে এখানে। ওরা এখন অনেক বেশি বিশ্বমানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ওঠাবসা করে।’ এ ক্ষেত্রে ভারতের উদাহরণও টেনেছেন তিনি, ‘ভারতেও আইপিএল আছে। তাই না? এটা মূলত ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের কারণে সম্ভব হয়েছে। পেসাররা টি-টোয়েন্টি হয়ে ওয়ানডে হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে আসছে।’
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ ২৩ বছর কাটিয়ে দিয়েছে। ৫২ টেস্ট খেলা এই ব্যাটসম্যানের ধারণা, বাংলাদেশ দল ধুঁকতে থাকার সময়টা পেছনে ফেলে এসেছে। এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টেস্ট দল হয়ে ওঠার পালা, ‘বাংলাদেশ টেস্ট খেলছে কবে থেকে? ওরা ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ছিল না? হ্যাঁ, আর টেস্টও খেলছে ২০-এর বেশি বছর হয়ে গেল। শ্রীলঙ্কা কবে শুরু করেছে? আশির দশকে। ওরা ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জিতেছে। বুঝতে পারছেন তো আমি কী বলতে চাচ্ছি। টেস্ট ক্রিকেটে ভালো দল হতে সময় লাগে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে হয়তো এখন সে সময়টা এসেছে। এখন তাদের এগিয়ে যাওয়ার পালা।’
হয়তো এই পেস বোলারদের হাত ধরেই সে পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।