ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেছেন পল স্টার্লিং
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেছেন পল স্টার্লিং

১৩ বছর ও পাঁচটি বিশ্বকাপের আক্ষেপ যে ম্যাচ দিয়ে ঘুচল স্টার্লিংয়ের

পল স্টার্লিং ও অ্যান্ড্রু বলবার্নি একসঙ্গে ক্রিকেট খেলছেন ৯ বছর বয়স থেকে। ২০১০ সালে বয়স ২০ হওয়ার আগেই ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল বলবার্নির, টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক অবশ্য ২০১৫ সালে এসে। স্টার্লিংয়ের আন্তর্জাতিক অভিষেক বলবার্নির দুই বছর আগেই, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে। ২০০৯ সালে ওভালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেকের সময় স্টার্লিংয়ের বয়স ১৯।

পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই অভিষেক ম্যাচটি ছিল বিশ্বকাপের সুপার এইটে। এর আগেই সেমিফাইনালের স্বপ্ন শেষ আইরিশদের। ১৫৯ রান তাড়ায় তিনে নেমে শহীদ আফ্রিদির বলে বোল্ড হওয়ার আগে স্টার্লিং করেছিলেন ১৬ বলে ১৭ রান। পাকিস্তান ওই ম্যাচ জয়ে নিশ্চিত করেছিল সেমিফাইনাল, পরে তো চ্যাম্পিয়নই হয়ে যায়। ওভালের ওই ম্যাচটি হয়ে আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে এখন পর্যন্ত আয়ারল্যান্ডের সর্বশেষ।

২০০৯ সালের পর থেকে প্রতিটি বিশ্বকাপেই খেলেছে আয়ারল্যান্ড, প্রতিটি দলেই ছিলেন স্টার্লিং। প্রতিবারই প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছে আয়ারল্যান্ড।

এমনিতে এই সংস্করণে স্টার্লিংকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের দলেই রাখতে হয়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৩ হাজারের ওপর রান করা মাত্র ছয়জন ব্যাটসম্যানের একজন তিনি। তবে বিশ্বকাপ এলেই স্টার্লিং কেমন নিষ্প্রভ হয়ে পড়েন। ক্যারিয়ার-গড় যেখানে ২৮.৮৩, আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের আগপর্যন্ত বিশ্বকাপে তা ১৮.৮৪। স্ট্রাইক রেটটাও ১৩৪.৫৩ থেকে কমে ১১৫.০২।

সাম্প্রতিক ফর্মও ভালো ছিল না। এই ম্যাচের আগের ৬ ইনিংসে মাত্র ৪৮ রান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারা ম্যাচে ২ বল খেলে বোল্ড হয়েছিলেন কোনো রান না করেই, স্কটল্যান্ডের সঙ্গে জিতলেও ধুঁকেছেন রান করতে, ১০ বলে ৮ রানের বেশি করতে পারেননি।

হোবার্টে আজকের ম্যাচটি ছিল কার্যত নকআউট, প্রতিপক্ষ দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গ্যারেথ ডিলানিরা বোলিংয়ে তাঁদের কাজটা দারুণভাবে করলেন, তবে এমন ম্যাচে চাপ তো থাকেই। রান তাড়ায় শুরুটা ছিল তাই দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। সে শুরুটা দারুণ করলেন ওই দুই বন্ধু—বলবার্নি ও স্টার্লিং। এ বছরের শুরুতে ওমানের বিপক্ষে একটি ফিফটি পেয়েছিলেন স্টার্লিং, এরপর ২১ ইনিংসে আর ফিফটির দেখা নেই।

পল স্টার্লিং ও অ্যান্ড্রু বলবার্নি একসঙ্গে ক্রিকেট খেলছেন ৯ বছর বয়স থেকে।

তবে স্টার্লিংয়ের সামর্থ্য নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না অধিনায়ক বলবার্নির, ‘আমার মনে হয় না কখনো পলকে নিয়ে সংশয়ে ভুগেছি আমি। সে দারুণ একজন খেলোয়াড়, মানুষ, এই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। অনেক দিন ধরে সে অমন আছে, আরও অনেক দিন তাই থাকবে।’

রান-খরায় ভুগতে থাকা স্টার্লিং শুধু ভালো শুরু এনে দিলেন না, থাকলেন অপরাজিত। তৃতীয় বলে ওবেদ ম্যাকয়কে চার মেরে শুরু করেছিলেন। পাওয়ারপ্লে, মাঝের ওভার, আয়ারল্যান্ডের যখন বাউন্ডারি দরকার—স্টার্লিং আক্রমণ করে গেছেন। নিজে ২৩ বলে ৩৭ রানের বেশ ভালো একটা ইনিংসই খেলেছেন, তবে বলবার্নি এরপরও স্টার্লিংয়ের প্রশংসাতেই ব্যস্ত, ‘তার ইনিংসটা আজ অসাধারণ ছিল। পাওয়ারপ্লেতে ঝোড়ো শুরু করেছে, ইনিংসের পরের ভাগেও তাই। ‘ক্লাসি’ ইনিংস। সে বড় ম্যাচের বিশাল খেলোয়াড়। রান তাড়ায় কীভাবে এগিয়ে আসতে হয়, আজ সেটির আদর্শ উদাহরণ তৈরি করল সে। এ কাজের জন্য তার চেয়ে উপযুক্ত আর কে আছে!’

ডিলানি, বলবার্নি, লরকান, টাকার, স্টার্লিংরা হোবার্টে বিদায় করে দিলেন দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

ডিলানি, বলবার্নি, লরকান, টাকার, স্টার্লিংরা হোবার্টে বিদায় করে দিলেন দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। আইরিশ ক্রিকেটে এর তাৎপর্য কী, বলবার্নি সেটি ব্যাখ্যা করতে চাইলেন এভাবে, ‘আমরা জানি এটি আমাদের কাছে কী অর্থ বহন করে। আমরা জানতাম, পরের পর্বে যাওয়ার মতো দল আছে আমাদের, গতবার তবুও হতাশায় কেটেছে। আমি অবশ্য নিশ্চিত না, যেমন ক্রিকেট খেলছিলাম, তাতে পরের পর্বে যাওয়াটা নিশ্চিত ছিল (এবার)। তবে এখন দল হিসেবে অনেক ভালো অবস্থানে আমরা।’

এ ইনিংস খেলার পথে বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক হয়ে গেছেন স্টার্লিং, তবে এ ম্যাচে জয়ের তুলনায় সেটির তাৎপর্য নেহাত কমই বলতে হয়। ম্যাচ শেষে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে পুরো দল অভিবাদন জানাচ্ছিল স্টার্লিংকে। তাঁরা জানেন, তাঁদের জন্য স্টার্লিংয়ের এ ইনিংসের মূল্য কতটা। ব্যাটটা নিয়ে সে অভিবাদনের জবাব দিচ্ছিলেন স্টার্লিং।

৩২ বছর বয়সে এসে, মাঝে আরও পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলার পর স্টার্লিং আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে খেলবেন।