বিশ্বকাপ জয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ফেবারিট বলতে হবে ভারতকেই। দুর্দান্ত ক্রিকেট উপহার দিয়ে সেমিফাইনালে ওঠা স্বাগতিকদের নিয়েই বাজির দরটা বেশি। তবে ক্রিকেটের ‘গৌরবময় অনিশ্চয়তার হুমকি’র কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ১৯৮৩ সালের শিরোপাজয়ী দলের সদস্য সৈয়দ কিরমানি।
গ্রুপ পর্বে ৯ ম্যাচের সব কটিতে জিতেই আগামী বুধবার সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ভারত। স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয়দের বড় আশা শিরোপা জয়ের। কিন্তু ‘আত্মতৃপ্তি’তে ভোগার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপজয়ী ভারত দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কিরমানি। সেবারের শিরোপাই ভারতকে আর্থিক দিক দিয়ে খেলার ‘পাওয়ারহাউস’ হয়ে ওঠার পথ করে দিয়েছিল।
৭৩ বছর বয়সী কিরমানি মনে করেন, ১৯৮৩ সালের ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ দুবারের বিশ্বকাপজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদেরকে হালকাভাবে নিয়েছিল, যেটির মাশুল দিতে হয় ক্যারিবীয়দের। এবারের ভারত দলকে কেমন দেখছেন, এমন এক প্রশ্নের জবাবে কিরমানি বলেছেন, ‘দুর্দান্ত। তারা চ্যাম্পিয়নের মতো করেই খেলছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেমন খেলেছিল। কেউই মনে করছে না যে ভারত হারবে। আমি ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। কিন্তু এই মহান খেলার গৌরবময় অনিশ্চয়তার কারণে আপনি আসলে নিশ্চিত হতে পারবেন না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯৮৩ সালে যেভাবে হালকাভাবে নিয়েছিল, সেটি করা যাবে না।’
১৯৮৩ সালে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল ভারত। কিরমানির মতে, সে জয়টাই ভারতের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল। পরে বড় দলগুলোর ‘আত্মতৃপ্তিতে ভোগার সুবিধা আদায়’ করেছিলেন তাঁরা।
‘আন্ডারডগ’ হিসেবে সে বিশ্বকাপে যাওয়া কপিল দেবের দল হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকেও। পরে সেমিফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারায় তারা। লর্ডসের ফাইনালে মাত্র ১৮৩ রান তুলেও ৪৩ রানে জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে ভারত।
‘দুর্ধর্ষ, ধ্বংসাত্মক’
ফাইনালে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিল ভিভ রিচার্ডসের উইকেটটি। মদন লালের বলে পেছন দিকে ছুটে দুর্দান্ত কাচ নিয়েছিলেন কপিল দেব।
সে টুর্নামেন্টের দিকে ঘুরে তাকিয়ে এখনকার বিসিসিআই সভাপতি রজার বিনি এএফপিকে বলেন, ‘আমরা পুরোটা সময় দল হিসেবে ভালো ক্রিকেট খেলেছিলাম।’
বিনির কাছে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সেমিফাইনাল জয়ের আগেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গ্রুপ পর্বে ১১৮ রানের জয়। তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো খেলা শুরু করেছিলাম। সেমিফাইনালের আগে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিলাম। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে সম্ভাব্য হিসেবে ভাবা হচ্ছিল তাদের। এরপর আমাদের খেলা বদলাতে শুরু করল, আমরা ভালো খেলতে শুরু করলাম। সেমিফাইনাল সহজেই জিতেছিলাম।’
১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বিনিরও। মিডিয়াম পেসে ১৮ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন তিনি।
অবশ্য সেমিফাইনালে সহজ জয় পেলেও যাত্রাটা একেবারে মসৃণ ছিল না ভারতের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি তাদের হয়ে পড়েছিল বাঁচা-মরার। ১৭ রানে ৫, ১৪০ রানে ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ভারতকে উদ্ধার করেছিল কপিলের স্মরণীয় ১৭৫ রানের ইনিংস। কপিলের ইনিংসে ভারত ৮ উইকেটে তুলেছিল ২৬৬ রান, এরপর জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে গিয়েছিল ২৩৫ রানে।
কপিলের সে ইনিংস প্রসঙ্গে কিরমানি বলেন, ‘আমি কোনো ক্রিকেটারকে এমন দুর্ধর্ষ, ধ্বংসাত্মক ইনিংস খেলতে দেখিনি।’
কপিলের সে ইনিংসের অনেকটা ননস্ট্রাইক প্রান্ত থেকে দেখেছিলেন কিরমানি, তাঁর সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ১২৬ রানের জুটির অংশ ছিলেন। কিরমানি করেছিলেন ২৪ রান। তাঁর ভাষায়, ‘২২ গজ দূরে থেকে আমি সবচেয়ে স্মরণীয় ও সেরা ইনিংসটি দেখেছিলাম। এর পর থেকে পুরোটাই ইতিহাস।’
ইতিহাস
কপিল ছাড়াও সে বিশ্বকাপে ভারত দলে ছিলেন বিনি, মদন লাল, বালবিন্দার সিং সান্ধু ও মহিন্দর অমরনাথের মতো কয়েকজন অলরাউন্ডার। ফাইনালে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছিলেন অমরনাথ।
২০২৩ সালের সঙ্গে ১৯৮৩ সালের দলটির তুলনা করতে গিয়ে অভিজ্ঞ ক্রীড়া সাংবাদিক আয়াজ মেমন বলেছেন, দুই দলের মধ্যে একটি ব্যাপারে মিল আছে—ভয়ংকর বোলিং আক্রমণ। এএফপিতে তিনি বলেন, ‘একটি ব্যাপারেই সামঞ্জস্য বের করা যায়, বোলাররা যেভাবে পারফর্ম করেছে। ভারতের বোলিং কখনোই বিখ্যাত ছিল না, ১৯৮৩ সালে তো অবশ্যই না।’
মেমন বলেন, ‘ভারতের ফ্ল্যাট উইকেটে ব্যাটসম্যানরা দাপট দেখাবে, সবাই ভেবেছিল এমন। (কিন্তু) বোলাররা এবার দুর্দান্ত করেছে। ব্যাটসম্যানরাও (ভালো) করেছ, কিন্তু বোলাররাও কম যায়নি। আর ক্লিশে কথাটি তো আছেই, “ব্যাটসম্যান আপনাকে ম্যাচ জেতাবে কিন্তু টুর্নামেন্ট জেতাবে বোলাররা”।’