বেশ লম্বা সময় অস্ট্রেলিয়ানদের চোখে ‘খলনায়ক’ ছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। ২০১৩ সালের অ্যাশেজে ক্যাচ আউট হওয়ার পরও ‘ওয়াক’ না করার কারণে ব্রড পেয়েছিলেন এমন খেতাব। অথচ এজবাস্টন টেস্টের পর অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম এখন ওলি রবিনসনকে বলছে ‘এক নম্বর খলনায়ক’। ব্যাপারটি নিয়ে নিজের ‘হতাশা’ও প্রকাশ করেছেন ব্রড। এবার অবশ্য রবিনসনের হয়ে কথাও বললেন তিনি। সতীর্থকে নিয়ে রিকি পন্টিং, ম্যাথু হেইডেনদের করা সমালোচনারও জবাব দিয়েছেন তিনি।
এজবাস্টনে উসমান খাজাকে প্রথম ইনিংসে আউট করার পর দু-চারটি কথা শুনিয়েছিলেন রবিনসন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে এসে সেটির পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের নামও টেনে এনেছিলেন রবিনসন। পন্টিং তো সেটির জবাব দিয়েছেনই, হেইডেনও রবিনসনকে বলেছিলেন ‘বিস্মৃত ক্রিকেটার’।
কেন ব্যাপারটি নিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে, ব্রড বুঝতে পারছেন না সেটিই। ডেইলি মেইলে লেখা এক কলামে ইংলিশ পেসার বলেছেন, ‘মাঠে উসমান খাজা ও ওলি রবিনসনের মধ্যে ওই ঘটনার পর যা হওয়ার কথা ছিল, সত্যি বলতে কি এর চেয়ে অনেক বেশি কথা হয়েছে। দিনশেষে খাজাকে প্রথম ইনিংসে আউট করার পর রবিনসনের দেখানো প্রতিক্রিয়ায় আইসিসির কোনো সমস্যা হয়নি। আর ম্যাথু হেইডেনের তাকে অপমান করে বলা কথাও পছন্দ হয়নি আমার। টেস্টে বেশ কিছুদিন খেলার পর ওলির গড় ২১, অনেকটা গ্লেন ম্যাকগ্রার মতো করেই বোলিং করে সে।’
অবশ্য রিকি পন্টিংয়ের মন্তব্য নিয়ে ব্রড লিখেছেন, ‘রিকি পন্টিংও এতে একটু অংশ নিয়েছে, কারণ রবো তার নামটি টেনে এনেছিল সংবাদ সম্মেলনে। কিন্তু রিকি অনেক স্লেজিং করত, এমন ভেবে কিন্তু সে এটি করেনি। ওলির মাথা একটু ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল, সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হিসেবে রিকি পন্টিংয়ের কথাই তার মাথায় এসেছিল। আর তার (পন্টিংয়ের) দলের ক্রিকেটাররা যে খুব একটা লাজুক ছিল, তা–ও কিন্তু নয়। ফলে এ নিয়ে যে হইচই হচ্ছে, তাতে আমরা বিস্মিতই হয়েছি।’
মাঠে প্রতিপক্ষ হলেও মাঠের বাইরে অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ভালো, ব্রড মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটিও, ‘হ্যাঁ, মাঠে আবেগ ছিল একটু। তবে এর বাইরে প্যাভিলিয়ন করিডরে অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে আমাদের দেখা হচ্ছে, একই রুমে খেয়েছি, ভালো একটি সপ্তাহ উপভোগ করছি। যখনোই বৃষ্টি-বিরতি ছিল, সবাই সবার সঙ্গে কথা বলছিল।’
আরেকটি ব্যাপার—১০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় কি আমাকে নিয়ে বানানো টি-শার্ট বিক্রি হয়নি, যেগুলোতে গালিগালাজ ছিল? এখন একটু উল্টো ঘটেছে বলে সবাই তেড়ে আসছে? হচ্ছেটা কী আসলে?স্টুয়ার্ট ব্রড
অ্যাশেজে স্বাভাবিকভাবেই একটি বড় প্রসঙ্গ স্লেজিং। মাঠের বাইরে কথার লড়াইও জমে ওঠে বেশ। কিন্তু ব্রডের মনে হচ্ছে, এ ঘটনাটি এত বড় হওয়ার কথা নয়, ‘আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে, এটিকেই বড় একটা ঘটনা বানানো হলো। অথচ আমার খেলা নয়টি অ্যাশেজ সিরিজের মধ্যে সবচেয়ে কম কথার প্রথম টেস্ট হয়তো এটিই ছিল।’
অস্ট্রেলিয়ানদের দিক থেকে ‘স্লেজিং’ বা এমন প্রতিক্রিয়া অবশ্য ব্রডের দিকে কম ধেয়ে আসেনি। এবার একজন অস্ট্রেলিয়ানকে একজন ইংলিশ স্লেজিং করেছেন বলেই ব্যাপারটি এমন করে দেখা হচ্ছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন টেস্টে ৫৮৮টি উইকেটের মালিক, ‘আরেকটি ব্যাপার—১০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় কি আমাকে নিয়ে বানানো টি-শার্ট বিক্রি হয়নি, যেগুলোতে গালিগালাজ ছিল? এখন একটু উল্টো ঘটেছে বলে সবাই তেড়ে আসছে? হচ্ছেটা কী আসলে? আমার ধারণা, দ্রুতই এটি মিলিয়ে যাবে। কারণ, দুটি দলের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ফলে এটিকে একটু অপ্রাসঙ্গিকই মনে হচ্ছে।’
এজবাস্টনে ২ উইকেটে হারা ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টে লর্ডসে নামবে ২৮ জুন। প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের খেলার ধরনের সমালোচনার পর দ্বিতীয় টেস্টে কী হতে যাচ্ছে, ব্রড সেটি লিখেছেন এভাবে, ‘বার্মিংহামে অ্যাশেজে ১-০ লিড নেওয়ার খুব কাছে গিয়েছিলাম। তবে লর্ডসে পিছিয়ে থেকেই যাচ্ছি। এ সপ্তাহে আমরা ভিন্ন কী করব? আরও আক্রমণ করব।’
সেটি কীভাবে সম্ভব, ব্রড ব্যাখ্যা করেছেন সেটিও, ‘যেভাবে এ ইংল্যান্ড দল খেলে। এরপর লোকে হয়তো প্রশ্ন করবে এটি সম্ভব কি না। তবে সেখানে আউটফিল্ড দ্রুতগতির। ফলে আমরা আরও বেশি বাউন্ডারি মারব। আশা করি, পিচ আরেকটু ট্রু হবে, যাতে আমরা বলের লাইনে গিয়ে খেলতে পারি। আর বোলিংয়ের সময় স্লিপ ফিল্ডারদের সঙ্গে ন্যায্য কিছু করতে পারি।’