ঢাকা পর্বে প্রতিদিনই প্রথম ম্যাচের চেয়ে পরেরটিতে প্রথম ইনিংসে স্কোর বড় হয়েছিল। চট্টগ্রাম পর্বে দিনের প্রথম ম্যাচই দেখেছে ২০০ রানের স্কোর, তবে পরেরটিতে হলো উল্টো। রবিউল হকের ৪ উইকেটের সঙ্গে রংপুর রাইডার্স বোলারদের তোপে খুলনা টাইগার্স আটকে গিয়েছিল ১৩০ রানেই। সেটি তাড়া করতে রংপুরের লেগেছে ১৯.৩ ওভার। শোয়েব মালিক খেলেছেন ৩৬ বলে ৪৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস।
এ নিয়ে প্রথম তিন ম্যাচে জয়শূন্যই থাকল খুলনা, তিন ম্যাচে দ্বিতীয় জয় পেল রংপুর।
রাতে চট্টগ্রামের ঘাসযুক্ত উইকেট হয়ে এসেছে মন্থর, বল নিচুও হয়েছে বেশ। ব্যাটসম্যানেরা বেশ অসুবিধাতেই পড়েছেন তাতে। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনার ইনিংসকে বিভক্ত করা যায় তিন ভাগে—শুরুতে ধস, মাঝে পুনর্গঠনের চেষ্টা, শেষে আবার খেই হারানো।
বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান ও আফগান পেসার আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের কাছে শুরুতেই ধসে পড়ে খুলনার টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার পড়েছে পেসার রবিউল হকের তোপে। আর শেষটা হয়েছে হাসান মাহমুদের বোলিংয়ে। রবিউলের ৪ উইকেটের সঙ্গে রকিবুল, ওমরজাই ও হাসান নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ওমরজাইকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম। ধসের শুরু সেটি দিয়েই। খুলনা পাওয়ারপ্লেতেই হারায় ৩ উইকেট, ওঠে মাত্র ২৪ রান। আড়াআড়ি শট খেলতে গিয়ে ওমরজাইয়ের বলে বোল্ড হন হাবিবুর রহমান, রকিবুলের বলে বোল্ড সার্জিল খান।
ইয়াসির আলী ও আজম খান সে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন, চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুজন ৪২ বলে তোলেন ৫৮ রান। সে জুটিতে মোটামুটি ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়ায় খুলনা। তবে রবিউল হককে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন ২২ বলে ২৫ রান করা অধিনায়ক ইয়াসির, খুলনা ইনিংসে আবার নামে ধস।
১৫ রানের মধ্যে সে সময় পড়ে ৪ উইকেট—ফেরেন সাব্বির রহমান, আজম খান ও এমাদ বাটও। ইয়াসিরের পর সাব্বির ও এমাদের উইকেট নেন রবিউল, আজম স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন রকিবুলের বলে।
৯১ রানে ৭ উইকেট হারানো খুলনা ১৩০ রান পর্যন্ত যায় মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ১৮ বলে ২২ ও নাহিদুল ইসলামের ৮ বলে ১৫ রানের ইনিংসে। ৭ রানের মধ্যে শেষ ৩ উইকেট হারানো খুলনা থামে ২ বল বাকি থাকতেই।
পাওয়ারপ্লেতে খুলনার মতো ৩ উইকেট হারায় রংপুরও, তবে ওঠে ৪০ রান। রনি তালুকদারের সঙ্গে তরুণ পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান সাইম আইয়ুবকে ওপেন করতে পাঠায় রংপুর। রনি অবশ্য সাইফউদ্দিনের করা দ্বিতীয় ওভারেই বোল্ড হন নিচু হওয়া বলে। পরের দুটি উইকেট ওয়াহাব রিয়াজের। তাঁর লেগ সাইডের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান, নিচু হওয়া বলে বোল্ড হন আইয়ুব।
শোয়েব মালিক ও চারে আসা মোহাম্মদ নাঈম সে ধসের চাপ সামাল দেন, কিন্তু রানের গতি কমে আসে বেশ। নাসুম আহমেদকে টেনে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে নাঈম ফিরলে ভাঙে ২৭ রানের সে জুটি। ৬ উইকেট বাকি রেখে রংপুরের তখন প্রয়োজন ৬০ বলে ৭৩ রান। অধিনায়ক নুরুলের সঙ্গে শোয়েবের জুটিতে ওঠে ৩২ রান, যদিও নুরুল মূলত সঙ্গই দিচ্ছিলেন। তাঁর ১৮ বলে ১০ রানের ইনিংস শেষ হয় নাসুমকে স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে। ৯০ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় রংপুর।
১৮ বলে রংপুরের প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান, এমাদের ওভারের শেষ তিন বলে শামীম হোসেনের মারা তিন চারে সে সমীকরণ নেমে আসে ১২ বলে ২১ রানে। পরের ওভারের প্রথম বলে সাইফউদ্দিনকে চার মারেন শোয়েব, পরের বলে লং অফ দিয়ে টেনে মারেন ছক্কা।
সে ওভারের পঞ্চম বলে লো ফুলটসে ডিপ স্কয়ার লেগে শোয়েব ক্যাচ দিলে নাটক জমে ওঠে আবার। তবে রিয়াজের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে ম্যাচ টাই করেন ওমরজাই, পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে এনে দেন জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
খুলনা টাইগার্স: ১৯.৪ ওভারে ১৩০ (আজম ৩৪, ইয়াসির ২৫, সাইফউদ্দিন ২২; রবিউল ৪/২২, রকিবুল ২/২২, হাসান ২/২২, ওমরজাই ২/৪১)
রংপুর রাইডার্স: ১৯.৩ ওভারে ১৩১/৬ (শোয়েব ৪৪, নাঈম ২১, শামীম ১৬*; নাসুম ২/২১, রিয়াজ ২/২৪, সাইফউদ্দিন ২/৩৫)
ফল: রংপুর ৪ উইকেটে জয়ী