২৭ বছর পূর্ণ করবেন আগামী ফেব্রুয়ারিতে। তবে এর আগেই অবসরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন উইল পুকোভস্কি। ‘কনকাশন’ বা মাথায় আঘাতজনিত জটিলতায় ভুগে আলোচিত অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নাইন।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন মাস আগেই একটি স্বতন্ত্র মেডিকেল বিশেষজ্ঞ প্যানেল পুকোভস্কিকে অবসরের পরামর্শ দেয়। এখন রাজ্য দল ক্রিকেট ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, এরপরই আসবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। তবে ২৬ বছর বয়সী পুকোভস্কির পেশাদার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের এখানেই শেষ।
পুকোভস্কির সতীর্থরা যখন প্রাক্-মৌসুম অনুশীলনে ব্যস্ত, তখন পুকোভস্কি ছিলেন দেশের বাইরে। চ্যানেল নাইনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুকোভস্কির এমন অবসরের খবরে তাঁর সতীর্থরা বিস্মিত হননি। কাছাকাছি যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কাছে একরকম ভবিতব্যই ছিল যেন এটি। তবে ক্রিকেটে এ ঘটনা স্মরণীয় হয়েই থাকার কথা।
২০১৯ সালে সিডনিতে ভারতের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্টটি খেলেছিলেন পুকোভস্কি। অভিষেকেই প্রথম ইনিংসে ফিফটি পেয়েছিলেন, পরের ইনিংসে করেছিলেন ১০ রান। তবে সে টেস্টে কাঁধে চোট পান, শেষ পর্যন্ত যাতে অস্ত্রোপচার লাগে। পুকোভস্কি ছিটকে যান ছয় মাসের জন্য।
কিন্তু পুকোভস্কির ক্যারিয়ারে ওই কাঁধের চোট আসলে তেমন কোনো সমস্যাই নয়। তাঁকে যে ভুগতে হয়েছে একের পর এক কনকাশনে। যে সমস্যা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক থেকে টেকনিক্যাল—সব রকম আলোচনাই হয়েছে।
জুনিয়র পর্যায় থেকে এখন পর্যন্ত কতবার কনকাশন হয়েছে, তা নিয়ে একটু বিতর্ক আছে। তবে ক্রিকইনফোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংখ্যাটা ১৩-এর কম নয়। সর্বশেষ গত মার্চে শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে রাইলি মেরিডিথের বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেয়ে ছিটকে যান পুকোভস্কি। পেশাদার ক্যারিয়ারে তাঁর এটিই শেষ ম্যাচ হয়ে থাকছে।
সর্বশেষ ওই কনকাশনের পর পুকোভস্কি বাধ্য হন এবারের ইংলিশ গ্রীষ্মে লেস্টারশায়ারের হয়ে চুক্তি থেকে সরে আসতে। প্রাথমিকভাবে ক্রিকেট ভিক্টোরিয়া তাদের চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল পুকোভস্কিকে, তবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পরামর্শে সেটি স্থগিত রাখা হয়। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, ক্রিকেট ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধি ও স্বতন্ত্র মেডিকেল বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এরপর পর্যালোচনা করে পুকোভস্কির পরিস্থিতি।
সে কমিটির পরামর্শেই এবার অবসরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন পুকোভস্কি। যাঁকে একসময় ভাবা হতো অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ হিসেবে। ৩৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৭টি সেঞ্চুরিসহ ২ হাজারের বেশি রান করা পুকোভস্কি অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী ওপেনার হতে যাচ্ছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবা হচ্ছিল এমন। তবে বাদ সাধে মূলত ওই কনকাশনের সমস্যা।
সেটি একসময় প্রভাব ফেলে পুকোভস্কির মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও। এ বছরই এক পডকাস্টে তিনি বলেছিলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারটি এমনকি কনকাশনের চেয়েও বড় ব্যাপার আমার কাছে। দীর্ঘ মেয়াদে শারীরিক দিক দিয়ে কোনো কিছুর ভয় পাই না আমি, তবে মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারটিই বেশি কঠিন।’
একজন খেলোয়াড়, বিশেষ করে ব্যাটসম্যানের বারবার এমন কনকাশনে পড়া স্বাভাবিকভাবেই তাঁর টেকনিক নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেয়। এ বছরই এক কলামে সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল যেমন লিখেছিলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় সে এগিয়েছে, সেটি আসলে বাজে টেকনিককেই তুলে ধরে।’
তবে সে টেকনিক মূলত শর্ট বলের ক্ষেত্রেই। তা বাদ দিলে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে পুকোভস্কি হতে পারতেন বড় নাম। এরই মধ্যে টেস্ট থেকে অবসরে চলে যাওয়া ডেভিড ওয়ার্নারের জায়গা পূরণে অস্ট্রেলিয়া ওপেনিংয়ে তুলে এনেছে স্টিভেন স্মিথের মতো খেলোয়াড়কে। আরেক ওপেনার উসমান খাজাও আছেন ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে।
চ্যাপেল যেমন বলেছিলেন, ‘পরিস্থিতি যথেষ্ট ঘোলাটে। তবে শিল্ড (শেফিল্ড শিল্ড) প্রতিযোগিতায় মেধাবী ওপেনারের সংকট আছে। সুস্থ পুকোভস্কি হতে পারে আদর্শ একজন। অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যৎ সাফল্যে পুকোভস্কির উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক হতে পারে। তবে এখন মূল ব্যাপারটি হচ্ছে পুকোভস্কি যাতে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা।’
তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, সেই সুস্থ পুকোভস্কিকে ক্রিকেটে আর দেখা যাবে না।