এ রকম ম্যাচের আগে প্রশ্নটা খুব স্বাভাবিকভাবে আসে—আজই কি সিরিজ জয়? নাকি আরেকটু অপেক্ষা!
প্রশ্নটা বাংলাদেশ প্রান্তে দাঁড়িয়ে করা। প্রথম ম্যাচটা জেতায় আজ সিরিজ জয়ের চিন্তা বাংলাদেশের ভাবনায় আসতেই পারে। যেখানে শ্রীলঙ্কার জন্য এই ম্যাচ সিরিজে ফেরার লড়াই। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ যে করেই হোক জিততে হবে কুশল মেন্ডিসের দলকে। তারপর ১৮ মার্চের শেষ ওয়ানডেটাকে ‘ফাইনাল’ বানিয়ে সিরিজ জয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া।
তবে সেই লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশই শুধু তাদের প্রতিপক্ষ নয়। গত দুই দিনে কিছু অপ্রত্যাশিত আচরণ করা চট্টগ্রামের আবহাওয়াও প্রভাব ফেলতে পারে তাদের চিন্তায়। বলা নেই, কওয়া নেই কাল বিকেলে হঠাৎ করেই বৃষ্টি চট্টগ্রামে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে মাঠ অতটা ভেজেনি, তবে বাংলাদেশ দলকে তাদের ঐচ্ছিক অনুশীলন কিছুটা সংক্ষিপ্ত করে ফেলতে হয়েছে। আবহাওয়া নিয়ে চিন্তায়ও এই বৃষ্টি তারতম্য ঘটিয়ে দিতে যথেষ্ট। বিশেষ করে ক্রিকেট সিরিজের মধ্যে এবং একটা ম্যাচের আগের দিন আবহাওয়ার অপ্রত্যাশিত আচরণ ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পনায় কিছুটা প্রভাব তো ফেলতেই পারে।
চট্টগ্রামের আবহাওয়া নিয়ে শ্রীলঙ্কা দলের দ্বিধাদ্বন্দ্ব অবশ্য পরশুর প্রথম ওয়ানডে থেকেই। সেদিনও অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই কুয়াশা আর শিশির প্রভাব ফেলেছে ম্যাচে। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে এসে এ নিয়ে একটু বিস্ময়ই প্রকাশ করলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যান জানিথ লিয়ানাগে। একপর্যায়ে বলেও ফেললেন, ‘ম্যাচে শিশির পড়লে বল গ্রিপ করতেই কষ্ট হয়। ওই সময় বোলিং করাটা কঠিন মনে হচ্ছিল।’
খেলা শেষে একই বিস্ময় প্রকাশ পেয়েছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কিউরেটর জাহিদ রেজার কথায়ও, ‘জানেন, গতকালও (মঙ্গলবার) এ রকম ছিল না। আজ (পরশু) হঠাৎ আবহাওয়া এ রকম হয়ে গেল, কেন বুঝলাম না!’
অবশ্য স্মৃতিটা আরেকটু ঘেঁটে তিনি জানালেন, ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর আগের ম্যাচেও চট্টগ্রামের আবহাওয়ায় এ রকম অস্বাভাবিকতা দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু এবারের শীতের আবহাওয়ার সঙ্গে পরশুর ব্যাপারটা কিছুতেই মেলাতে পারছেন না অভিজ্ঞ এই কিউরেটর, ‘ম্যাচের মধ্যে চাক চাক কুয়াশা পড়েছে, যাকে বলে ফগ। মাঠের বাইরে বসে অনেক খেলোয়াড়ের পা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল না। এবারের শীতেও এ রকম দেখিনি।’
খেলা শেষে মাঠের বিজ্ঞাপন বোর্ডে হাত রেখে দাঁড়িয়ে যখন কথা বলছিলেন, হাত ভিজে যাচ্ছিল বোর্ডের কিনারায় জমে থাকা শিশিরে। উল্টো দিকের ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে তখনো দৃষ্টি বাধা পাচ্ছিল কুয়াশায়। প্রেসবক্স থেকে তো আরও অস্পষ্ট লাগছিল সবকিছু। মধ্য মার্চে কুয়াশা, অদ্ভুত ব্যাপার তো বটেই। তবে গতকালের ঝিরিঝিরি বৃষ্টির পর কুয়াশা বা শিশিরের ঝামেলা আজ আর হবে না বলেই আশা।
বাংলাদেশ দলের আলোচনায় অবশ্য শিশির বড় কোনো বিষয় হয়ে দাঁড়ায়নি। দারুণ জয়ে সিরিজ শুরু করার আনন্দেই সবাই বুঁদ হয়ে ছিলেন। তবে আজ নতুন একটি ম্যাচ, উদ্দেশ্যও নতুন এবং বড়ও। সিরিজ জয়ের উপলক্ষ হয়ে আসা এই ম্যাচে প্রথম ম্যাচের ভুলত্রুটি শোধরানোয় মনোযোগ থাকবে নিশ্চিত। শুরুর দিকে দুই পেসার শরীফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদের লাইন–লেংথে গড়বড়, বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আনতে গিয়ে একটার পর একটা বাউন্ডারি খাওয়া—বোলারদের কাছে এই জায়গাগুলোতে সংশোধন চাইবেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন।
মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর ও নাজমুলের ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার ২৫৫ রান তাড়া কঠিন হয়নি বাংলাদেশের জন্য। তবে ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে করা শুরুটা কাম্য ছিল না কোনোভাবেই। টপ অর্ডারেও তাই ভুল থেকে শেখা কাজে লাগানোর কিছু থাকবে আজকের ম্যাচে।
সঙ্গে কাল মাঠে এসে বলা ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্পের কথাগুলো কাজে লাগাতে পারলে চট্টগ্রামের ব্যাটিং উইকেটে ব্যাটসম্যানদের খুব বেশি দুশ্চিন্তা করার কিছু থাকবে না। ব্যাটসম্যানদের নিজেদের সামর্থ্যে আস্থা রাখতে দেখতে চান তিনি, যেটা পরশু দেখেছেন মাহমুদউল্লাহ, নাজমুল আর মুশফিকের খেলায়। সামর্থ্যের আত্মবিশ্লষণটা ঠিকঠাকভাবে করে মাঠে সে অনুযায়ী কাজ করতে পারাটাই তাঁর দৃষ্টিতে সাফল্যের মন্ত্র।
তবে ব্যাটিং উইকেট মানে শুধু চার–ছক্কার জন্য অপেক্ষা নয়। এ ধরনের উইকেটে বোলাররাও চেষ্টা করেন বাড়তি কিছু করতে। বোলারের ভাবনাটা না বুঝে ব্যাটসম্যান যখন শুধু উইকেটের ফায়দা লুটতেই মনোযোগী হয়ে পড়েন, তখনই ব্যাট আর প্যাডের মাঝে ফাঁক থেকে যায়, হুক–পুলে বল লাগে ব্যাটের কানায়। হেম্প তাই পরিষ্কার করেই বলে দিয়েছেন, ‘আমাদের রান অবশ্যই চাই, কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে রান করার সেরা উপায়টা খুঁজে নিতে হবে। সেটা যতক্ষণ করতে পারব, ততক্ষণই আমরা সামনে এগিয়ে যাব।’
ব্যাটিং উইকেটেও ম্যাচ জেতাতে হয় বোলারদের। তবে তাদের কাঁচামাল সরবরাহ করার কাজটা আবার ব্যাটসম্যানদের। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট তার জন্য লালগালিচা বিছিয়ে রাখে সব সময়ই।