ওয়ার্নার না আফ্রিদি, কার মতো হবেন ফ্রেজার–ম্যাগার্ক

জেইক ফ্রেজার-ম্যাগার্ক খানিকটা বিপাকেই পড়েছেন। অনেক প্রতিভাবান হলে যা হয়! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হলো দিন চারেক, ম্যাচ খেলেছেন মাত্র দুটি, এরই মধ্যে তাঁর ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে ডেভিড ওয়ার্নার হওয়ার দায়িত্ব। তিন সংস্করণে অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের অন্যতম সেরা ওপেনার ওয়ার্নার, তাঁর জায়গা পূরণ করা এত সহজ নাকি!

তবে এই আলোচনার মধ্যে ফ্রেজার-ম্যাগার্কের জন্য ইতিবাচক দিকও আছে। মানে ফ্রেজার-ম্যাগার্কের মধ্যে এমন কিছু আছে, যা দিয়ে তিনি ওয়ার্নারের জায়গা পূরণ করতে পারবেন। আর তিনি ‘দায়িত্ব নেওয়ার বিপাকে’ পড়েছেন ‘সুবিধা’ নিয়েছেন বলেই। হুট করেই অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে আবির্ভাব সবার হয় না। এর আগে এমনটা হয়েছিল শুধু ওয়ার্নারের ক্ষেত্রেই।

অস্ট্রেলিয়ার ২১ বছর বয়সী এই ওপেনার আলোচনায় এসেছেন রেকর্ড ভেঙে। সেটা আরেক কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্সের। গত অক্টোবরে ডি ভিলিয়ার্সের রেকর্ড ভেঙে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্রুততম শতক করেন ফ্রেজার-ম্যাগার্ক। তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেন মাত্র ২৯ বলে। এর আগে ডি ভিলিয়ার্স সেঞ্চুরি করেছিলেন ৩১ বলে। ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৪ বলে ১৪৯ রানের ইনিংস খেলার পথে এই কীর্তি গড়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স।

মার্শ কাপে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ফ্রেজার-ম্যাগার্কের ইনিংসটি ছিল ৩৮ বলে ১২৫ রানের। এই ৩৮ বলের মধ্যে ২৩টিতেই বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি। ছক্কা মেরেছেন ১৩টি, চার ১০টি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ফ্রেজার-ম্যাগার্ক আউট হয়েছিলেন ইনিংসের ১২তম ওভারে। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম শতকেই এমন কিছু করা তো চাট্টিখানি কথা নয়!

এমন ইনিংসগুলোর একটা বাড়তি সুবিধা আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সংবাদমাধ্যম—সবখানেই আলোচনাটা হয় বেশি। বলা যায়, ভাইরাল কনটেন্টে পরিণত হয়। মানুষের নজরে আসা যায় খুব দ্রুত। ফ্রেজার-ম্যাগার্কও এসেছেন। তা না হলে কি আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এক্সে ফ্রেজার-ম্যাগার্ককে দেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান তরুণ বলে ঘোষণাই দিয়ে দেন। এক্সে গত ডিসেম্বরে ম্যাক্সওয়েল লিখেছিলেন, ‘এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ায় ফ্রেজার-ম্যাগার্কের মতো চোখজুড়ানো ব্যাটিং আর কার আছে! দেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান তরুণ ব্যাটসম্যান। অসীম প্রতিভাধর।’

‘বিগ শো’খ্যাত ম্যাক্সওয়েল বলেছেন এ কথা, যিনি নিজেই ক্রিকেটে অসম্ভবকে সম্ভব করেন। বুঝতেই পারছেন!

এখন পর্যন্ত লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে খেলা ১৯ ম্যাচে ফ্রেজার-ম্যাগার্কের শতক ওই একটিই। গড় ৩৪.৬০, স্ট্রাইকরেট ১৪৫। অবশ্য তাঁর তুলনা হয় ওয়ার্নারের সঙ্গে। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স তাই বোধ হয় এতটা বিবেচনায় না নিলেও চলবে।

ওয়ার্নার তো হুট করে টি-টোয়েন্টি–বিশেষজ্ঞ হয়ে জাতীয় দলে এসেছিলেন। অভিষেকের আগে প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাচও খেলেননি। এরপর টি-টোয়েন্টির পারফরম্যান্স দিয়ে জায়গা করে নেন অন্য দুই সংস্করণে। সেই ওয়ার্নার টেস্টে হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (৮৭৮৬)। ওয়ানডেতে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ (৬৯৩২)। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ টি-টোয়েন্টি–বিশেষজ্ঞ ওয়ার্নার (১৮৬১২)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছে ম্যাগার্কের

যাহোক, আলোচিত সেই শতক ফ্রেজার-ম্যাগার্ককে নিয়ে আসে জাতীয় দলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে অভিষেক হয় তাঁর। অভিষেক ম্যাচের প্রথম দুই বল ডট। পরের বলে চার, পরেরটিতে ছক্কার পরই আউট। ৫ বলে ১০। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে করেছেন ১৮ বলে ৪১। এই ইনিংসের পথে ম্যাথু ফোর্ডের করা এক ওভারে মিড উইকেট, লং অনের ওপর দিয়ে যে তিনটি তিনি ছক্কা মেরেছেন, তাতে শুরুর দিকেই ওয়ার্নারকেই মনে পড়েছে অনেকের।

বর্তমানে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তাঁর স্ট্রাইকরেট ২২১। ভয় পাওয়ার কারণ নেই! যতই আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার হোক না কেন, এমনটা বজায় রাখা হয়তো সম্ভব নয়।
এমনিতেই সমর্থকেরা ফ্রেজার-ম্যাগার্কের মধ্যে ওয়ার্নারকে খোঁজেন। আর সেই কথা বিশেষজ্ঞদের আলোচনার টেবিলে এনেছেন ধারাভাষ্যকার ও’কিফি। ফক্স ক্রিকেট ব্রডকাস্টে ১৮ বলে ৪১ রান করে ফেরার পর তিনি বলছিলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এমসিজিতে ওয়ার্নারের অভিষেকের সময় যে অনুভূতি হয়েছিল, সেই একই অনুভূতি। ফ্রেজার-ম্যাগার্ক বক্স অফিস, সেটা নিশ্চিত।’

ধরে নেওয়া যাক, সংক্ষিপ্ত দুই সংস্করণে ফ্রেজার-ম্যাগার্ক সফল হবেন। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে? ফ্রেজার-ম্যাগার্কের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট রেকর্ডও ভালো নয়। ২৪ ইনিংসে গড় মাত্র ২২.৩৯। শতক ১টি, অর্ধশতক ১টি। আর সবাই তো ওয়ার্নার হবেন না।

ফ্রেজার-ম্যাগার্কও পারবেন কি না, সেটা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। তবে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং মনে করছেন, ওয়ার্নারের মতোই সামর্থ্য আছে তাঁর।

ফ্রেজার-ম্যাগার্ক কি ওয়ার্নারের মতো সফল হতে পারবেন

লেগ স্পিন করতে পারায় ফ্রেজার-ম্যাগার্কের সঙ্গে শহীদ আফ্রিদিরও মিল দেখছেন পন্টিং, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই আছে (টেস্টে সফল হওয়ার সামর্থ্য)। কারণটা ওর প্রতিভা। অন্য ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখেছি, যেমন শহীদ আফ্রিদি, তিনি অনেক প্রতিভাবান বল স্ট্রাইকার ও লেগ স্পিনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন। আমার মনে হয়, ও এমন কেউ যে প্রতিভার কারণে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সিস্টেম থেকে দ্রুত উঠে আসতে পারে। এটা আমাকে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে ডেভিড ওয়ার্নারের পরিচয় পর্বের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। যখন প্রথমবার ওয়ার্নারকে দেখি, সবাই সন্দেহ করেছিল, ওর টেকনিক টেস্ট খেলার জন্য যথেষ্ট কি না। তবে ওর যে প্রতিভা ছিল, জেইকেরও (ফ্রেজার-ম্যাগার্ক) তেমন প্রতিভা আছে।’

ফ্রেজার-ম্যাগার্কও তিন সংস্করণেই খেলতে চান। টেস্ট ক্রিকেটে সফল হতেই তিনি সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছেন। কয়েক দিন আগে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ওয়েবসাইটে তিনি বলেছেন, ‘সাউথ অস্ট্রেলিয়ান কোচ জেসন গিলেস্পিকে বলেছিলাম, কোনো এক সময় আমি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিন সংস্করণ খেলতে চাই। এটাই আমার লক্ষ্য। তা নিয়ে আমি কাজ করছি। এ কারণেই সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় গেছি। নতুনভাবে শুরু করতে চেয়েছি। এত দ্রুত একটা সংস্করণে অভিষেক হবে ভাবিনি, দুর্দান্ত।’