৭২*, ৮৯* ও ৫০।
স্কোর তিনটি বিরাট কোহলির। কোন তিনটি ম্যাচে তা বলার আগে ভারতের সমর্থকদের কাছে একটা প্রশ্ন রাখা যাক। অ্যাডিলেড ওভালে আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে বিরাট কোহলির ইনিংসটি তো দেখেছেন? বেশ সন্তুষ্ট লাগছে না!
রান-খরায় থাকা এই কোহলিকে কত কথাই না শুনতে হয়েছে। এশিয়া কাপ দিয়ে রানে ফিরলেন, তারপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে সেই ফেরাটা কী দারুণভাবেই না রাঙালেন! আর কোহলির মাপের ব্যাটসম্যানদের আস্তিন থেকে যে জিনিসটি সব সময়ই বের হয়ে আসে—বড় ম্যাচে পারফর্ম করা, সেটাও দেখা যাচ্ছে।
সুপার টুয়েলভে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ইনিংসটাই তার প্রমাণ। এরপর নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিফটি ছিল স্রেফ রানের অভ্যাসটা ধরে রাখার প্রয়াস। আর আজ সেমিফাইনালেও চওড়া হয়ে উঠল কোহলির ব্যাট। ১ ছক্কা ও ৪ চারে ৪০ বলে তাঁর ৫০ রানের এই ইনিংসটি আরও একটি বিষয়কে প্রমাণ করল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের মঞ্চ পেলেই জ্বলে ওঠে কোহলির ব্যাট।
বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের সেই ম্যাচটি মনে করুন। আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ১৭২ রান তোলা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভারত সহজেই ৬ উইকেটে হারিয়েছিল তাঁর ৪৪ বলে ৭২ রানের ইনিংসের কল্যাণে। দুই বছর পর ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও হেসেছে কোহলির ব্যাট। তবে ৪৭ বলে তাঁর অপরাজিত ৮৯ রানের ইনিংসটি বিফলে যায় ভারত ম্যাচটি হেরে যাওয়ায়।
আজকের সেমিফাইনালে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন ছিল। দ্বিতীয় ওভারে লোকেশ রাহুল আউট হওয়ার পর উইকেটে আসেন কোহলি। সেমিফাইনাল বলে সেট হতে সময় নেননি। তৃতীয় বলেই ক্রিস ওকসকে কাভারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা মেরে কোহলি যেন সেট হয়ে গেলেন!
১৮তম ওভারে আউট হওয়ার আগে হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে তাঁর ৪০ বলে ৬১ রানের জুটিটি ভারতের ইনিংসের ভিত। এই ইনিংস খেলার পথে ব্যক্তিগত ৪২ রানে থাকতে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৪ হাজার রানের মাইলফলকের দেখা পান কোহলি।
আজকের ইনিংসে যে চারটি চার মেরেছেন, তার মধ্যে দ্বিতীয়টি মেরে ছেলেদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ১০০ চার মারার ক্লাবেও নাম লেখান এই তারকা। ছেলেদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অন্তত ১০০ চার মারতে পেরেছেন মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যান। দুই সাবেক মাহেলা জয়াবর্ধনে (১১১) ও তিলকরত্নে দিলশানের (১০১) পর বর্তমান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু কোহলিই আছেন এই তালিকায়।
তবে এর চেয়েও বড় বিষয় হলো, বড় ম্যাচে কোহলির আরও ‘বড়’ হয়ে ওঠার অভ্যাস। শুধু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়েই এই কথার সত্যতা প্রমাণ করা যায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোহলি যতগুলো নকআউট ম্যাচ খেলেছেন, তার সব কটিতেই ফিফটি পেয়েছেন।
২০১৪ সংস্করণে সেমিফাইনালে পর ফাইনালে খেলেছেন ৭৭ রানের ইনিংস। ২০১৬ সালে সেমিফাইনালের পর এবার সেমিফাইনালেও পেলেন ফিফটির দেখা।