নির্বাচক–ক্যারিয়ারের কি দিগন্ত দেখতে পাচ্ছেন মিনহাজুল আবেদীন? হয়তো, হয়তো নয়। বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী সভার সম্ভাব্য সময় আগামী সপ্তাহ। সে সভাতেই ঠিক হতে পারে মিনহাজুলের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটির ভবিষ্যৎ। অবশ্য এমনও শোনা যাচ্ছে, গত ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়া এই নির্বাচক কমিটির মেয়াদ বাড়তে পারে আরও ছয় মাস।
এই যে ট্রল করা হচ্ছে, মিথ্যা কথা বলে মানুষকে খুব বাজেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সবই তো মিথ্যা!মিনহাজুল আবেদীন
সেটা হোক বা না হোক, ২০১৩ সাল থেকে বিসিবির নির্বাচক কমিটিতে থাকা এবং ২০১৫ সাল থেকে নয় বছরের বেশি সময় ধরে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করা মিনহাজুলের মনে একটা বড় কষ্ট থেকে যাবে। আজ দুপুরে মিরপুরের বিসিবি কার্যালয়ে বসে প্রথম আলোকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে আরও অনেক কিছুর সঙ্গে সেই কষ্টের কথাও বলেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল।
টেস্ট ক্রিকেটে মাঝেমধ্যে সাফল্য দেখা, ওয়ানডেতে জাতীয় দলের ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা, টি–টোয়েন্টিতে যুগ পরিবর্তনের হাওয়া, ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এবং জাতীয় দলের পেস ইউনিটের সমৃদ্ধ হয়ে ওঠা—প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল এসবকেই দেখেন তাঁর সময়ের ইতিবাচক সূচক হিসেবে।
একই সঙ্গে মিনহাজুলের হতাশা আছে ২০২১ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যর্থতা নিয়ে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সেবার বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই হারে বাংলাদেশ। এর আগে ওমানে প্রথম পর্বেও হেরেছে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারে মিনহাজুল বলেছেন, বিসিবির নির্বাচক ও প্রধান নির্বাচক হিসেবে গত ১২ বছরে তাঁর সবচেয়ে খারাপ গেছে ওই সময়টা।
তবে খেলা মানেই হলো, যেকোনো ব্যর্থতার বেদনায় প্রলেপ হয়ে আসবে পরবর্তী কোনো সাফল্য। ২০২১–এর পর বাংলাদেশের ক্রিকেটও কখনো কখনো পার করেছে সে রকম ভালো সময়। কিন্তু যে আঘাত মিনহাজুলের একান্তই ব্যক্তিগত, যেসব প্রশ্ন নির্বাচক মিনহাজুলের পাশাপাশি ক্রিকেটার এবং ব্যক্তি মিনহাজুলকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়, সেগুলো যে কখনোই ভোলার নয়!
সাক্ষাৎকারে মিনহাজুল কথা বলেছেন তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ট্রল নিয়েও। সংবাদমাধ্যমের কিছু খবর, টক শোতে বলা কিছু মানুষের বক্তব্য বেশ ভালোভাবেই দাগ কেটেছে তাঁর মনে। এসব বিষয়ে যে বিসিবিও কখনো তাঁর পক্ষ নিয়ে কথা বলেনি, এ জন্য চাপা ক্ষোভও আছে তাঁর মনে।
মিনহাজুল এ নিয়ে বলেছেন, ‘অবশ্যই বোর্ড থেকে এসব নিয়ে বিবৃতি দেওয়া উচিত ছিল। বোর্ড থেকে তখন কিছু বলেনি, এটাতে আমিও আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম।’ নিজে কেন প্রতিবাদ করেননি, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘আমি যে জায়গায় আছি, সেখান থেকে সবকিছুর উত্তর দেওয়া যায় না। কারণ, আমি নির্বাচক প্যানেলে আছি। এখান থেকে সব খেলোয়াড়কে একনজরে দেখতে হয়। এখান থেকে আমি অনেক কিছুই বলতে পারি না। এটা আমার কাজ নয়।’
আমি তো শহীদের সন্তান। দেশের জন্য আমাদের পরিবারেরও তো আত্মত্যাগ আছে। আমি জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলাম, আমরা দুই ভাই জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেছি।মিনহাজুল আবেদীন
মিনহাজুল বেশ ক্ষোভের সুরেই বলেন, ‘এই যে ট্রল করা হচ্ছে, মিথ্যা কথা বলে মানুষকে খুব বাজেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সবই তো মিথ্যা! আমাদের অনেক “ক্রিকেট বুদ্ধিজীবী” লোকও টক শোতে অনেক কথা বলেছেন। এই বুদ্ধিজীবীদেরও একটা জবাব দেওয়া উচিত ছিল। কেন দেওয়া হয়নি, আমি জানি না।’
কথা প্রসঙ্গে জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক মনে করিয়ে দেন, দেশের জন্য নিজের ও তাঁর পরিবারের আত্মত্যাগের কথাও, ‘আমি তো শহীদের সন্তান। দেশের জন্য আমাদের পরিবারেরও তো আত্মত্যাগ আছে। আমি জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলাম, আমরা দুই ভাই জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেছি। যেসব লোকের বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি কোনো অবদান নেই, দেশের জন্য যারা কিছু করেনি, তারা এ রকম কথাবার্তা বললে সেটা বন্ধ করা উচিত। আপনি একতরফা ওদের কথা শুনবেন, আমাদের কথা শুনবেন না, তা তো হতে পারে না।’
নিজের ফেসবুক একাউন্ট নেই বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেরা নেতিবাচক আলোচনা তাঁকে তেমন স্পর্শ করে না বলে জানিয়েছেন মিনহাজুল। তবে বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব বিষয় নিয়ে আমাকে ট্রল করা হয় বলে শুনেছি, তার অনেক কিছুর সঙ্গে আসলে আমার সম্পর্কই নেই। সেসব আমার কাজের মধ্যেও পড়ে না।’
• মিনহাজুল আবেদীনের পুরো সাক্ষাৎকার পড়ুন আগামীকাল প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণে।