বাবা নেম চাঁদ ভারতের হয়ে কারগিল যুদ্ধে লড়েছেন। ছেলে ধ্রুব জুরেলও এবার দেশের হয়ে লড়লেন। তবে যুদ্ধের ময়দানে নয়, ক্রিকেট মাঠে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রাঁচি টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে একসময় ১৭৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল ভারত। এরপর লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে ভারতকে একাই টেনেছেন জুরেল। মাত্রই দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা জুরেলের ক্যারিয়ারসেরা ৯০ রানের লড়াকু ইনিংসে ভর করেই ৩০০-এর গণ্ডি পেরিয়েছে রোহিত শর্মার দল।
আজ ভারতের ইনিংসের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে জুরেল আউট হয়ে মাঠ ছাড়ার সময় দর্শকেরা দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা অভিনন্দন জানিয়েছেন, এমনকি আম্পায়ার রড টাকারও করতালি দিয়েছেন; সতীর্থরা তো পিঠ চাপড়ে দিয়েছেনই। এই সিরিজে ধারাভাষ্যকারের দায়িত্বে থাকা কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কারও তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।
রাঁচি ভারতের সফলতম অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্মশহর। ২৩ বছর বয়সী জুরেল আবার ধোনির মতোই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। ধোনির শহরে জুরেলকে এমন পারফর্ম করতে দেখে হয়তো ধোনির কথাই মনে পড়েছে গাভাস্কারের। সে কারণে জুরেলের মধ্যে তিনি পরবর্তী ধোনি হওয়ার সব রকম প্রতিভা দেখতে পাচ্ছেন।
ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় জুরেলের প্রশংসা করে গাভাস্কার বলেছেন, ‘ধ্রুব জুরেল খুব ভালো ব্যাটিং করছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। স্টাম্পের পেছনেও সে অসাধারণ। মাঠে ওর উপস্থিত বুদ্ধি দেখে মনে হচ্ছে, ও আগামী দিনের এমএস ধোনি হতে চলেছে। যদিও জানি আরেকজন এমএসডি (ধোনি) কখনোই আসবে না, তবে আমি একটা জিনিস লক্ষ করেছি যে ধোনি ওর ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে খেলতে নেমে যেভাবে সজাগ থাকত, জুরেলও সেটা দেখিয়েছে। ওর মধ্যে সেই প্রতিভা আছে। দারুণ বুদ্ধিমান এক ক্রিকেটার।’
জুরেল আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যাহ্নবিরতির ঘোষণা দেন আম্পায়াররা। বিরতির সময় স্পোর্টস ১৮–কে গাভাস্কার বলেন, ‘সে আজ সেঞ্চুরি মিস করলেও (আউট হওয়ার আগপর্যন্ত) কোনো ভুল করেনি। তবে উপস্থিত বুদ্ধির কারণেই ভবিষ্যতে সে অনেক সেঞ্চুরি করবে।’
আজ তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ভারতের প্রতিনিধি হয়ে জুরেলই সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন। সুনীল গাভাস্কারের মুখে নিজের প্রশংসাবাণী সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘সুনীল গাভাস্কারের মতো একজন কিংবদন্তি আমার সম্পর্কে বলেছেন, এটা শোনা অবশ্যই একটি ভালো অনুভূতি। মানসিকভাবে আমি দুর্দান্ত অবস্থায় ছিলাম, (দলের পক্ষ থেকে) নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি। আমি শুধু খেলে যেতে চেয়েছি। যত বেশি সময় খেলেছি, দলেরও তত ভালো হয়েছে।’
৯০ রান করে টম হার্টলির বলে বোল্ড হন জুরেল। তবে সেঞ্চুরি না পাওয়া নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই তাঁর, ‘সেঞ্চুরি মিস করায় আমার কোনো দুঃখবোধ নেই। আমার স্বপ্ন ছিল দেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলা। এখন আমার স্বপ্ন একটাই—এই সিরিজের ট্রফি নিজ হাতে তোলা। এটা আমার অভিষেক সিরিজ। চাপ অবশ্যই আছে। তবে আমি শুধু দলের প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করেছি। পরিস্থিতি বুঝে খেলেছি।’