অসাধারণ বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করেছেন তাইজুল। উইকেট নেওয়ার পর তাঁর উদ্‌যাপন
অসাধারণ বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করেছেন তাইজুল। উইকেট নেওয়ার পর তাঁর উদ্‌যাপন

ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ভোলানোর চেষ্টা তাইজুলের

স্কোরবোর্ডে মাত্র ১০৬ রান। আরও একবার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর মিরপুর টেস্টে লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশ দল তাকিয়ে ছিল বোলারদের দিকে। নিয়ন্ত্রিত বোলিং দিয়ে একমাত্র পেসার হাসান মাহমুদ ও অভিজ্ঞতা দিয়ে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম সে চেষ্টা করেছেনও। প্রথম দিনই স্পিন–স্বর্গ হয়ে ওঠা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ ৪১ ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ উইকেট তুলে নিয়েছে, যার ৫টিই নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ১৪০ রান নিয়ে দিনটা শেষ করা দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য এরই মধ্যে এগিয়ে ৩৪ রানে, হাতে আরও ৪ উইকেট।

দুঃস্বপ্নের ব্যাটিং পারফরম্যান্সের পর বোলিংয়ের শুরুতেই বাংলাদেশকে উইকেট এনে দেন দারুণ ফর্মে থাকা হাসান, প্রথম ওভারের ষষ্ঠ বলেই ফেরান এইডেন মার্করামকে। ভালো লেংথ থেকে ভেতরে আসা বলটি খুঁজে নেয় প্রোটিয়া অধিনায়কের মিডল স্টাম্প।

২০০
সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁলেন তাইজুল।

হাসানের সঙ্গে নতুন বল ভাগাভাগি করছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সুযোগও সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। তিনে নামা স্টাবসের ফ্লিক শট সোজা শর্ট লেগে থাকা মাহমুদুল হাসানের বুকে আঘাত করে। সহজ ক্যাচটা ধরতে পারেননি মাহমুদুল। স্টাবস তখন ৮ রানে ব্যাট করছিলেন। সেই স্টাবসের ইনিংস পরে থামে ২৩ রানে তাইজুলের বলে। ১২তম ওভারে স্লিপে থাকা সাদমান ইসলামের ক্যাচ হয়ে ফেরেন তিনে নামা এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান।

আসা যাওয়ার মিছিলে নেমেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা

তাইজুলের বলে চারে নামা ডেভিড বেডিংহামের ক্যাচও ছেড়েছেন সেই সাদমান। বেডিংহামের রান তখন ১০। তবে তাঁর ইনিংসটাও বড় হতে দেননি তাইজুল। বড় টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে কাট করতে গিয়ে লিটন দাসের গ্লাভসে ধরা পড়েন বেডিংহাম। আউট হওয়ার আগে তিনি ২৫ বলে করেন ১১ রান।

একপ্রান্ত আগলে রেখে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন ওপেনার টোনি ডি জোর্জি। তিনিও পরে তাইজুলের শিকার। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের অফ স্টাম্পের বাইরের ক্ষত থেকে টার্ন করিয়ে ভেতরে আসা বল খেলতে গিয়ে শর্ট লেগে থাকা মাহমুদুলের ক্যাচ হন জোর্জি। থামে তাঁর ৭২ বলে ৩০ রানের ইনিংস।

১৩
টেস্ট ক্যারিয়ারে এ নিয়ে ১৩ বার ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন তাইজুল। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশিবার ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন শুধু সাকিব আল হাসান (১৯)।

একই ওভারে নতুন ব্যাটসম্যান অভিষিক্ত ম্যাথু ব্রিটজকেও তাইজুলের পরের শিকার। রানের খাতা খোলার আগেই তিনি বোল্ড হন অফ স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারি ছেড়ে দিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটে যেটি ছিল তাইজুলের ২০০তম উইকেট। সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার।

মিরপুর টেস্টে প্রথম দিনে বাংলাদেশের হয়ে তাইজুলই সেরা পারফরমার

মাইলফলক স্পর্শ করার কিছুক্ষণ পর ২০১তম উইকেটটাও পেয়ে যান তাইজুল। উইকেটকিপার লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান বাঁহাতি ৪৯ বলে ২৭ রান করা রায়ান রিকেলটনকে। টেস্ট ক্যারিয়ারে এ নিয়ে ১৩ বার ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন তাইজুল। তাঁর চেয়ে বেশিবার ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন শুধু সাকিব আল হাসান (১৯)।

এর আগে ব্যাট হাতে খুবই বাজে একটা দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ। টসে জিতে বাটিংয়ে নেমে মাত্র ১০৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। মিরপুরে যেটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৭ রানে অলআউট হয়েছিল মুমিনুল হকের বাংলাদেশ।

দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ উইকেট তুলে নেওয়ায় প্রথম দিনটা ভালোই কেটেছে বাংলাদেশের বোলারদের

ওপেনার মাহমুদুল হাসান (৯৭ বলে ৩০ রান) ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যান ২০ রানও করতে পারেননি। সবচেয়ে বড় জুটিটা নবম উইকেটে, তাইজুল ইসলাম ও নাইম হাসান মিলে ৪৬ বলে করেন ২৬ রান।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন কেশন মহারাজ, কাগিসো রাবাদা ও উইয়ান মুল্ডার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪০.১ ওভারে ১০৬ (মাহমুদুল ৩০, তাইজুল ১৬, মিরাজ ১৩, মুশফিক ১১, নাঈম ৮; মুল্ডার ৩/২২, রাবাদা ৩/২৬, মহারাজ ৩/৩৪)।

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৪১ ওভারে ১৪১/৬ (জর্জি ৩০, রিকেলটন ২৭, স্টাবস ২৩, ভেরেইনা ১৮*, মুল্ডার ১৭*; তাইজুল ৫/৪৯, হাসান ১/৩১, মিরাজ ০/৩৩, নাঈম ০/২০)।—প্রথম দিন শেষে।