শেষ ওভারে হৃদয় ছিলেন নন–স্ট্রাইকিং প্রান্তে। সেখানে দাঁড়িয়েই দেখেছেন বাংলাদেশের নাটকীয় জয়, যেটা এর আগে সহজ করে দিয়েছে তাঁর ব্যাটই।
খুব বেশি সময় পাননি তাওহিদ হৃদয়। জয় উদ্যাপন করতে করতে ড্রেসিংরুমে দৌড়ে যান। সেখানে জার্সি পাল্টেই চলে আসেন পুরস্কার বিতরণের মঞ্চে। ম্যাচসেরার পুরস্কারটা হাতে নিয়েই আবার চলে আসতে হয় সংবাদ সম্মেলনকক্ষে। সব মিলিয়ে মিনিট পাঁচেকের ঘটনা। কীভাবে কী হয়ে গেল, তা যেন বুঝেই উঠতে পারছিলেন না তরুণ এই ব্যাটসম্যান।
হারতে বসা ম্যাচটাকে তিনি টেনে নিয়ে যান জয়ের দুয়ারে, সেখান থেকে শেষ ওভারে করিম জানাতের হ্যাটট্রিকের পরও জিতেছে বাংলাদেশ। হৃদয় অবশ্য এই পুরো নাটকীয়তাই দেখেছেন উইকেটের আরেক প্রান্তে দাঁড়িয়ে।
তবে তাঁর বিশ্বাস ছিল, ম্যাচ বাংলাদেশই জিতবে। সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রথম প্রশ্নের উত্তরেই হৃদয় বললেন, ‘সবার ওপরই আমার আস্থা ছিল। তাসকিন ভাই, নাসুম ভাই, শরীফুল—সবাই খুব ভালো ব্যাটিং করে। তাসকিন ভাই ইংল্যান্ডের সঙ্গেও এমন এক ম্যাচে দুটি চার মেরে জিতিয়েছেন। শরীফুলের ওপর বিশ্বাস ছিল। কারণ, ওর সঙ্গে আমি অনূর্ধ্ব-১৯ থেকেই খেলে আসছি। ওকে একটা কথাই বলেছিলাম, যদি বল ব্যাটে বল নাও লাগে, তুই দৌড়াবি। ম্যাচটা তুই–ই জেতাবি।’
হৃদয়ের সাহসী হওয়ার আরও একটা কারণ ছিল, ‘আমি স্বাভাবিকই ছিলাম। কারণ, রান দরকার ছিল মাত্র দুটি। বল ব্যাটে লাগলে এমনিতেই এক-দুই রান হয়ে যাবে। সব সময় শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি। আমার সঙ্গী যাঁরা ছিলেন, তাঁদের যতটা পেরেছি, তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। কোন বোলার কী করতে পারে, সেটা জানিয়েছি।’
শামীম হোসেনের ইনিংসের কথাও না বললেই নয়। তাঁর ২৫ বলে ৩৩ রানের ইনিংসের সৌজন্যে ৭৩ রানের বড় একটা জুটি পেয়েছে বাংলাদেশ। হৃদয়, শামীম দুজনই বয়সভিত্তিক দল থেকে একই সঙ্গে খেলছেন, কাল সে রসায়ন দেখা গেল জাতীয় দলের জার্সিতেও, ‘আমি শামীমকে একটা কথাই বলেছিলাম। আমি, তুই দুজনই ব্যাটসম্যান। আমরা এমন অনেক ম্যাচ জিতিয়েছি ঘরোয়া ক্রিকেটে। যেহেতু আমরা মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করি, আমরা যদি দুই-এক ওভারে ছন্দটা আমাদের দিকে আনতে পারি, তাহলে ম্যাচ বদলে যাবে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। দুটি ওভারেই ছন্দ পাল্টে গেছে।’
যে দুই-এক ওভারের কথা হৃদয় বলছিলেন, সেটি এসেছে দুই আফগান পেসার আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও ফজল হক ফারুকির হাত থেকে। মাঝখানে আফগান স্পিনারদের বিপক্ষে খুব হিসেবি ব্যাটিং করেছে শামীম-হৃদয় জুটি। অবশ্য সংবাদ সম্মেলনেও পেসের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক হওয়ার কৌশলটা খোলাসা করলেন না হৃদয়, ‘আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল। ওরা বিশ্বের সেরা স্পিন দল। আমরা চেষ্টা করেছি হিসাব করে ঝুঁকি নিতে। যেভাবে পরিকল্পনা করেছি, সেভাবেই হয়েছে। আমরা ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেছি। নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা ছিল না। যে অবস্থায় যা দরকার তা–ই করেছি।’
আর তাতেই ধরা দিয়েছে আফগানদের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করা জয়। শুধু রেকর্ডের জন্য নয়, যেভাবে জিতেছেন সে জন্যও হৃদয়ের কাছে এই জয় বিশেষ কিছু, ‘শুধু আফগানিস্তানের জন্য নয়, যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই এমন ম্যাচ জিততে পারলে দল আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। এ রকম ম্যাচ খুব কমই হয়। আমি যেহেতু শেষ পর্যন্ত ছিলাম, যেহেতু শেষ করে আসতে পেরেছি, খুব ভালো লাগছে। এমন সুযোগ সব সময় আসে না। সুযোগ কাজে লাগানোটা যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই বড় ব্যাপার। সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে।’
অবশ্য আলোটা একা কেড়ে না নিয়ে তা পুরো দলের মধ্যেই ছড়িয়ে দিয়েছেন হৃদয়। আফগানদের রানটাকে দেড় শর আশপাশে রাখার কৃতিত্বটা বোলার আর ফিল্ডারদেরই দিয়েছেন এই তরুণ ব্যাটসম্যান, ‘শুরু থেকে যদি দেখেন, তাসকিন ভাই বা যারা বোলার, প্রত্যেকটা বোলার ভালো শুরু করেছে। সবাই ফিল্ডিংয়েও ভালো করেছে।’
হৃদয়ের মূল কথাটা নিশ্চয়ই ধরতে পারছেন—বাংলাদেশ দলের জয় মানেই যে দলীয় প্রচেষ্টার ফসল। সিলেটে সেটাই কাল দেখা গেল আরেকবার।