বিশ্বকাপ তাঁর দলে থাকা না থাকা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা ছিল। অবশেষে মাহমুদউল্লাহকে নিয়েই ঘোষণা করা হয় বিশ্বকাপ দল। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে না পারলেও মাহমুদউল্লাহ বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি। বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান তাঁর। মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ৪ ম্যাচ, এর মধ্যে ব্যাটিং করেছেন ৩ ইনিংস। ৯৯ গড় ও ১০১.২ স্ট্রাইক রেটে তাঁর রান ১৯৮। এমনকি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পাওয়া একমাত্র শতকটিও এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুর্দান্ত সেই সেঞ্চুরির পর দারুণ প্রশংসিতও হচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ। এর মধ্যে আজ নেদারল্যান্ডস ম্যাচের আগে তাঁকে নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে আইসিসি। যেখানে মাহমুদউল্লাহ তাঁর পারফরম্যান্স এবং ভবিষ্যাৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, যেকোনো মুহূর্তে অবসর ঘোষণা দেওয়ার কথাও। এই ভিডিওতে তাঁকে নিয়ে কথা বলেছেন সতীর্থ মুশফিকুর রহিম ও টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদও।
মাহমুদউল্লাহ তাঁর ক্যারিয়ারে ৪টি শতক করেছেন, যার সব কটিই আবার আইসিসির প্রতিযোগিতায়। ভিডিওতে নিজের শতক নিয়ে মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘২০০৭ সালে বাংলাদেশের হয়ে আমার অভিষেক হয়েছে। এর পর থেকে অনেক বছর ধরে আমি খেলছি। আমি সৌভাগ্যবান যে আইসিসি ইভেন্টে শতকগুলো করতে পেরেছি।’
এরপর মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে কথা বলতে দেখা যায় খালেদ মাহমুদকেও। তিনি বলেছেন, ‘সে সব সময় নীরব ঘাতক। তার ৪ ওয়ানডে সেঞ্চুরির সব কটিই আইসিসি ইভেন্টে। ৩টি বিশ্বকাপে এবং ১টি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। এটাই তার সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেয়। সে এখনো অনেক পরিশ্রম করছে এবং এখনো সে অনেক ফিট।’
বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে মাহমুদউল্লাহ নিজের প্রতিক্রিয়া জানান এভাবে, ‘ক্রিকেট এমন একটি খেলা, যেখানে আপনি বিস্মিত হওয়ার মতো অনেক কিছু দেখবেন। আমি অনেক পরিশ্রম করেছি, যেন বিশ্বকাপে আমি দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাই। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে সে সুযোগ দিয়েছেন। আমি যতটা সম্ভব দলের জন্য কিছু করার চেষ্টা করে এসেছি।’
শুধু নিজের খেলাই নয়, দলের তরুণদের পথ দেখানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করতে হয় বলে এ সময় জানান সাবেক এই অধিনায়ক, ‘আমি দলের সিনিয়র একজন খেলোয়াড়। আমি অনেক দিন ধরেই খেলছি। তাই দায়িত্বও চলে আসে। তরুণদের দিকনির্দেশনা দেওয়া, তাদের সঙ্গে কথাও বলা। আমরা চেষ্টা করি বন্ধু-ভাই হিসেবে থাকতে। আমরা চেষ্টা করি তাদের সাহায্য করতে। এটা বের করার চেষ্টা করি যে তাদের জন্য কোনটা ভালো এবং দলের জন্য কী ভালো, সেটাও বের করার চেষ্টা করি।’
এরপর পর্দায় দেখা যায় মুশফিককে। মাহমুদউল্লাহ সম্পর্কে নিজের ভাবনা জানাতে গিয়ে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান বলেছেন, ‘সে একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। আর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ইনিংসটা ধরে রাখার জন্য কিংবা দ্রুত রান তোলার জন্য আমাদের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। আমার মনে হয় এ জন্য সে সঠিক লোক, যে কি না আমাদের জন্য কাজটা করবে। সে তাঁর চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলছে। আমি জানি, সে ভালো কিছু বা বিশেষ কিছু করার চেষ্টা করবে। সে শুরুটাও দারুণ করেছে। শেষ দুই ম্যাচেও সে খুব ভালো করেছে।’
এরপর সাকিব-মুশফিক-তামিমের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘সাকিব-মুশফিকের ২০০৫ সালে অভিষেক হয়েছে। তামিমের অভিষেক হয়েছে ২০০৬-০৭ সালে। আমরা একসঙ্গেই ছিলাম। আমরা একসঙ্গে অনেক আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করেছি। আমরা জানি এই অনুভূতি কেমন।’
আর শেষ এসে মাহমুদউল্লাহ কথা বলেছেন নিজের অবসর নিয়ে। যেকোনো মুহূর্তে শেষের ঘোষণা দেবেন উল্লেখ করে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘সত্যি কথা হচ্ছে, আমি আমার শেষ বিশ্বকাপ খেলছি। আমি কত দিন খেলব, সেটা আমার শরীর এবং পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করছে। তবে যেকোনো মুহূর্তে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাবে। যেসব প্রতিভা আমাদের ড্রেসিংরুমে আছে; যেমন মোস্তাফিজ, তাসকিন, (নাজমুল হোসেন) শান্ত, লিটন এবং মিরাজরাই এরপর সিনিয়র হবে। সম্ভবত তারাই দলকে এগিয়ে নেবে। একদিন তারাই বাংলাদেশের কিংবদন্তি হবে।’