খালেদ মাহমুদের অনেক পরিচয়ের একটি হচ্ছে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক। বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যানও। কিন্তু তিনি নাকি প্রধান নির্বাচক হিসেবে গাজী আশরাফ হোসেনের নিয়োগের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না! তিনি প্রধান নির্বাচক হিসেবে হাবিবুল বাশারকেই প্রত্যাশা করেছিলেন।
আজ এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে মাহমুদের বিপিএল দল দুর্দান্ত ঢাকার অনুশীলনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। প্রধান নির্বাচক হিসেবে গাজী আশরাফ হোসেনকে বেছে নেওয়াকে তিনি কীভাবে দেখছেন, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘লিপু ভাইয়ের (গাজী আশরাফ) ক্রিকেট মেধা... অনেক সিনিয়র, অনেক দিন ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট ফলো করছেন। জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ছিলেন। ওনার বিচক্ষণতা নিয়ে কোনো প্রশ্নই থাকতে পারে না। অবশ্যই আমি মনে করি, উনি আসাতে অনেক ভালো হতেই পারে।’
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক প্রধান নির্বাচক হওয়ায় মাহমুদ একটু অবাকও হয়েছেন, ‘তবে আমি ওনার নামই শুনিনি আগে যে নির্বাচক হতে পারেন। খুবই সারপ্রাইজিং একটা ঘোষণা এসেছে বিসিবি থেকে। আমি সেখানে ছিলাম না, তাই আসলে বলতে পারব না।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি একই কথা আরও একবার বললেন, ‘আমি তো সেটা ক্লিয়ার করলাম, আমি জানি না কিছু। অবশ্যই (শকিং)... আমি ক্রিকেট অপারেশনসের ভাইস চেয়ারম্যান, আমি জানিই না যে নির্বাচক নিচ্ছে যে কে হচ্ছে। খুবই বিস্ময়কর যে আমি জানব না। আমার আসলে এই প্রতিষ্ঠানে থেকে প্রয়োজনটা কী সেটাও জানি না।’
তবে গাজী আশরাফ হোসেনের ক্রিকেট মেধা থেকে অন্য দুই নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক ও হান্নান সরকার উপকৃত হবেন বলে মনে করেন মাহমুদ, ‘লিপু ভাই যথেষ্ট বুদ্ধিমান একজন মানুষ। আমরা যখন ওনার সঙ্গে খেলেছি, উনি তরুণদের সেভাবেই সমর্থন দিয়েছেন। আমি মনে করি, সেভাবেই উনি গুছিয়ে নেবেন। রাজ্জাক-হান্নানের জন্যও ভালো। ওনার মতো একজন সিনিয়র মানুষের থেকে শিখতে পারবেন।’
যদিও তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে কেমন কতটা ভালো জানেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মাহমুদ। তাঁর যুক্তি, ‘ক্রিকেট যিনি খেলেছেন, তার ক্রিকেট জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক না। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব করেছেন। এত বছর ধরে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। মাঝে ওনার হয়তো একটা বিরতি আছে। টিভিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখে তো আমরা অনেকে কথা বলতেই পারি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে কী হচ্ছে, প্রিমিয়ার লিগ বা বয়সভিত্তিক ক্রিকেটগুলা বা অন্যান্য জায়গায় কী হচ্ছে... তবে আমার মনে হয় না, ওনার জন্য খুব একটা কঠিন হবে। হয়তো একটু সময় লাগবে। মানিয়ে নিতে সময় লাগবে না। তবে ওনার ক্রিকেট মেধা, বিচক্ষণতা, বোধ নিয়ে কোনো প্রশ্নই থাকতে পারে না।’
এরপর আগের কথাটাই আরও একবার বললেন মাহমুদ, ‘তবে হ্যাঁ একটু সারপ্রাইজিং। আমার জন্য একটু সারপ্রাইজিং ছিল। আমি এই নামটাই শুনিনি। বাতাসে অনেক নাম ভাসছিল, গুঞ্জন ছিল। সত্যি কথা বলতে, আমি ক্রিকেট অপারেশনসের সহসভাপতি কিন্তু এই ব্যাপারে জানিই না আসলে। এ জন্য সারপ্রাইজিং।’
মাহমুদ এটাও বলেছেন, মিনহাজুল আবেদীন না থাকলে প্রধান নির্বাচকের পদে তিনি হাবিবুল বাশারকেই প্রত্যাশা করেছিলেন। তাঁর কথা, ‘আমি আশা করেছিলাম সুমনই (হাবিবুল বাশার) হবে। কেন হয়েছে, যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা সিদ্ধান্তের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তাঁরাই বলতে পারবেন। আমি অবশ্যই মনে করি সুমন যোগ্য ছিল। সে বাংলাদেশের সফল ক্যাপ্টেন ছিল, সফল ক্রিকেটার ছিল। এত বছর দলের সঙ্গে কাজ করেছে। আমি আশা করেছিলাম নান্নু ভাইকে না রাখা হলে ও-ই প্রধান নির্বাচক হবে। যে সিদ্ধান্ত বোর্ড দিয়েছে, আমাদের সম্মান জানাতে হবে।’
মিনহাজুল ও বাশারের কাজের প্রশংসাও করেছেন মাহমুদ, ‘নান্নু ভাই, সুমন সততার সঙ্গে কাজ করেছেন। শুধু তাঁদের দোষ দিয়েও লাভ হবে না।’ তবে নির্বাচক হিসেবে হান্নান সরকারের অন্তর্ভুক্তিকে ইতিবাচকই মনে করেন মাহমুদ। দীর্ঘদিন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নির্বাচকের ভূমিকায় কাজ করা হান্নান জাতীয় দলে ভালো করবেন, এই বিশ্বাস মাহমুদের। তিন সংস্করণের অধিনায়ক হিসেবে নাজমুল হাসানের পক্ষেই ভোট দিয়েছেন সাবেক এই অধিনায়ক, ‘শান্ত তো তিন ফরম্যাটেই খেলছে। এটা আমার কাছে অবাক করে না। সাকিব যদি না করে, আমি মনে করি শান্ত অন্যতম সেরা পছন্দ। এ নিয়ে সন্দেহ নেই।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথাও বলেছেন, ‘লর্ড শান্ত আজ তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন। কয়দিন আগেই শান্ত লর্ড ছিল। এসব কথা সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই ছড়ায়। আপনাদের দায়িত্বও খুব জরুরি। সমালোচনা থাকবেই। শান্ত ভালো খেলবে না, সমালোচনা হবে। লিপু ভাই ভালো কাজ করবে না, সমালোচনা হবে। কিন্তু লিপু ভাইর ভালো কাজের কথাও বলতে হবে। নান্নু ভাই, সুমনের অধীনে বাংলাদেশ দল অনেক সাফল্য পেয়েছে। তাঁদের অবদান ভুলে গেলে হবে না।’