পাকিস্তানের কাছে হারের হতাশায় মাঠ ছাড়ছে বাংলাদেশ দল
পাকিস্তানের কাছে হারের হতাশায় মাঠ ছাড়ছে বাংলাদেশ দল

মেয়েদের ক্রিকেটেও ছেলেদের অসুখ

নাসরা সানধুর বলটা ভালো জায়গায়ই পড়েছিল। এই পাকিস্তানি বাঁহাতি স্পিনারের ছোট টার্ন মেশানো বলটায় ব্যাট ছোঁয়ানোর চেষ্টা করেন বাংলাদেশ দলের রিতু মনি। কিন্তু বলের সঙ্গে ব্যাটের সংযোগ হলো না। টার্ন তো ছিলই, বাউন্সেও পরাস্ত হন রিতু মনি, নিচু বাউন্স। কতটা নিচু? একদম মাটি ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই নিচু। এতটাই যে পাকিস্তানের উইকেটকিপার মুনেবা আলী বলটা ধরেছেন এক ড্রপ খেয়ে আসার পর।

নারী এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ম্যাচের প্রথম ইনিংসের ১৭তম ওভারের ওই বলটাতে কোনো রান হয়নি। রিতু মনিও আউট হননি। ম্যাচের ফলাফলেও এই বলের সরাসরি কোনো প্রভাব ছিল না। কিন্তু সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উইকেটের এমন আচরণ বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্য একটা গল্পের কথা মনে করিয়ে দেয়।

উইকেটে নিচু হয়ে এসেছে বল। খেলতে সমস্যা হয়েছে ব্যাটারদের

সেই গল্পটা বলতে গেলে যেতে হবে ছেলেদের ক্রিকেটে। বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল মন্থর আর নিচু বাউন্সের উইকেটে খেলে গত বছর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল। বাংলাদেশ তখন সেটিকে জয়ের অভ্যাস গড়ার কৌশল হিসেবে চালিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু জয়ের জন্য টি-টোয়েন্টিপরিপন্থী উইকেটে খেলার অভ্যাসটা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংকে কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছে।

মেয়েদের ক্রিকেটেও আজকাল সে অসুখের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এই যেমন একাদশ সাজানো হবে এক দল স্পিনারে। অবিশ্বাস্য রকমের মন্থর উইকেটে প্রতিপক্ষকে অল্প রানে বেধে ফেলতে হবে। অথবা আগে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে মোটামুটি রান তুলে সেটিকে ডিফেন্ড করতে হবে। ছেলেদের ক্রিকেটের এই ফর্মুলায় খেলছে বাংলাদেশের মেয়েরাও। এতে সাফল্যও আসছে। কিন্তু এই সাফল্য সাময়িক। এতে বরং ক্ষতিই হচ্ছে দলের টি-টোয়েন্টি দক্ষতার। যেমনটা হয়েছে ছেলেদের ক্রিকেটে।

বাংলাদেশের আরও একটি উইকেটের পতন। পাকিস্তানের মেয়েদের উদ্‌যাপন

বাংলাদেশ-পাকিস্তান আজকের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় সিদরা আমিন তো সেটি সরাসরিই বলে গেলেন। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে উইকেটের প্রসঙ্গ উঠতেই এই পাকিস্তানি ওপেনার বললেন, ‘আমার মনে হয়, টি-টোয়েন্টির জন্য এটা আদর্শ উইকেট নয়। কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে যেকোনো কন্ডিশনে মানিয়ে নিয়ে খেলতে হবে।’

সিদরা আরও যোগ করেন, ‘আমার মনে হয়, ১০০ বা ৮০, এমনকি ৭০ রানও হয়তো জয়ের জন্য যথেষ্ট। কারণ, খুব টার্ন হচ্ছিল। যে বোলার ঝুলিয়ে বল করছিল, টার্ন পাচ্ছিল, নিচু হচ্ছিল। এখানে ইম্প্রোভাইজেশন করা কঠিন। খুব বেশি শট খেলা কঠিন।’

উইকেটে বল নিচু হয়ে আসায় এভাবেই খেলতে হয় ব্যাটারদের। ব্যাটিংটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের

এ ধরনের উইকেটে ব্যাটিং-বোলিংয়ের দক্ষতা নয়, টস হয়ে ওঠে জয়-পরাজয়ের নির্ধারক। সিদরা নিজেই বলছিলেন, ‘আমার মনে হয়, টস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, উইকেট খুবই স্লো, নিচু ও টার্নিং। বোলাররা ভালো বল করেছে, কৃতিত্ব তাদের দিতে হবে। তারা খুব কম পুঁজি পেয়েছে।’

উইকেটের এমন চরিত্রের কারণে দলগুলো এবারের নারী এশিয়া কাপে একাদশ সাজাচ্ছে এক দল স্পিনারদের নিয়ে। পেস বোলিং কী জিনিস, সেটা যেন ভুলেই বসেছে দলগুলো। ২০ ওভারের ইনিংসে ১৪ বা ১৫ ওভার থাকে স্পিনের জন্য বরাদ্দ। আজ পাকিস্তান দলের পেসার ডায়ানা বেগ বাংলাদেশ টপ অর্ডারের দুটি উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট–শিকারিদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। ডায়ানা ছাড়া সেরা পাঁচে বাকি চারজনই তো স্পিনার!