ভারতের আরও একটি উইকেটের পতন। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দলের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস
ভারতের আরও একটি উইকেটের পতন। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দলের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস

ভারতকে হারিয়ে যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ

মঞ্চটা গড়ে দিয়েছিলেন মারুফ মৃধা। ৪ উইকেট নিয়ে ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটিংয়ে ধস নামান এই বাঁহাতি পেসার। তাঁর দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৮৮ রানে থেমেছে ভারতের ইনিংস।

দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমি মাঠে সে রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ৩ উইকেট হারিয়ে হোঁচট খায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। সে ধাক্কা থেকে বাংলাদেশের যুবারা ঘুরে দাঁড়ান আরিফুল ইসলাম ও আহরার আমিনের ১৩৮ রানের দারুণ জুটির সৌজন্যে। শেষ পর্যন্ত ৪৩ বল হাতে রেখে ভারতকে ৪ উইকেটে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করলেন বাংলাদেশের যুবারা। আগামী পরশু ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরাত। আজ সেমিফাইনালে তারা পাকিস্তানকে হারিয়েছে ১১ রানে।

মাঝারি লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা একদম ভালো হয়নি। উল্টো ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ভারতীয়দের ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। মারকুটে ওপেনার জিশান আলম (০) ইনিংসের প্রথম ওভারেই বোল্ড হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান রাজ লিমবানির বোলিংয়ে। ১৩ রান করা চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান ষষ্ঠ ওভারে উইকেট দিয়েছেন নামান তিওয়ারিকে। বড় ক্ষতিটা হয় পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ওপেনার আশিকুর রহমানের বিদায়ে। আগের ম্যাচে শতক করা আশিকুর আজ ২২ বল খেলে ৭ রান করে রানআউট হয়েছেন।

বাংলাদেশের রান তখন ৯.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৩৪। এই বিপদ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে একটা জুটির দরকার ছিল বাংলাদেশের। আরিফুল ইসলাম ও আহরার আমিনের লড়াকু ব্যাটিং সে দাবি মেটায়। আমিন ধরে খেলেছেন। আর আরিফুল বাজে বলের প্রাপ্য মিটিয়ে করেছেন দারুণ ব্যাটিং। দুজনের যুগলবন্দীতে বিপদ কাটিয়ে দাপট দেখানো শুরু করে বাংলাদেশ। শুরুতে সময় নিলেও আরিফুল থিতু হওয়ার পর চার-ছক্কায় দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন।

আরিফুল শতকের খুব কাছে গিয়েও ফিরেছেন তিন অঙ্ক না ছুঁয়ে। ছক্কা মেরে তিন অঙ্ক স্পর্শ করতে গিয়ে ৯৪ রানে আউট হন আরিফুল। ৯০ বল খেলে ৯টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০৪ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি সাজিয়েছেন। আরিফুল যখন আউট হন, জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৭ রান। সেই রান তুলতে আরও ২টি উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। শিহাব জেমসের (৭ বলে ৯ রান) পর আউট হয়েছেন আহরার (১০১ বলে ৪৪ রান)। অধিনায়ক মাহফুজুর (৩ *) ও শেখ পারভেজ (২ *) অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন।

ব্যাটসম্যানদের কাজটা সহজ করেছেন মূলত মারুফ মৃধা। নতুন বলে নিয়মিত উইকেট নিচ্ছিলেন এই তরুণ বাঁহাতি। জাপানের বিপক্ষে ১ আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২টির পর আজ ভারতের বিপক্ষে নিয়েছেন ৩ উইকেট। সেটাও ইনিংসের সপ্তম ওভারের মধ্যে। ভারতের রান তখন ৩ উইকেটে ১৩। বাংলাদেশের টসে জিতে বোলিং নেওয়ার সিদ্ধান্তটা তখন ‘মাস্টারস্ট্রোক’ মনে হচ্ছিল।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৩৮ রান তুলেছেন আরিফুল ও আহরার

যুক্তিও আছে। মৃধার মূল শক্তি সুইং। দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমি মাঠে সকালের কন্ডিশন নিশ্চয়ই তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যা কাজে লাগিয়ে ভারতের দুই ওপেনার আদর্শ সিং (২), আরশিন কুলকার্নি (১) ও চারে নামা অধিনায়ক উদয় সাহারানকে আউট করেন।

দ্রুত উইকেট পতনের ধাক্কাটা প্রিয়ানশু মোলিয়া ও শচীন দাসের জুটিতে কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠে ভারত। কিন্তু ১২তম ওভারে রোহানাত উদ্দৌলার বলে ১৬ রান করে বোল্ড হন শচীন। রোহানাতের একই স্পেলে আউট হয়েছেন ১৯ রান করা প্রিয়ানশুও। একই ওভারে সদ্য ক্রিজে আসা অভিনাশকে রানআউট করেন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান। বাংলাদেশের দুই পেসারের বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে ৬১ রান ৬ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন ধুঁকছিল।

৪ উইকেট নিয়েছেন মৃধা

সেখান থেকে ভারত দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় মুশের খান ও মুরুগান অভিষেকের সৌজন্যে। দুজনই ফিফটি করে ভারতের রান সম্মানজনক একটা জায়গায় নিয়ে যান। ইনিংসের ৩৪তম ওভারে ৬১ বলে ৫০ রান করা মুশেরের ইনিংস থামান অধিনায়ক মাহফুজুর নিজেই। ভয়ংকর হয়ে ওঠা অভিষেকের উইকেট নিয়েছেন মারুফ। আউট হওয়ার আগে ৭৪ বল খেলে ৬২ রান করেছেন তিনি। এরপর ভারতের ইনিংস বেশি দূর এগোয়নি। ৪২.৪ ওভারে ১৮৮ রানে অলআউট হয় ভারত।