ঘন ঘন অধিনায়ক বদলানো যেন অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। ওয়ানডে ও টেস্টে অধিনায়ক বদলানোর মাত্রাটা তবু কম; কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে এটা।
একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার বোঝা যাবে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির প্রথম ১০ বছরে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাত্র চারজন। তবে পরের ৭ বছরেই তার দ্বিগুণ—আটজন। সেই সংখ্যাটা আজ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে নয়ে।
আজ সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটি খেলতে নামছে ভারত। এ সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দেবেন সূর্যকুমার যাদব। সন্ধ্যায় টস করতে নামলেই সর্বশেষ ২ বছরে তিনি হবেন ভারতের নবম টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক!
দেশটা যখন ভারত, তখন নতুন অধিনায়ককে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই সবার আগ্রহ থাকার কথা। বিশেষ করে অধিনায়কের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সংবাদকর্মীতে ভরপুর থাকে।
কিন্তু কাল বিশাখাপট্টনমে সূর্যকুমারের সংবাদ সম্মেলনে এলেন কিনা মাত্র দুজন সাংবাদিক! অথচ বিশ্বকাপে প্রথম পর্বে ভারতের ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ১০০ জনের বেশির সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে সংখ্যাটা ২০০ ছাড়িয়েছিল। তাহলে হঠাৎ সাংবাদিকের সংখ্যা ২০০ থেকে কমে মাত্র ২ জন হলো কেন?
অনেকে ভাবতে পারেন, বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতীয়দের হৃদয় ভাঙার ক্ষত এখনো সারেনি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তেমন নয়। মূলত বিশ্বকাপ শেষ হতে না হতেই দুই ফাইনালিস্টের আরেকটি সিরিজ শুরু হতে যাওয়া নিয়ে ক্লান্ত সাংবাদিকেরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার চার দিন পরেই ভারত-অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি সিরিজ অনেকের কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছে। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন তো রাখঢাক না রেখেই বলে দিয়েছেন, লোভের কারণে এই সিরিজ আয়োজন করা হচ্ছে।
কিন্তু বিসিসিআই কিংবা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) কিছু করার নেই। আইসিসির বাধ্যবাধকতা থাকায় করোনাকালের এই সিরিজ এখন খেলতে হচ্ছে। বিশ্বকাপ দলে থাকা বেশির ভাগ খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিয়ে তাই দুই বোর্ডও দ্বিতীয় সারির দল মাঠে নামাতে যাচ্ছে।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের অস্ট্রেলিয়া দলে তো তবু বিশ্বকাপ খেলা ৭ ক্রিকেটার আছেন, ভারতের তা–ও নেই। বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলা সূর্যকুমারকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি ছাড়া বিশ্বকাপ দলে থাকা মাত্র দুজন খেলবেন এই সিরিজে—উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ঈশান কিষান ও পেসার প্রসিধ কৃষ্ণা। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান শ্রেয়াস খেলবে শেষ দুটি ম্যাচ।
প্রায় দুই মাস বিশ্বকাপ কাভার করা সাংবাদিকেরাও খেলোয়াড়দের মতো ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এ কারণে কাল সূর্যকুমারের সংবাদ সম্মেলনে বার্তা সংস্থা পিটিআই ও এএনআইয়ের একজন করে সাংবাদিক ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
নিজেদের দেশে ভারতীয় দলের সংবাদ সম্মেলনে এটাই সবচেয়ে কম সাংবাদিক উপস্থিতির রেকর্ড কি না, এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এত কম সংবাদকর্মী আগে কখনো দেখা যায়নি।
সূর্যকুমারের সংবাদ সম্মেলনে তবু দুজন সাংবাদিক ছিলেন, এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডের কথা শুনতে কেউই যাননি। শেষ পর্যন্ত ওয়েডের সংবাদ সম্মেলন বাতিল হয়ে যায়।
বিশাখাপট্টনমে কাল সংবাদ সম্মেলনে এসেই সূর্যকুমার বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘মাত্র দুজন?’ এরপর ব্যাপারটাকে হেসে উড়িয়ে দেন। অন্য দিনগুলোতে ভারতীয় অধিনায়ককে যেখানে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করার চেষ্টা করা হয়, সেখানে কাল সূর্যকুমারের সংবাদ সম্মেলনে অস্বস্তিদায়ক কোনো প্রশ্ন করা হয়নি।
৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানকে দেখে বরং মনে হয়েছে, তিনি আরও প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত। কিন্তু পিটিআই ও এএনআইয়ের সাংবাদিকদের প্রশ্ন নাকি ফুরিয়ে গিয়েছিল।
ভারতীয় ক্রিকেটের সংবাদ সম্মেলনের ইতিহাসে এ এক বিরল দৃশ্যই বটে!