সিডনির কোনো আবাসিক এলাকায় হাঁটছেন, চোখে পড়বে কারও বাড়ির সামনে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। সিডনির সড়কে গাড়ি চলাচ্ছেন, দেখবেন কোনো গাড়ির বনেটে বিশাল বাংলাদেশের পতাকা। ঘটনা কী? সিডনিতে এই লাল-সবুজের সাজ কেন? কোনো জাতীয় দিবসের প্রস্তুতি কিংবা বাংলাদেশের কোনো অনুষ্ঠান নয়, ক্রিকেট! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ।
বিশ্বকাপের এবারের আসর বসেছে প্রশান্তপাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়ায়। এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ, উৎসব-আবহ বইছে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশিদের মাঝে। দেশটির অন্যান্য শহরে বিশ্বকাপের আমেজ থাকলেও সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির বাস সিডনিতে। ক্রিকেটভক্তদের উন্মাদনাও তাই নজরে পড়ছে এই সিডনিতে বেশি।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ২৪ অক্টোবর। ম্যাচটি হবে দেশটির তাসমেনিয়া রাজ্যের হোবার্টে অবস্থিত বেলেরিভ ওভাল স্টেমিয়ামে। মাঠটি ‘ব্লান্ডস্টোন অ্যারেনা’ নামে বেশি পরিচিত। বাংলাদেশের প্রতিটি ম্যাচ কেন্দ্র করেই বিশাল আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন সিডনির বাংলাদেশিরা।
বেশির ভাগ বাংলাদেশিই মাঠে গিয়ে খেলা দেখার পরিকল্পনা করছেন। এ জন্য টিকিট সংগ্রহ করেছেন দলগতভাবে। আবার অনেকেই টিকিট পাননি। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের মতো ৪৮ হাজার মানুষ ধারণক্ষমতার এই বিশাল স্টেডিয়ামের টিকিট এক নিমেষেই শেষ! হায় হায় রব পড়ে যায় চারদিকে।
টিকিট নেই তো নেই-ই, বিকল্প কী! বড় পর্দা। সেই আয়োজনেও চলছে বেশ তোড়জোড়। মাঠে যাঁরা যেতে পারছেন না, তাঁদের অনেকে কমিউনিটির হলে বিশাল পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করছেন।
সিডনিতে ক্রিকেট উৎসবের আরেকটি অংশে রয়েছে বাংলাদেশের জার্সি ও পতাকা সংগ্রহ। বাংলাদেশে খুব স্বল্প দামে এবং সহজেই জার্সি পাওয়া গেলেও একেবারেই উল্টো দৃশ্য এখানে। সিডনির বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই তাই দেশ থেকে কেউ সিডনি আসার সময় জার্সি নিয়ে আসতে বলছেন।
আত্মীয়, বন্ধু কিংবা স্রেফ বাংলাদেশি, এই পরিচয়ের সূত্রেই অনুরোধ করে আনাচ্ছেন বাংলাদেশের হৃদয়কাড়া সবুজ রঙের জামদানি নকশার জার্সি। বিশ্বকাপের এ মাহেন্দ্রক্ষণে জার্সি খুবই দামি একটি উপহার প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে।
আবার অনেক ডাকযোগে সরাসরি বাংলাদেশ থেকে আনাচ্ছেন জার্সি, না হয় কিনছেন সিডনির বাঙালিপাড়াখ্যাত লাকেম্বার দোকানগুলো থেকে। রাস্তার পাশেও ঢালি সেজেছে বাংলাদেশের জার্সির।
বিশ্বকাপ নিয়ে সিডনির বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। খেলার মাধ্যমে দেশকে অনুভব করা যায় বলে জানালেন সিডনির তরুণ বাংলাদেশি ফাহিম ফয়সাল, ‘তরুণ বয়সী আমরা যাঁরা কাজ কিংবা শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছি, তাঁদের বাংলাদেশ ভ্রমণে যাওয়া হয় না বললেই চলে। এর মধ্যে ক্রিকেটভক্ত হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে সামনাসামনি খেলতে দেখা আমার কাছে বাংলাদেশের একটা মিনি ট্যুর। কারণ, সেদিন আশপাশে যেদিকেই তাকাব শুধু আমার দেশের মানুষদেরই দেখব। খুব আনন্দ লাগছে।’
কর্মব্যস্ত জীবনের মধ্যে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলা যেন শান্তির বলে মন্তব্য করেন আরেক প্রবাসী বাংলাদেশি আমিন শাহীন, ‘বাংলাদেশে শৈশবের স্মৃতির অনেকটা অংশজুড়ে রয়েছে মাঠেঘাটে দৌড়ে বেড়ানো আর ক্রিকেট। ক্রিকেট খেলতেও ভালোবাসি, দেখতে তার চেয়েও বেশি। বাংলাদেশ দলের খেলা দেখব অবশ্যই মাঠে গিয়ে। আশা তো করছি খেলোয়াড়েরা দারুণ একটি ম্যাচ উপহার দেবেন। তবে ফলাফল যা–ই হোক, বাংলাদেশ ভালোবাসি, সমর্থন থাকবে সব সময়।’