পিচ নিয়ে আইসিসির ভূমিকায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রোহিত শর্মা
পিচ নিয়ে আইসিসির ভূমিকায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রোহিত শর্মা

ভারতের পিচ নিয়ে মুখ বন্ধ করতে বললেন রোহিত

ভারতের পিচ নিয়ে অভিযোগ তোলা বন্ধ করলে কেপটাউনের নিউল্যান্ডসের মতো উইকেটে খেলতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ভারত ও ভারতের বাইরের উইকেটের ক্ষেত্রে আইসিসির ‘দ্বিচারিতা’র সমালোচনা করে ম্যাচ রেফারিদের ‘চোখ–কান’ খোলা রাখতে বলেছেন তিনি।

নিউল্যান্ডসে ইতিহাসের সবচেয়ে কম বলের টেস্টের পর সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন রোহিত। কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টটি ৬৪২ বলের (১০৭ ওভার) মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। দেড় দিনের মধ্যে দুই দলের ৩৩ উইকেট পতন হওয়া ম্যাচটিতে ৭ উইকেটে জিতেছে ভারত

নিউল্যান্ডসের উইকেটে প্রথম দিনের প্রথম সেশন থেকেই অসম বাউন্স, সুইং ও সিম মুভমেন্ট দেখা গেছে। যা ব্যাটসম্যানদের জন্য রীতিমতো ‘বধ্যভূমি’তে পরিণত হয়। অতীতে ভারত নিজেদের মাটিতে স্পিনিং উইকেট তৈরি করে বেশ কয়েকবার সমালোচিত হয়েছিল। আড়াই-তিন দিনের মধ্যে খেলা শেষ হওয়া বেশ কয়েকটি টেস্টের পিচকে ‘বাজে’ আখ্যাও দিয়েছে আইসিসি। সে সব ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে আজ ক্ষোভই ঝেড়েছেন ভারত অধিনায়ক, ‘আমরা দেখেছি এই ম্যাচে কী ঘটেছে। পিচ কেমন আচরণ করেছে। সত্যি বলতে কি, যতক্ষণ পর্যন্ত সবাই ভারত নিয়ে মুখ বন্ধ রাখছে, ভারতের পিচ নিয়ে বেশি কথা বলা বন্ধ রাখছে, এ ধরনের উইকেটে (নিউল্যান্ডসের মতো) খেলতে আমার আপত্তি নেই। এখানে আমরা নিজেদেরই চ্যালেঞ্জ জানাতে এসেছি। হ্যাঁ, এটা বিপজ্জনক, এটা চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু অন্যরা যখন ভারতে যায়, তারাও চ্যালেঞ্জ সঙ্গে করেই যায়।’

নিউল্যান্ডস উইকেটের অসম বাউন্স ব্যাটিং করে তুলেছিল

গত ১৯ নভেম্বর বিশ্বকাপ ফাইনালের পর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামকে ‘গড়পড়তার নিচে’ বলে রেটিং দিয়েছিল আইসিসি। মাসখানেকের বেশি সময় এ নিয়ে চুপ থাকলেও আজ প্রসঙ্গটি তুলে ম্যাচ রেফারিদের কাজের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রোহিত, ‘আমরা যেখানেই যাই, নিরপেক্ষতা বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ম্যাচ রেফারিরা। কিছু ম্যাচ রেফারির পিচ রেটিং করার সময় চোখ খোলা রাখার দরকার। আমার এখনো বিশ্বাস হয় না, বিশ্বকাপ ফাইনালের উইকেটকে গড়পড়তার নিচে বলা হয়েছে। একজন ব্যাটসম্যান (ট্রাভিস হেড) শতক করেছিল। এই উইকেট কীভাবে বাজে হয়?’

পিচ রেটিংয়ের ক্ষেত্রে আইসিসি ম্যাচ রেফারিরা যেন দেশ বিবেচনায় না নেন, সেই আহবান জানিয়ে রোহিত বলেন, ‘ম্যাচ রেফারিদের পিচ রেটিং করা উচিত কী দেখেছেন তার ভিত্তিতে, দেশ দেখে নয়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি তাদের চোখ–কান খোলা থাকবে। আন্তরিকভাবেই বলছি, আমি এ ধরনের পিচের পক্ষে। এ ধরনের পিচে খেলে নিজেদের আমরা চ্যালেঞ্জ জানাতে চাই। তবে সব সময় নিরপেক্ষতা চাই।’

ব্যাটিংয়ে হিমশিম খেয়েছেন দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই

বিভিন্ন সময়ে ভারতের পিচকে ‘বাজে’ রেটিং দেওয়াটা যে রোহিতের বেশ অপছন্দ হয়েছে, সেটিও তুলে আনেন অন্য এক প্রশ্নে, ‘ম্যাচ রেফারি কীভাবে পিচ রেটিং প্রস্তুত করেন, আমি সেটা দেখতে চাই। কারণ মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, কেপটাউন, সেঞ্চুরিয়ন, সবই ভিন্ন ভেন্যু। কন্ডিশনও ভিন্ন। আমরা জানি, ভারতে প্রথম দিন থেকে বল স্পিন করে। যেটাকে বলা হয়, ঠিক নয়। কিন্তু বল যদি প্রথম দিন থেকে সিম করে, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। আপনাকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। নয়তো এই পিচগুলোকেও খারাপ বলতে হবে।’

নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নানা ধরনের পিচ দেখার অভিজ্ঞতার দিকে ইঙ্গিত করে রোহিত বলেন, ‘আপনি যদি চান বল শুধু প্রথম থেকে সিম করবে, কিন্তু টার্ন করতে পারবে না, আমার মতে এটা ভুল। আমি যথেষ্ট পরিমাণের ক্রিকেট দেখেছি। দেখেছি এই ম্যাচ রেফারিরা এবং আইসিসি রেটিংয়ের ক্ষেত্রে কী করে। তারা কীভাবে রেটিং দেবে সেটা নিয়ে আমার সমস্যা নেই। কিন্তু যেটাই করেন, সবকিছুতে নিরপেক্ষ থাকুন।’

সিরিজের ট্রফির সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত খেলোয়াড়েরা

দেড় দিনে শেষ হয়ে যাওয়া কেপটাউন টেস্টের আগে জোহানেসবার্গে ইনিংস ও ৩২ রানে হেরেছিল ভারত। রোহিতের দল সিরিজ ১-১ সমতা নিয়ে দেশে ফিরছে। ২০১০-১১ মৌসুমের পর এই প্রথম ভারতের কোনো দল দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ ড্র করে যাচ্ছে। রোহিতের মতে ভারত এখন যে কোনো কন্ডিশনে ভালো করার মতো দলে পরিণত হয়েছে, ‘কন্ডিশন ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন হলেও বোলারদের সঠিক জায়গায় বল করতে হয়েছে। আর ব্যাটিংয়েও প্রথম ইনিংসে এক শ রানের লিড নিতে পেরেছি আমরা। পৃথিবীর এই প্রান্তে খেলাটা সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু চার-পাঁচ বছরে আমরা খুব ভালো দল হয়ে উঠেছি। এখানে এসে এ ধরনের জয় পাওয়াটা আমাদের যেকোনো কন্ডিশনে ভালো করার মতো আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে।’