ডি ভিলিয়ার্সের একাদশে ভারতের আধিপত্য
ডি ভিলিয়ার্সের একাদশে ভারতের আধিপত্য

ডি ভিলিয়ার্সের বিশ্বকাপের সেরা একাদশে জায়গা পেলেন যাঁরা

টানা ১০ ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেছিল ভারত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ বাধাটুকু পেরোতে পারেনি। হৃদয় ভাঙার গল্প দিয়ে ভারতের বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হলেও টুর্নামেন্টজুড়ে যেভাবে দাপট দেখিয়েছে, তাতে সেরা একাদশে ভারতীয়দের আধিক্য অনুমিতই ছিল।

পরশু প্রকাশিত আইসিসির সেরা একাদশে রানার্সআপ ভারতেরই আছেন ছয় ক্রিকেটার, চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার মাত্র দুজন। ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ, কাস নাইডু, শেন ওয়াটসন, আইসিসির ক্রিকেট মহাব্যবস্থাপক ওয়াসিম খান ও ভারতীয় সাংবাদিক সুনীল বৈদ্যর নির্বাচিত সেরা একাদশের অধিনায়ক ভারতের রোহিত শর্মা।

দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্সও বিশ্বকাপের সেরা একাদশ বাছাইয়ে ভারতীয়দের অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাঁর দলের অধিনায়কও রোহিত। সব মিলিয়ে ভারতের পাঁচজন, চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার তিনজন, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একজন করে নিয়ে একাদশ সাজিয়েছেন ডি ভিলিয়ার্স। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এই একাদশ ঘোষণা করেন ‘মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি’।

৩১ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে একাদশ ঘোষণার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানান ডি ভিলিয়ার্স। তাঁদের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বিশ্বকাপের মতো সর্ববৃহৎ আসরে স্নায়ুচাপ সামলে বারবার কীভাবে অস্ট্রেলিয়া ট্রফি জিতে নেয়, ওয়ার্নারকে সেই প্রশ্নও করেন ডি ভিলিয়ার্স। আর আলোচনা শেষে সেরা একাদশ ঘোষণা করেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স

ডি ভিলিয়ার্সের সেরা একাদশে রোহিত ছাড়া বাকি চার ভারতীয় হলেন বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, রবীন্দ্র জাদেজা ও মোহাম্মদ শামি। চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার তিন সদস্য হলেন ওয়ার্নারের উদ্বোধনী সঙ্গী ট্রাভিস হেড, অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। বাকি তিনজন নিউজিল্যান্ডের রাচিন রবীন্দ্র, শ্রীলঙ্কার দিলশান মাদুশঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার জেরাল্ড কোয়েৎজি। তবে ডি ভিলিয়ার্স তাঁর একাদশে স্বীকৃত কোনো উইকেটকিপার রাখেননি।

বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও রোহিতের নেতৃত্ব অনেকের কাছে ‘রোল মডেলের’ মতো মনে হয়েছে। ভারতের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই  উড়ন্ত শুরু এনে দিয়েছেন রোহিত। বিশ্বকাপে ৫৪.২৭ গড়ে, ১২৫.৯৪ স্ট্রাইক রেটে করেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৯৭ রান। এর বেশি ভাগই প্রথম পাওয়ার প্লেতে।

আঙুলে চিড় ধরায় বিশ্বকাপের প্রথমভাগে খেলতে পারেননি ট্রাভিস হেড। সেই হেডই অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ জেতানোর অন্যতম নায়ক। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ফিরেই করেছিলেন ঝোড়ো শতক। ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে পরের তিন ম্যাচে ভালো করতে না পারলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনালে অর্ধশত করেন। ওই ম্যাচে বল হাতেও গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট নেন। আর ফাইনালে ১৩৭ রানে ইনিংসটা তো তাঁকে কিংবদন্তিদের সঙ্গে তুলনা করতে বাধ্য করছে। ভারতের মহিন্দর অমরনাথ ও শ্রীলঙ্কার অরবিন্দ ডি সিলভার পর বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ও ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতার কীর্তিও গড়েছেন তিনি।

এবি ডি ভিলিয়ার্স প্রত্যাশিতভাবেই তিনে রেখেছেন কোহলিকে। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৭৬৫ রান ভারতীয় তারকা আরও একগাদা রেকর্ড গড়েছেন। টুর্নামেন্টের সেরার স্বীকৃতিও মিলেছে তাঁর। মিডল অর্ডারে রেখেছেন রাচিন রবীন্দ্র ও শ্রেয়াস আইয়ারকে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত কিউই অলরাউন্ডার রবীন্দ্রকে এবারের বিশ্বকাপের সেরা আবিষ্কার মনে করা হচ্ছে। তিন শতক ও দুই অর্ধশতকে ৫৭৮ রান করেছেন, উইকেট নিয়েছেন ৫টি।

বিশ্বকাপের ফাইনালসেরা ট্রাভিস হেডও আছেন ভিলিয়ার্সের একাদশে

আইয়ারের বিশ্বকাপও অসাধারণ কেটেছে, টুর্নামেন্টে ৫৩০ করেছেন ভারতের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ডি ভিলিয়ার্স তাঁকে ‘ম্যাচ উইনার’ বলেছেন।
সাত নম্বরে ডি ভিলিয়ার্স রেখেছেন ম্যাক্সওয়েলকে। বিশ্বকাপে ৬৬.৬৬ গড়ে ৪০০ রান করেছেন ও ৬ উইকেট নিয়েছেন ক্রিকেটের ‘বিগ শো’ খ্যাত তারকা। ফাইনালে জয়সূচক রানটা তাঁর ব্যাট থেকেই এসেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১ রানের অতিমানবীয় ইনিংসের কথা হয়তো না বললেও চলত।

দুই স্পিনার হিসেবে ডি ভিলিয়ার্সের পছন্দ জাম্পা ও জাদেজা। টুর্নামেন্টজুড়েই বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের ধন্দে ফেলে দেওয়া এ লেগ স্পিনার সব মিলিয়ে নিয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টানা ৩ ম্যাচে নেন ৪টি করে উইকেট। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উইকেটশূন্য থাকলেও ফাইনালে বুমরার উইকেট নিয়ে এক বিশ্বকাপে মুত্তিয়া মুরালিধরনের ২৩ উইকেটের রেকর্ড স্পর্শ করেন তিনি।

স্পিনারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ উইকেট নিয়েছেন জাদেজা। ৫ ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৪০ গড়ে করেছেন ১২০ রান। বোলিং–ব্যাটিংয়ের সঙ্গে তাঁর চৌকশ ফিল্ডিং ভারতের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।

বিশ্বকাপে মাত্র ৭ ম্যাচেই সর্বোচ্চ ২৪ উইকেট নেওয়া শামিও প্রত্যাশিতভাবে ডি ভিলিয়ার্সের একাদশে আছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ৭ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েছেন শামি। ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন আরও দুবার। দল হিসেবে শ্রীলঙ্কা ব্যর্থ হলেও আলো ছড়িয়েছেন মাদুশঙ্কা। ২৫ গড়ে ২১ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি পেসার। সেমিফাইনালে খেলতে না পারা একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে একাদশে ঠাঁই পেয়েছেন।

বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া দল

ডি ভিলিয়ার্সের একাদশের শেষজন তাঁর স্বদেশি কোয়েৎজি। আইসিসি টুর্নামেন্টের অভিষেকে প্রতি ম্যাচেই উইকেট নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান এই পেসার। আনরিখ নর্কিয়া ও সিসান্দা মাগালার চোটে ছিটকে পড়ায় প্রোটিয়ারা তাঁর ওপর আস্থা রেখেছিল। আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়ে।

ডি ভিলিয়ার্সে চোখে বিশ্বকাপের সেরা একাদশ:
রোহিত শর্মা (ভারত), ট্রাভিস হেড (অস্ট্রেলিয়া), বিরাট কোহলি (ভারত), রাচিন রবীন্দ্র (নিউজিল্যান্ড), শ্রেয়াস আইয়ার (ভারত), গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (অস্ট্রেলিয়া), রবীন্দ্র জাদেজা (ভারত), অ্যাডাম জাম্পা (অস্ট্রেলিয়া), জেরাল্ড কোয়েৎজি (দক্ষিণ আফ্রিকা), মোহাম্মদ শামি (ভারত) ও দিলশান মাদুশঙ্কা (শ্রীলঙ্কা)।