বিপিএল ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনে অধিনায়কেরা। আজ থেকে শুরু হচ্ছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট
বিপিএল ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনে অধিনায়কেরা। আজ থেকে শুরু হচ্ছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট

বিপিএল কেন ‘বিপিএল কাপ’?

একেকটা বিপিএল আসে বিতর্কের নানা রকম রন্ধ্রমুখ খুলে। নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া পর্যন্ত পুরোনো বিতর্কগুলোই পুনঃ আলোচিত হতে থাকে।

বিপিএল বা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ এলেই স্মৃতিতে ভেসে ওঠেন প্রয়াত বাপ্পী লাহিড়ী। ২০১২ সালে প্রথম বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের মঞ্চকাঁপানো সংগীতশিল্পী মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গেয়েছিলেন টুর্নামেন্টের থিম সং ‘যুদ্ধ শুরু ব্যাটে-বলে, ২২ গজে আগুন জ্বলে…।’ আরেক ভারতীয় শিল্পী শান ও বাংলাদেশের কুমার বিশ্বজিৎকে নিয়ে বাপ্পী লাহিড়ীর সেই গানে একবার শুধু এসেছিল ‘বিপিএল কাপ’ কথাটা। বাকি গান ভুলে এখন অবশ্য বিপিএলের মৌসুমে ‘বিপিএল কাপ, বিপিএল কাপ’ই বেশি শোনা যায় ক্রিকেটাঙ্গনের মানুষের মুখে।

একটা টুর্নামেন্টের থিম সংয়ের দুটিমাত্র শব্দ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে সেই টুর্নামেন্টেরই নেতিবাচক প্রচারণার ‘জিঙ্গেলে’ পরিণত হয়, ‘বিপিএল কাপ’ ছাড়া তার আর কোনো উদাহরণ জানা নেই। সেই শুরু থেকে একেকটা বিপিএল আসে বিতর্কের নানা রকম রন্ধ্রমুখ খুলে। নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া পর্যন্ত পুরোনো বিতর্কগুলোই পুনঃ আলোচিত হতে থাকে। সেই সব বিতর্কের ফাঁকে অবধারিতভাবেই কোনো রসিক মনে করিয়ে দেবেন, আর এটাই তো ‘বিপিএল কাপ’!

আজ শুরু দশম বিপিএল নিয়ে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো বিতর্কের আবহ সংগীত বাজেনি। তবে বিপিএলের প্রারম্ভিকতা জমাতে পুরোনো বিতর্কগুলোই যথেষ্ট। খালি একটু নেড়ে দিলেই হলো। এই যে দিন দুই আগে বিপিএলের চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস চেয়ারম্যান নাফিসা কামাল বললেন, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের রাজস্ব আয়ের ভাগ না দিলে আগামী দিনে তাঁরা বিপিএলে থাকেন কি না সন্দেহ; সেটি নতুন কোনো কথা নয়। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস বিপিএলে নাম লেখানোর পর থেকেই যৌক্তিক এই দাবি তুলে আসছে, প্রতিবারই সেটি প্রতিহত হয়ে আসে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের দেয়ালে।

বিপিএলে আজ প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে দুর্দান্ত ঢাকা। দলটির অনুশীলনে মোসাদ্দেকের সঙ্গে কোচ খালেদ মাহমুদ

বিপিএলের ধারণাটা প্রথম আসে এই নাফিসা কামালের বাবা ও বিসিবির সাবেক সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের মাথায়। আইপিএলের সুবাদে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাংগঠনিক পর্যায়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দাপট কয়েক গুণ বেড়ে যেতে দেখে তৎকালীন বিসিবি প্রধানের মনে হয়েছিল, বাংলাদেশের ক্রিকেটেও ফ্র্যাঞ্চাইজিধর্মী কিছু দরকার। যেটি আইপিএলের সঙ্গে পাল্লা দেবে, বিসিবিকে দেবে আরও বেশি আর্থিক স্থিতি।

কিন্তু বিপিএলের শুরুতেই বড় একটা ভুল হয়ে গিয়েছিল। আইপিএলের সঙ্গে টক্কর দিতে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক ধরা হয়েছিল অবাস্তব রকমের বেশি। ফ্র্যাঞ্চাইজিরাও নিলামে যেভাবে ছয়-সাত গুণ বাড়তি দাম হাঁকিয়ে খেলোয়াড় কিনেছিল, তা কোনোভাবেই বাংলাদেশের বাজারে বাস্তবসম্মত ছিল না। নিলামে ছয় স্থানীয় আইকন খেলোয়াড়ের মূল্য ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১০ হাজার ডলার করে। ‘এ’ শ্রেণির বিদেশি ১৮ খেলোয়াড়ের ভিত্তিমূল্য ১ লাখ ডলার, যাঁদের মধ্যে নিলামে সর্বোচ্চ ৭ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিলেন পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি। স্থানীয়দের মধ্যে আইকন খেলোয়াড়ের বাইরে সর্বোচ্চ ২ লাখ ডলারে ৪৫ হাজার ডলার ভিত্তিমূল্যের নাসির হোসেন। পরিণতি সবারই জানা। এক মৌসুম পর থেকেই দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের বকেয়া পারিশ্রমিকের দাবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেয় বিপিএল সম্পর্কে।

বিপিএলে ঢাকার প্রথম পর্বের সূচি

খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের অঙ্ক বিসিবি পরে বাস্তবসম্মত পর্যায়ে এনেছে। এখন ড্রাফটে বিদেশি খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ মূল্য ৮০ হাজার ডলার, সর্বনিম্ন ২০ হাজার ডলার। স্থানীয়দের ক্ষেত্রে সেটি ৮০ লাখ টাকা ও ৫ লাখ টাকা। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের রাজস্ব আয়ের ভাগ না দেওয়াসহ অন্য বিতর্কগুলো রয়েই গেছে, নতুনও যোগ হয়েছে অনেক। মিরপুরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কাল অবশ্য রাজস্ব আয় প্রসঙ্গে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক পাল্টা প্রশ্নই তুললেন, ‘এটা করতে গেলে তো অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মতো বিপিএলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি বাড়াতে হবে। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা কি ১৫ কোটি টাকা ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দেবে?’ বর্তমানে এই ফি বছরে দেড় কোটি টাকা।

কাজেই বিপিএল নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা সহজে থামবার নয়। বিপিএল থাকলে বিতর্কও থাকবে। বছর বছর ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলে এখন পর্যন্ত বিপিএলে নাম লিখিয়েছে মোট ২৭টি দল, এর মধ্যে ১০টি দলই একটির বেশি আসরে খেলেনি, প্রথম বিপিএলে খেলা কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই নেই আজ শুরু দশম আসরে। যে কারণে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো যেমন ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়ায়নি, বাড়েনি বিপিএলের ব্র্যান্ড ভ্যালুও।

প্রথম আসরের থিম সং থেকে আসা ‘বিপিএল কাপ’ কথাটা সে কারণেই বাংলাদেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি আসরকে এখন পরিচয় করিয়ে দেয় নেতিবাচকভাবে।