আফগানিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলা উচিত বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার উসমান খাজা। তবে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার নারীদের প্রতিও সহমর্মিতা জানিয়েছেন খাজা।
হোবার্টে ২০২১ সালের নভেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া দলের। এরপর গত বছর মার্চে আরব আমিরাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ খেলার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু আফগানিস্তানে তালেবান সরকার গঠনের পর মেয়েদের ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, কড়াকড়ি করা হয় মেয়েদের উচ্চশিক্ষায়ও। এর প্রতিবাদে সেই টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ খেলা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। কারণ হিসেবে সিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘নারী ও কন্যাশিশুদের মানবাধিকারে লক্ষণীয় বিপর্যয় ঘটেছে।’
তবে আইসিসির টুর্নামেন্টে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে গতকাল সেন্ট ভিনসেন্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২১ রানের ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটি আফগানিস্তানের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়। এই ম্যাচের পর আফগানিস্তানের তারকা লেগ স্পিনার রশিদ খান বলেছিলেন, বিশ্বকাপে দুই দল মুখোমুখি হতে পারে কিন্তু দ্বিপক্ষীয় সিরিজে হওয়া যাবে না—এই বিষয়টি তাঁর মাথায় ঢোকে না মানে বুঝতে পারেন না, ‘যেসব বিষয় ক্রিকেটারদের নিয়ন্ত্রণে নেই, ক্রিকেটও যেগুলোর সমাধান করতে পারবে না, সেসব বিষয় খেলাধুলায় আনা উচিত নয়। যদি অন্য কোনো সমাধান থাকে, সেটা প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু এমনটা ভাববেন না যে রাজনীতি ও ক্রিকেট দিয়ে এ ধরনের সমস্যার সমাধান করবেন। আমরা যদি বিশ্বকাপে খেলতে পারি, তাহলে কেন দ্বিপক্ষীয় সিরিজে খেলব না?’
মেলবোর্নে অ্যামাজন প্রাইমের এক অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘নাইন’কে এবার খাজা বলেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমাদের খেলা উচিত। এ সমস্যায় আমি দুই পক্ষের প্রতিই সহমর্মী। আফগানিস্তানে নারীদের ক্রিকেট নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার যে অবস্থান, সেখানে বিভিন্ন বিষয়েই আমি একমত এবং সম্মানও করি। তবে আরেকটি ব্যাপার হলো, খেলাকেও এগিয়ে নিতে হবে।’
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৭৩ টেস্ট, ৪০ ওয়ানডে ও ৯টি টি–টোয়েন্টি খেলা খাজা এরপর বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন, ‘এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অস্ট্রেলিয়া দ্বিপক্ষীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়াল। রশিদ খানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, সে খুবই হতাশ হয়েছে, কারণ আফগানিস্তানের মানুষ ক্রিকেট ভালোবাসে। ক্রিকেট তাদের জন্য সেসব অল্প কিছু বিষয়ের অংশ, যা তারা উপভোগ করে এবং আনন্দ বয়ে আনে। আর বাস্তবতাটা হলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা তাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার, যে সুযোগটা তারা এখন পাচ্ছে না। সে কারণে (সেখানকার) মানুষ মর্মাহত হয়েছে এবং সরকার থেকে তারা বিচ্ছিন্ন।’
অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিগ ব্যাশে (বিবিএল) আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের খেলার উদাহরণও টেনেছেন খাজা। এই টুর্নামেন্টের দল অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সে খেলেই তারকা হয়ে উঠেছেন রশিদ খান। সিএ আফগানিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলা থেকে সরে আসার পর গত বছর বিগ ব্যাশে না খেলার হুমকি দিয়েছিলেন এই লেগ স্পিনার। তবে পরে অবস্থান পাল্টালেও চোটে পড়েন। খাজা এ নিয়ে একটু কড়া সুরেই বলেছেন, ‘আমরা যদি বলি, আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলব না, কিন্তু আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের বিবিএলে খেলার সুযোগ করে দিচ্ছি—সেটা একটু দ্বিচারিতাও। তাদের শতভাগ (খেলা উচিত), কিন্তু আপনি একটিতে সায় দিয়ে আরেকটিতে না করেন কীভাবে?’