যখন মাঠে নেমেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৪ উইকেটে ২৪। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার চাপে ভেঙে পড়ার যে প্রবণতা, সেটি তখন প্রবলভাবে উপস্থিত। ওই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ডেভিড মিলার খেললেন ১১৬ বলে ১০১ রানের ইনিংস। বিশ্বকাপ ইতিহাসে যা নকআউট পর্বে কোনো ছয় নম্বর ব্যাটসম্যানের প্রথম শতক। নকআউটে দক্ষিণ আফ্রিকানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের ইনিসংও এটিই।
মিলারের রেকর্ড গড়া শতকের সুবাদে শেষ পর্যন্ত ৪৯.৪ ওভারে ২১২ রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ রান আসে হাইনরিখ ক্লাসেনের ব্যাট থেকে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স।
কখনো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে না পারা দক্ষিণ আফ্রিকা এবার লিগ পর্বে ছিল দারুণ ছন্দে। ৯ ম্যাচের ৭টিতে জয় তুলে সেমিফাইনালে ওঠে দ্বিতীয় হয়ে। তবে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামার কিছুক্ষণ পরই রীতিমতো ধুঁকতে শুরু করে টেম্বা বাভুমার দল। স্টার্ক ও হ্যাজলউডের জোড়া আঘাতে ১২ ওভারের মধ্যে ২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে তারা।
কলকাতার আকাশে মেঘ জমে যে গুমোট পরিস্থিতি স্টেডিয়ামজুড়ে তৈরি হয়, সেটি যেন প্রোটিয়া ক্রিকেটেরই প্রতিচ্ছবি। এ সময় বৃষ্টির কারণে কিছুক্ষণ খেলাও বন্ধ থাকে।
তবে বৃষ্টি–বিরতির পর খেলা শুরু হলে ক্লাসেনকে নিয়ে দলকে বিপর্যয় থেকে তুলতে থাকেন মিলার। পঞ্চম উইকেটে এ দুজনের ৯৫ রানের জুটি থামে ট্রাভিস হেডের বলে ক্লাসেন বোল্ড হলে। ৪৮ বলে ৪৭ রান তোলার পথে ৪টি চার ও ২টি ছয় মারেন ক্লাসেন। এর পরের বলে মার্কো ইয়ানসেন এলবিডব্লু হয়ে গেলে আরেক দফা বিপদে পড়ে প্রোটিয়ারা।
সপ্তম উইকেটে জেরাল্ড কোয়েৎজিকে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়েন মিলার। কামিন্সের বলে কোয়েৎজির আউটের আগে দুজনে যোগ করেন ৫৩ রান। ১৭২ রানে সপ্তম উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৮তম ওভারে কামিন্সের বলে মিলারের ছক্কায় পেরোয় দুই শর ঘর। এই ছয়ে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন মিলারও। বিশ্বকাপের নকআউট ইতিহাসে ছয় বা এর পরে নেমে এটিই প্রথম শতক। এত দিন সর্বোচ্চ ছিল ১৯৭৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কলিন্স কিংয়ের ছয়ে নেমে ৮৬।
মিলার ১০১ রানের শতকে গড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বিশ্বকাপ নকআউটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও। আইসিসি টুর্নামেন্টের নকআউটে হার্শেল গিবস ১১৬* (২০০২) ও জ্যাক ক্যালিসের ১১৩* (১৯৯৮) রানের ইনিংস থাকলেও সেটি ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০৯ (মিলার ১০১, ক্লাসেন ৪৭, কোয়েৎজি ১৯; স্টার্ক ৩/৩৪, কামিন্স ৩/৫১, হ্যাজলউড ২/১২, হেড ২/২১)।