‘নতুন বাংলাদেশ’সংক্রান্ত আলোচনায় বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত যে কারোরই এখন বিব্রত হওয়ার কথা। কিন্তু এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হারের পর দলের অবস্থাটা এখন এমন যে ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও কথার হুল ফোটাতে ছাড়ছেন না। কাল তো টিম হোটেলে বাংলাদেশ দলের এক সদস্যও বলে ফেললেন, ‘ধুর, এসব আর বইলেন না। ফাটিয়ে ফেলার কথা বলে পাওয়ার প্লেতে সেই আগের মতো ৪ উইকেট নেই!’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে শারজার ম্যাচটা ওই পাওয়ার প্লেতেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। দলের চার বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের তো বিদায় ঘটে গেছে তখনই। এরপর লড়াই করেও আর কতটুকুই–বা যাওয়া সম্ভব! টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে বারবার স্বাধীনভাবে ব্যাটিংয়ের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ক্রিজে নেমে স্বাধীনচেতা হচ্ছেন না কেউই। কাল টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য হতাশ কণ্ঠে বলছিলেন, ‘কত সাহস দিলাম। কোনো লাভ হলো না। আধমরা ব্যাটিং করে গেল সবাই।’
নতুনত্বের স্লোগান দিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ দল সেই পুরোনো ধাঁচের ক্রিকেটই খেলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজকের ম্যাচটা হয়ে গেছে বাঁচামরার লড়াই। বাংলাদেশ দল অবশ্য এখনো স্লোগানটা দিয়েই যাচ্ছে। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ সন্ধ্যার ম্যাচের আগে কাল টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ বলছিলেন, ‘হারতেই পারি, তবু মেরে খেলে হারব।’ সেটা না করে কেউ স্বার্থপরের মতো ব্যাটিং করলে পরিণতিতে দল থেকে বাদও পড়তে হতে পারে, মাহমুদের কথায় ধমকের সুর।
মাহমুদের হতাশাটা বেশি কথায় আর কাজে মিল না থাকায়, ‘আমরা যে মানসিকতার পরিবর্তনের কথা বলছিলাম, মেরে খেলার চেষ্টা দেখানোর কথা বলছিলাম, সেটা দেখতে পাইনি বলেই আমি বেশি হতাশ। এমন নয় যে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত জেতে আর আমাদের খারাপ লাগছে জিততে পারিনি বলে। ম্যাচ জয়ের প্রথম যে শর্ত, সেগুলোই আমরা মানছি না। ব্যাটসম্যানদের এত বোঝানোর পরও, এত অনুশীলনের পরও ওরা যদি সেই পুরোনো ধাঁচেই ব্যাটিং করে, তাহলে সেটা আমাদের সবাইকে কষ্ট দেয়।’
এই কষ্ট মাহমুদ আর পেতে চান না। ক্রিকেটারদের সামর্থ্য ও দক্ষতা রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয়। তবে ক্রিকেটীয় চাতুর্যে উন্নতি আনা সম্ভব। সম্ভব ভাবনার জগৎটা পাল্টে ফেলা। সবাই ক্রিকেটারদের মানসিকতায় সে বদলই দেখতে চাইছেন। আর সেটা শুরু হবে এশিয়া কাপ দিয়ে, চাওয়াটা ছিল এমনই। কিন্তু প্রথম ম্যাচে সেই চেষ্টার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। বাংলাদেশ দল আজ আরেকটি সুযোগ পাচ্ছে নিজেদের বদলে ফেলার। দুই দলের জন্যই চাপ সামলানোর ম্যাচটা কে কীভাবে সামলায়, তাতেই ঠিক হবে ম্যাচের ফলাফল।
মাহমুদও বলছিলেন, ‘প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাও হেরেছে। ওরাও চাপে আছে, শুধু আমরা নেই। আমরা যেহেতু এই ধরনের উইকেটে অনুশীলন করেছি, দুবাইয়ের উইকেটে মনে হয় না আমাদের খুব একটা ঝামেলা হবে। কিন্তু কালকের (আজ) ম্যাচটা স্নায়ুচাপের। যে দল চাপ সামলে খেলতে পারবে, তাদের সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। স্কিল, ট্যাকটিক বা টেকনিক—এগুলো নয়, কালকের খেলাটা হবে মানসিকতার লড়াই।’
আফগানিস্তানের কাছে হেরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ দল নিয়ে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা বলেছিলেন, আফগানিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশই নাকি সহজ প্রতিপক্ষ। সাকিব আল হাসান আর মোস্তাফিজ ছাড়া বাংলাদেশ দলে বলার মতো আর কোনো বোলারই নেই। শানাকার মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে মাহমুদের পাল্টা আঘাত, ‘বাংলাদেশের সাকিব আর মোস্তাফিজ ছাড়া বোলার নেই। কিন্তু আমি তো শ্রীলঙ্কা দলে কোনো বোলারই দেখি না। আমাদের তবু দুজন বোলার আছে। তাদের সাকিব আর মোস্তাফিজের মানেরও কোনো বোলার নেই।’
প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাও হেরেছে। ওরাও চাপে আছে, শুধু আমরা নেই। আমরা যেহেতু এই ধরনের উইকেটে অনুশীলন করেছি, দুবাইয়ের উইকেটে মনে হয় না আমাদের খুব একটা ঝামেলা হবেখালেদ মাহমুদ, টিম ডিরেক্টর, বাংলাদেশ
আইপিএলে নিয়মিত লঙ্কান লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার মাহমুদের সঙ্গে একমত হওয়ার কোনো কারণ নেই। উল্টো কাল সকালে টিম হোটেলে বলেছেন, আজকের ম্যাচে লড়াইটা হবে মূলত দুই দলের স্পিনারদের, ‘স্পিন বড় একটা ব্যাপার হতে পারে। আমাদের গ্রুপের দুটি ম্যাচেই স্পিনের প্রভাব ছিল বেশি।’ টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াই হলেও আজকের ম্যাচ নিয়ে লঙ্কান এই ক্রিকেটারকে খুব একটা চিন্তিত মনে হলো না, ‘আমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে নিয়মিতই খেলি। তাদের ভালোই জানা আছে আমাদের।’ কে জানে, সে কারণেই হয়তো আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি দেখেননি হাসারাঙ্গা!
তবে তাঁর কথাটা বলতে পারে বাংলাদেশও। বাঁচামরার ম্যাচের আগে দুই দলই তাই আছে একই জায়গায়।