মাগুরা আওয়ামী লিগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ আতর আলীর যে বাড়িতে মাগুরা আওয়ামী লিগের জন্ম, কাল মাগুরা শহরের ইসলামপুর পাড়ার সেই বাড়ি থেকেই সাকিব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছেন তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা। এই যে রাজনীতিতে পা রাখা, সাকিব চান এই পথচলা দীর্ঘ হোক তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মতোই।
সাকিবের কোনো রাজনৈতিক অতীত নেই। তবু তিনি রাজনীতিতে এসেছেন মূলত ক্রিকেটেরই সূত্রে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট তারকা মনোনয়ন পেয়েছেন মাগুরা–১ আসন থেকে, যেখানে বর্তমান সংসদ সদস্যের জনপ্রিয়তাও কম নয়।
রাজনীতিতে পা রেখেই সাকিব প্রথম আলোকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি চান এই ক্যারিয়ারও হোক ক্রিকেটের মতোই লম্বা। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, রাজনীতি নিয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী। প্রশ্নটা এ কারণেই করা যে সাকিবের সামনে এখনো খেলোয়াড়ি ভবিষ্যৎ তো পড়ে আছেই, তাঁর স্ত্রী–সন্তানেরাও থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। যেহেতু রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তিনি বড় হননি, ক্রিকেট আর পরিবারের পিছুটান মিলে একটা সময় মোহভঙ্গ হলেও হতে পারে। তা ছাড়া নতুন জগতের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ারও ব্যাপার আছে। সেটা কতটা পারবেন সাকিব?
কিন্তু আজ সকালে মাগুরা শহরের সাহা পাড়ায় নিজের বাসায় বসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাকিবকে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়েও আশাবাদীই মনে হলো। তবে জানালেন, এখানেও তাঁর ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে সফলতার ওপর, ‘এখানেও ক্যারিয়ারটা ক্রিকেটের মতো লম্বা হলে তো ভালো। ক্রিকেটে ১৭ বছর খেলেছি মানে তো এখানে আমাকে মিনিমাম পাঁচবার–দশবার এমপি হতে হবে। আসলে লম্বা সময়ের জন্যই চিন্তা করছি। কিন্তু ভালো কাজ করতে পারলাম না, মানুষ ভোট দিল না, তখন তো আর আমি চিন্তা করেও লাভ নেই। তবে ভিশন আমার বড়ই আছে। আমি যদি ভালো কাজ করতে পারি, তাহলে মনে হয় না খুব বেশি টেনশন করতে হবে।’
সাকিবের বিশ্বাস, মাগুরার মানুষও তাঁকে তাঁদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চান। তবে আসলেই মাগুরার মানুষের মনে কী আছে, তা জানা যাবে আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে। সাক্ষাৎকারে সাকিব কথা বলেছেন ক্রিকেট নিয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ ভাবনা এবং বিভিন্ন সময়ে তাঁকে নিয়ে সৃষ্ট অনেক বিতর্ক নিয়েও।
সাকিব আগেই বলেছিলেন, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চান। আজও সেটাই বললেন, তবে একটু অন্যভাবে, ‘আমি আরও চার বছরও খেলতে পারি। সবকিছু সময়ের ওপর নির্ভর করবে। আমার বয়স এখন ৩৬। অনেক ভালো কমিটমেন্টও যদি আমি দেখাই, হয়তো আর তিন–চার বছর খেলতে পারব। না হলে দেড়–দুই বছর। আমি যে ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির কথা বলেছি, এটা একটা ধারণা থেকে বলেছি। এমনও হতে পারে যে পরের তিন সিরিজ আমি একদমই খারাপ খেললাম। তখন স্বাভাবিকভাবে দলই আমাকে নিয়ে চিন্তা করবে না। আমার ওই অনুপ্রেরণা থাকবে না, এ বয়সে সেটা হয় না।’
সাক্ষাৎকারে সাকিব তামিম ইকবালের সঙ্গে সম্পর্ক, শেয়ার ব্যবসা নিয়ে বিতর্ক, দুবাইয়ে বিতর্কিত জুয়েলারি ব্যবসায়ীর দোকান উদ্বোধন করতে যাওয়া—এ রকম আরও অনেক বিষয়েই নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।
তামিমের সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্বে কেন সৃষ্টি হয়েছে, জানতে চাইলে সাকিব বলেছেন, ‘দূরত্ব মানুষের মধ্যে হতেই পারে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। তবে পাপন ভাই (বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান) যখন এটা খোলাখুলি বললেন, তার আগে কোনো দিন এর প্রভাব খেলায় পড়েনি।’ তবে তাই বলে তামিমের সঙ্গে আর কখনো একই দলে খেলা হবে না, এমন মনে করেন না সাকিব, ‘ভবিষ্যতে যদি সে খেলে, আবার আমিও খেলি, এটা না হওয়ার তো কোনো কারণ নেই। পুরো বিষয়টা আগে যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায়ই আছে। তাকে বাদ দেওয়ার পেছনে আমার কোনো ভূমিকা নেই, তাকে আনার পেছনেও নেই।’
নির্বাচনী প্রচারণায় নামার আগে গতকাল দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন সাকিব। এরপর যান তাঁর নির্বাচনী এলাকা শ্রীপুরে। আজ মাগুরা শহরে অংশ নিয়েছেন বিজয় র্যালিতে। আগামী কয়েক দিন এ রকম রাজনৈতিক ব্যস্ততাতেই কাটবে ক্রিকেটার সাকিবের সময়। তারপর ভোট, যে ভোট এবং ভোট–পরবর্তী পরিস্থিতিই আসলে ঠিক করে দেবে সাকিবের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আসলে কোন দিকে যাবে।
* সাকিব আল হাসানের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার পড়ুন আগামীকাল প্রথম আলোর ছাপা ও অনলাইন সংস্করণে।