বিরাট কোহলির উইকেট উদ্‌যাপন। তাঁকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আজ বেঙ্গালুরুতে
বিরাট কোহলির উইকেট উদ্‌যাপন। তাঁকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আজ বেঙ্গালুরুতে

ভারতের নবম জয়

কোহলি-রোহিতকেও উইকেট দিল নেদারল্যান্ডস

টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা রান করছেন। বোলাররা হয় গতি নয় তো স্পিন দিয়ে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিচ্ছেন। ভারতের বিশ্বকাপ তো এভাবেই কাটছিল। মুম্বাইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালের লড়াইয়ের আগে ভারতের যে জায়গাটা ঝালিয়ে নেওয়া দরকার ছিল, সেটা হলো মিডল অর্ডার ব্যাটিং।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আজ সে ঘাটতিও পূরণ হলো। ইডেন গার্ডেনে রোহিত, শুবমান ও কোহলির গড়ে দেওয়া মঞ্চে দাঁড়িয়ে শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুল শতক করলেন। ভারত ৪ উইকেটে গড়ল ৪১০ রানের পাহাড়।

এরপর নেদারল্যান্ডসকে ৪৭.৫ ওভারে ২৫০ রানে অলআউট করে ১৬০ রানের জয়ে অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপের লিগ পর্ব শেষ করল ভারত। ভারতের সব ইঞ্জিন প্রস্তুত—সেমিফাইনালের আগে এ বার্তাও দেওয়া হলো।

নিদামানারুর উইকেট নিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেছেন রোহিত

গত জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৭৪ রান তাড়া করতে নেমে নেদারল্যান্ডস ম্যাচটাকে নিয়ে যায় সুপার ওভারে। এরপর সুপার ওভারে ক্যারিবীয়দের হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেয় ডাচরা। ভারতের ৪১০ রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে সেই ম্যাচ নিশ্চয়ই ডাচদের অনুপ্রাণিত করছিল।

কিন্তু এত বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু খুব দরকার। ভারত সেটি হতে দেয়নি। ওপেনার ওয়েসলি বারেসি (৪) ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আউট হন। ম্যাক্স ও’ডাউড (৩০) ও কলিন অ্যাকারম্যান (৩৫) ৬১ রানের জুটি গড়ে ডাচদের কিছুটা আশা জাগালেও রবীন্দ্র জাদেজা ও কুলদীপ যাদবের বলে দুজনের ইনিংস বড় হয়নি।

এরপর সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট (৪৫) ও তেজা নিদামানুরু (৫৪) ছাড়া ডাচ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেউই দাঁড়াতে পারেনি। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৯ বোলার ব্যবহার করেছেন রোহিত। নিয়মিতদের বাইরে রোহিত, কোহলি, গিল ও সূর্যকুমার যাদবও বল করেছেন। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন বুমরা, সিরাজ, শামি ও জাদেজা। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন রোহিত ও কোহলি।

একমাত্র অপরাজিত দল হিসেবে সেমিফাইনাল খেলতে যাচ্ছে স্বাগতিক ভারত

ভারতের ব্যাটিং ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। উদ্বোধনে রোহিত শর্মা মেরে খেলেন, শুবমান গিল খেলেন দেখেশুনে—বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তা-ই দেখা গিয়েছিল। কিন্তু আজ শুবমান রানের গতিতে ছাড়িয়ে গিয়েছেন রোহিতকে। ওপেনিংয়ে নেমে রোহিত ৫৪ বল খেলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬১ রান করেন, স্ট্রাইক রেট ১১২.৯৬।

অন্য প্রান্তে গিলের ব্যাট থেকে এসেছে ৩২ বলে ৫১ রান। ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৫৯.৩৮ স্ট্রাইক রেটে ইনিংসটি সাজিয়েছেন তিনি। দুজনের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে পাওয়ারপ্লেতেই ৯১ রান পেয়ে যায় ভারত।

এরপর দলীয় ১০০ রানে গিল ও ১২৯ রানে রোহিত আউট হলেও ক্রিজে এসে খুব একটা চাপ অনুভব করেননি বিরাট, শ্রেয়াসরা। দুজনই মাঝের ওভারে সময় নিয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। দুজন মিলে ৬৬ বলে যোগ করেছেন ৭১ রান। দুই ওপেনারের পর কোহলিও আউট হন অর্ধশত করে। ২৮.৪ ওভারে ৫৬ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫১ রান করে ফন ডার মারওয়ের বলে বোল্ড হন কোহলি। দলের রান তখন ৩ উইকেটে ২০০।

শ্রেয়াস আইয়ার–লোকেশ রাহুল দুজনই শতকের দেখা পেয়েছেন

সেখান থেকে শ্রেয়াস ও রাহুল পরের ২০ ওভারকে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হিসেবেই খেলেছেন। দুজনের মধ্যে শ্রেয়াস দেখেশুনে খেলেছেন, রাহুল খেলেছেন হাত খুলে। দুজন মিলে ১২৮ বল খেলে ২০৮ রান যোগ করেছেন। শ্রেয়াস ৪৮ বল খেলে ৫০ রান করে শতক করেছেন ৮৪ বলে।

শতক করেছেন রাহুলও। ৪০ বলে ৫০ করা রাহুলের পরের ৫০ রান এসেছে ২২ বলে। তাঁর ইনিংস থামে ৬৪ বলে ১০২ রানে। ১১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৫৯ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি সাজিয়েছেন রাহুল। শ্রেয়ার অপরাজিত ছিলেন ৯৪ বলে ১২৮ রানে। ১০টি চার ও ৫টি ছক্কা ছিল তাঁর ১৩৬ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে। দুজনের যুগলবন্দীতে এ নিয়ে সপ্তমবারের মতো ওয়ানডেতে ৪০০ রান করল ভারত, বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার।