২৪ বলে দরকার ছিল ১৭ রান, বাকি ৫ উইকেট। এ ম্যাচের কোনোভাবেই এ পরিস্থিতিতে আসার কথা ছিল না। তবে হয়েছে সেটিই। শেষ পর্যন্ত সেটি এসে দাঁড়িয়েছিল স্নায়ুর লড়াইয়ে। মাহমুদউল্লাহ সে স্নায়ু ধরে রেখেছেন। ১৩ বলে ১৬ রানের অপরাজিত ইনিংসটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শেষ পর্যন্ত।
জয়ের মঞ্চটা তৈরি করে দিয়েছিলেন বোলাররাই। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং। বাংলাদেশের টপ অর্ডার এদিনও সুবিধা করতে পারেনি। তবে তিনে নামা লিটন চাপ সামাল দিয়েছেন শুরুতে। মাঝে হৃদয়কে নিয়ে গড়েছেন গুরুত্বপূর্ণ জুটি।
ম্যাচের সব ঘটনা পড়ুন নিচে—
বিশ্বকাপ, সেটি তো শুরু হয়ে গেছে ২ জুন। ১৩টি ম্যাচ হয়ে গেছে, ১৪তম ম্যাচটিও হচ্ছে। তবে ১৫তম ম্যাচে এসে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। যাদের সঙ্গে বরাবরই একটা বাড়তি ব্যাপারও কাজ করে! বাংলাদেশের বিশ্বকাপে প্রথম আলো লাইভে আপনাকে স্বাগত!
নাজমুল হোসেন কল করেছিলেন টেল। উঠেছে সেটিই। বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শুরুতে সিম ও সুইং আশা করছেন তিনি।
পিচ দেখে একটু শুষ্ক মনে হচ্ছে।নাজমুল হোসেন, বাংলাদেশ অধিনায়ক
শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা বলছেন, প্রথম ৬ ওভার দেখতে চান আগে তাঁরা।
চোটের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ মিস করেছিলেন, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ দিয়ে ফিরলেন তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশ অবশ্য পাচ্ছে না আরেক পেসার শরীফুল ইসলামকে। ভারতের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে আঙুলে চোট পান শরীফুল। তাসকিন, মোস্তাফিজুরের সঙ্গে খেলছেন তানজিম হাসান।
বাংলাদেশ একাদশ
তানজিদ হাসান, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (অধিনায়ক), তাওহিদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও তানজিম হাসান।
পাতুম নিশাঙ্কা, কুশল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিস, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, চারিত আসালাঙ্কা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, দাসুন শানাকা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (অধিনায়ক), মহীশ তিকশানা, মাতিশা পাতিরানা ও নুয়ান তুশারা।
রোহিত শর্মা ও সাকিব আল হাসান। দুজনই খেলেছিলেন ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এবারও আছেন দুজন। রোহিত এরই মধ্যে ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। এবার খেলছেন সাকিবও।
ডালাসের উইকেট নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা নেই। এখানে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২০০ রানের মতো স্কোর তাড়া করে জিতেছে। টস এই ম্যচের ভাগ্য নির্ধারণ করবে না, এটি ধরে নেওয়া যায়। চাপ সামলাতে পারলেই জেতার সম্ভাবনা বাড়বে। সেটিই বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্য শ্রীলঙ্কা–বাংলাদেশ ম্যাচে এখন এমনিতেই বাড়তি ঝাঁজ থাকে, তার ওপর এটি বিশ্বকাপ। সত্যিকারের যারা ক্রিকেটবোদ্ধা, তাদের কাছে ব্যাট-বলের লড়াই ছাপিয়ে অন্য মনস্তাত্ত্বিক ও কৌশলগত দিকগুলোও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
তানজিম হাসান, সামনে পাতুন নিশাঙ্কা। স্টাম্প লাইনের বল ডিফেন্ড করেছেন নিশাঙ্কা। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম বল। পরের বলে প্যাডের ওপর পেয়ে তুলে মারেন নিশাঙ্কা, মিডউইকেট দিয়ে হয়েছে চার। এরপর অবশ্য ভালোভাবে ফিরে আসেন তানজিম, পরের ৪ বলে দেন মাত্র ১ রান।
১ ওভারে ৫/০।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এক প্রান্তে স্পিনার দিয়ে বোলিং ওপেন করিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তানজিমের পর বাংলাদেশের আরেক প্রান্তে এলেন সাকিব। তাঁর দ্বিতীয় বলে অবশ্য শ্রীলঙ্কাকে ৪ রান উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। মিডউইকেটে খেলে সিঙ্গেল নিয়েছিলেন নিশাঙ্কা। তানজিম সেখান থেকে থ্রো যেটি করলেন, লিটনের নাগাল পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। ব্যাকআপও ধরতে পারেননি। ১ রানের জায়গায় শ্রীলঙ্কা পেয়েছে ৫ রান। সাকিব এরপরও দিয়েছেন ৮ রান।
২ ওভারে ১৩/০
টানা দুটি চারে তাসকিনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস। তাসকিনের লেংথ বলের এরপর ধন্দে পড়ে গেলেন—কাট করবেন নাকি ডিফেন্ড। শেষ পর্যন্ত কুশল বোল্ড হয়েছেন ইনসাইড-এজে। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে প্রথম উইকেটের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বোর্ডে রান ২১।
তানজিমের পর সাকিব—দুজনেরই প্রান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। পঞ্চম ওভারে সাকিবের ওপর চড়াও হয়েছেন নিশাঙ্কা। মেরেছেন চারটি বাউন্ডারি। প্রথম ৫ ওভারে ৮টি চারের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা মেরেছে ১টি ছক্কা। ৫ ওভারে ৪৮/১
মোস্তাফিজ এলেন, কামিন্দু মেন্ডিস গেলেন। প্রথম বলেই তুলে মারতে গিয়েছিলেন মেন্ডিস, কিন্তু মিডঅফে থাকা তানজিমের হাতে গেছে সহজ ক্যাচ। গুরুত্বপূর্ণ উইকেট এনে দিলেন মোস্তাফিজ, শ্রীলঙ্কা হারাল দ্বিতীয় উইকেট।
শ্রীলঙ্কার শুরুটা হয়েছে ভালোই। তবে বাংলাদেশও নিয়েছে ২ উইকেট। পাওয়ারপ্লের মধ্যে নাজমুল এনেছেন চার বোলারকে—তানজিম, সাকিব, তাসকিন ও মোস্তাফিজ।
প্রথম বলে চার মেরে শুরু করেছিলেন নিশাঙ্কা। রিশাদ অবশ্য ফিরে এসেছেন ভালোভাবে, পরের ৫ বলে দিয়েছেন মাত্র ৩ রান। মাঝের ওভারগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা রিশাদের বোলিং।
নাজমূল আবেদীনের বিশ্লেষণ
আমার বিশেষ দৃষ্টি থাকবে রিশাদের বোলিংয়ের দিকে। আমার বিশ্বাস, এ বিশ্বকাপে সে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মাঝের ওভারগুলোতে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখবে।
নিশাঙ্কা ছুটছিলেন। তাঁকে থামালেন মোস্তাফিজ। ২৮ বলে ৪৭ রান করে ক্যাচ তুলেছেন তিনি। ফুললেংথ থেকে জোরের ওপর ড্রাইভ করতে গিয়ে কাভারে নাজমুলের হাতে ধরা পড়েছেন শ্রীলঙ্কান ওপেনার। মোস্তাফিজ এনে দিলেন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু।
দশম ওভারে চতুর্থ বোলার হিসেবে এসেছেন মাহমুদউল্লাহ, তাঁর প্রথম ওভারে এসেছে ৪ রান।
ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়ে রানআউট হতে ধরেছিলেন আসালাঙ্কা। তবে রিশাদের থ্রো সরাসরি লাগেনি। এরপর শর্ট কাভার থেকে আবার রান নিতে গিয়ে ফিরে আসেন আসালাঙ্কা, ডাইভও দেন। এ দফা সৌম্যর থ্রো স্টাম্পে লাগে। কিন্তু সেটি লেগে হয়েছে চার। আসালাঙ্কা ক্রিজে ফিরেছেন সময়মতোই। ফলে দ্বিতীয়বার ওভারথ্রোয়ে চার পেল শ্রীলঙ্কা। মানে ৮ রান এল এভাবেই। ১২ ওভারে ৮৯/৩।
আসালাঙ্কার বিপক্ষে এলবিডব্লুর আবেদন করেছিলেন মোস্তাফিজুর। পল রাইফেল সাড়া দেননি। বাংলাদেশ রিভিউও নেয়নি। লেগবাইয়ে আসা সিঙ্গেল থেকে ১০০ পূর্ণ হয়েছে শ্রীলঙ্কার, ১৪তম ওভারের শেষ বলে গিয়ে।
রিশাদকে স্লগ সুইপ করেছিলেন আসালাঙ্কা। তবে লেংথটা যুতসই ছিল না ঠিক সে শটের জন্য। তাঁকে পাড়ি দিতে হতো স্কয়ার লেগে বড় বাউন্ডারি। সেটি হয়নি। ডিপ স্কয়ার লেগে থাকা সাকিবের হাতে ধরা পড়েছেন আসালাঙ্কা। যদিও প্রথম দফা সাকিবের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল বল। বিশ্বকাপে রিশাদের প্রথম উইকেট।
ঠিক পরের বলে রিশাদ পেয়েছেন দ্বিতীয় উইকেটও! লেগ সাইডে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে আউটসাইড-এজড হয়েছেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক আগে এসেছিলেন, ১ বল খেলেই ফিরে গেলেন। শ্রীলঙ্কাকে ডালাসে চেপে ধরেছে বাংলাদেশ, রিশাদ দাঁড়িয়ে গেছেন হ্যাটট্রিকের সামনে!
হ্যাটট্রিক সামাল দিতে এসেছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। হ্যাঁ, সময়মতোই এসেছেন তিনি ক্রিজে। স্লিপের সঙ্গে রাখা হয়েছে লেগ স্লিপও! রিশাদ এ ওভারে দিয়েছেন ৩ রান, নিয়েছেন ২ উইকেট।
১৫ ওভারে ১০৩/৫
এবার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। ফ্লাইট আর টার্নে পরাস্ত শ্রীলঙ্কা ব্যাটসম্যান। উইকেটের পেছনে লিটন দ্রুতগতির। ১৭তম ওভারের প্রথম বলে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। রিশাদ পেয়েছেন তৃতীয় উইকেট। ডালাসে উজ্জীবিত বাংলাদেশ।
৪ ওভার, ২২ রান, ৩ উইকেট। বিশ্বকাপ অভিষেকটা স্বপ্নের মতোই হলো লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের।
তাসকিন ফিরলেন শেষ ওভারের জন্য। নিলেন শানাকার উইকেট। ওয়াকার ইউনিসের ভাষায়, ডালাসের এ উইকেটে ‘স্পাইস’ আছে। মানে মিলছে বাউন্স। তাসকিনের সেই বাড়তি বাউন্সের বলে কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক। ২ ওভার বাকি থাকতে সপ্তম উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। উঠেছে ১১৫ রান।
তিকশানা তুলে মারতে গেলেন মোস্তাফিজ। তবে শট খেলার আগে থেকেই নড়বড়ে মনে ছিলেন তিনি। লেগ সাইডে বড় শট খেলতে গিয়ে ডিপ থার্ডে ধরা পড়েছেন। শ্রীলঙ্কা হারিয়েছে অষ্টম উইকেট। মোস্তাফিজ পেয়েছেন তৃতীয়।
চেন্নাই সতীর্থ মাতিশা পাতিরানাকে এরপর একটি বল করার সুযোগ পেয়েছেন মোস্তাফিজ। এ বাঁহাতি তাঁর ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৮ রান। সঙ্গে ৩ উইকেট তো আছেই।
১৯ ওভারে ১১৮/৮
পাওয়ারপ্লেতে ২ উইকেট হারালেও শ্রীলঙ্কার শুরুটা ছিল ভালোই। এরপরও ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেছে তারা। কিন্তু নিয়মিত উইকেট হারিয়ে গতি পায়নি তাদের ইনিংস। ২০ ওভারে শ্রীলঙ্কা আটকে গেছে ১২৪ রানেই।
ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ যে একেবারে নিখুঁত ছিল তা নয়। ৮ রান তো এসেছে ওভারথ্রো থেকেই। তবে বাংলাদেশের বোলিং আসলে ছাপিয়ে গেছে সবকিছুকে।
সাকিব এদিন পুরো ৪ ওভার করেননি। কিন্তু তাঁকে ৩ ওভার করানোর ‘বিলাসিতা’ আজ দেখাতে পেরেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন।
মোস্তাফিজ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়েছেন। তাসকিন আঘাত করেছেন। শেষে এসে উইকেটের দেখা পেয়েছেন তানজিমও। তবে দিনে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে নজর কেড়েছেন রিশাদ হোসেনই।
তরুণ লেগ স্পিনার ছিলেন সাহসী। মাঝে পরপর ২ বলে ২ উইকেট নিয়ে কার্যত শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় আঘাতটি করেন তিনি।
১২৫ রানের লক্ষ্য। বাংলাদেশের শুরুটা হওয়ার কথা ছিল আত্মবিশ্বাসী। তবে টপ অর্ডার নিয়ে দুশ্চিন্তা পুরোনো। ডালাসে উঁকি দিচ্ছে সেটিই। সৌম্য সরকার ফিরলেন কোনো রান না করেই। দুই বাঁহাতির সামনে পার্টটাইমার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে আনেন হাসারাঙ্গা। সৌম্য প্রথমে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন। এরপর ক্যাচ তুললেন মিড অনে। ঠিক কোন শট খেলতে চেয়েছিলেন সৌম্য, তা নিশ্চিত নয়। কিন্তু বাংলাদেশ প্রথম ওভারেই হারিয়ে ফেলেছে উইকেট। লিটনকে আসতে হয়েছে প্রথম ওভারেই।
১ ওভারে ৩/১
নুয়ান তুষারার বলটি বুঝতেই পারেননি বাংলাদেশ ওপেনার। ফুললেংথের বলে ব্যাট চালিয়েছিলেন। তবে সংযোগই ঘটেনি। ভেঙেছে স্টাম্প। দ্বিতীয় ওভারে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।
নাজমূল আবেদীনের ম্যাচ-পূর্ব বিশ্লেষণ
প্রথম ম্যাচে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে শ্রীলঙ্কার কেউ রান করতে পারেনি। অবশ্য এমন কন্ডিশনে ব্যাটসম্যানদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বরং কম স্কোর নিয়েও বোলারদের লড়াই তাদের বোলিং শক্তিটাকে ফুটিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে অ্যাকশন ও গতির কারণে বড় হুমকি হবে মাতিশা পাতিরানা ও নুয়ান তুষারা।
পাতিরানা এখনো বোলিংয়ে আসেননি। বাংলাদেশ ২ ওভারে ৮/২।
তৃতীয় ওভারে এসেছেন তিকশানা। ৭ রান দিয়েছেন। তবে বাউন্ডারি আসেনি কোনো। ২ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ। পাওয়ারপ্লেতে রান তোলার চেয়ে আপাতত টিকে থাকাই যেন লক্ষ্য।
৩ ওভারে ১৬/২।
তিকশানার বলে খেলা সুইপে লিটনের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কিন্তু তাতেই এসেছে ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি। কিপারের মাথার ওপর দিয়ে বল গেছে পেছনে। ৫ ওভারে ২৮/২, আপাতত একটা জুটি গড়ার লক্ষ্য লিটন ও নাজমুলের। কিন্তু এ অ্যাপ্রোচে কতক্ষণ টিকে থাকতে পারবেন তাঁরা?
না, বেশিক্ষণ টিকলেন না। ক্রিজের বেশ বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন নাজমুল। তুষারার বলটি হাফ ভলির মতো হয়েই এল বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাটে। কিন্তু ড্রাইভটা ঠিকঠাক করতে পারলেন না। কাভারে ধরা পড়েছেন। পাওয়ারপ্লের এখনো ৪ বল বাকি, বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছে ৩ উইকেট। প্যানিক বাটন অন হয়ে গেছে কি?
শ্রীলঙ্কা—৫৩/২
বাংলাদেশ—৩৪/৩
পাওয়ারপ্লের শেষটা হয়েছে চার দিয়ে। পাঞ্চ করে তুষারাকে সেটি মেরেছেন লিটন। অন্তত শেষটা তো ইতিবাচক!
নবম ওভারে ৫০ ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। যে ওভার শেষ হয়েছে হাসারাঙ্গাকে মারা হৃদয়ের স্লগ সুইপের ছক্কায়। ঠিকই ধরেছেন, ইনিংসে প্রথম ছক্কা এটি। আগের ওভারের শেষ বলে দারুণ টাইমিংয়ে পাতিরানাকে চার মেরেছিলেন হৃদয়। তিনি অপরাজিত ১১ বলে ১৯ রানে। বাংলাদেশ ৯ ওভারে ৫৮/৩।
ওদিকে নিউজিল্যান্ড ৮৪ রানে হারিয়ে সুপার এইটের পথে আরেকটু এগিয়ে গেছে আফগানিস্তান।
এ সময়ে শ্রীলঙ্কার স্কোর ছিল ৭৪/৩। পাওয়ারপ্লের ব্যাটিংয়ে দুই দলের পার্থক্যটা বড় হলেও ইনিংসের মাঝপথে তা কমে এসেছে। ৩ উইকেট হারানোর চাপ সামলে এগোচ্ছেন লিটন ও হৃদয়। হৃদয় ইতিবাচক, দুজনের জুটি অবিচ্ছিন্ন ২৮ বলে ৩৬ রানে। বাংলাদেশ চাইবে এ জুটি আরেকটু বড় হোক। শ্রীলঙ্কা দ্রুত এটি ভাঙতে না পারলে কার্যত ছিটকে যাবে ম্যাচ থেকে।
পাতিরানার শর্ট বল। লিটনের পুল—বুম! সেটি ছিল ছক্কার ট্রেলার।
পুরো সিনেমা দেখালেন হৃদয়। হাসারাঙ্গার ফুললেংথের বল। হৃদয়ের স্লগ সুইপ—বুম! পরের বল—একই ফল! তৃতীয় ছক্কাটি এল অফ সাইডে। তিনটি দুর্দান্ত শট। তিনটি ছক্কা। চতুর্থ বলে হৃদয়ের বিপক্ষে এলবিডব্লুর রিভিউ নেন হাসারাঙ্গা। এবং সফলও হয়েছেন! হৃদয় হয়েছেন এলবিডব্লু, শেষ হাসি হাসারাঙ্গার। তবে যা ক্ষতি তা করে গেছেন হৃদয়—বলাই যায়। হৃদয় থামলেন ২০ বলে ৪০ রান করে। বাংলাদেশের দরকার ৩৪ রান, বাকি ৫০ বল।
হৃদয়—এলবিডব্লু। লিটন—এলবিডব্লু। দুজনই হাসারাঙ্গার শিকার। প্রথমটি শ্রীলঙ্কার রিভিউয়ে এসেছে। পরেরটিতে ব্যর্থ বাংলাদেশের রিভিউ। মাইকেল গফের সিদ্ধান্ত বহাল থেকেছে। ৯৯ রানে বাংলাদেশ হারিয়েছে পঞ্চম উইকেট। ৩৮ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলে থামলেন লিটন। জয়ের জন্য দরকার ২৬ রান। বাকি ৩৫ বল। শেষে কোনো নাটক বাকি ডালাসে?
নার্ভাস?
তখনো না হলে এখন বোধহয় এখন নার্ভাস হওয়ার একটু সময় এসেছে। তিকশানার দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরেছেন সাকিব। পাতিরানার শর্ট বলে আপার কাট করেছিলেন সাকিব। বল যায় ডিপ থার্ডে। সামনে ছুটে এসে ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন তিকশানা। টেলিভিশন আম্পায়ারও নিশ্চিত করেছেন সেটি। ১৪ বলে ৮ রান করে থেমেছেন সাকিব। বাংলাদেশের দরকার ১৬ রান। বাকি ৪ উইকেট আর ২২ বল।
শ্রীলঙ্কা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তুষারার বাকি ১ ওভার। পাতিরানার ওভার নেই।
১৮তম ওভারে নিজের শেষ ওভার করতে এসেছেন তুষারা। মানে শেষ ২ ওভারে একজন নতুন বোলারকে আনতেই হবে শ্রীলঙ্কার। মাহমুদউল্লাহ সেটি মাথায় রেখেছেন বলে মনে হয়েছে। কিন্তু রিশাদ রাখেননি। জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড রিশাদ। পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজে শট।
প্রথম বলেই এলবিডব্লু তাসকিন। তুষারা হ্যাটট্রিকের সামনে। বাংলাদেশের নেই ৮ উইকেট। দরকার ১২ রান!
কিন্তু বাকি ২ উইকেট। অবশ্য বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির খবর, স্ট্রাইকে মাহমুদউল্লাহ। বোলিংয়ে দাশুন শানাকা। প্রথমবারের মতো।
১৯তম ওভারের প্রথম বলে শানাকা করলেন ফুলটস। মিস করেননি মাহমুদউল্লাহ! মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা। না, ২০১৬ সালের বেঙ্গালুরুর মতো কোনো উদ্যাপন মাহমুদউল্লাহ করেননি এরপর। কাজ বাকি, সেটি জানেন তিনি। পরের বলে লেগ সাইডে খেলে নিয়েছেন সিঙ্গেল। ৪ রান দরকার… ফিল্ডার এসেছেন সামনে। তানজিম স্লোয়ারে ব্যাট চালিয়েছিলেন, তবে নিচু হওয়া বল মিস করে গেছেন। পরের বলে লেগ সাইডে পেয়ে ঘুরিয়ে সিঙ্গেল। ৩ রান দরকার, স্ট্রাইকে মাহমুদউল্লাহ। অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল এরপর ছেড়ে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, হয়তো ওয়াইড ভেবেছিলেন। শট খেলতে পারতেন চাইলেই। মাহমুদউল্লাহ সে সুযোগটা নেননি। শেষ বলে শর্ট, মাহমুদউল্লাহ এবার ব্যাট চালিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কা আবেদন করেছে, এরপর নিয়েছে রিভিউ। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য চাচ্ছিলেন ওয়াইড। এবং রিভিউ ব্যর্থ হওয়ার পর দেওয়া হয়েছে ওয়াইড। শেষ বলে সামনে এসে খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। মিড অফ থেকে থ্রো সরাসরি লাগলে মাহমুদউল্লাহ রানআউট হতে পারতেন। আশা ছেড়েও দিয়েছিলেন। তবে ওভারথ্রো থেকে উল্টো আরেকটি রান নিয়ে ১৯তম ওভারের শেষ বলেই মাহমুদউল্লাহ নিশ্চিত করেছেন ২ উইকেটের জয়।
২৪ বলে দরকার ছিল ১৭ রান, বাকি ৫ উইকেট। এ ম্যাচের কোনোভাবেই এ পরিস্থিতিতে আসার কথা ছিল না। তবে হয়েছে সেটিই। শেষ পর্যন্ত সেটি এসে দাঁড়িয়েছিল স্নায়ুর লড়াইয়ে। মাহমুদউল্লাহ সে স্নায়ু ধরে রেখেছেন। ১৩ বলে ১৬ রানের অপরাজিত ইনিংসটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শেষ পর্যন্ত।
জয়ের মঞ্চটা তৈরি করে দিয়েছিলেন বোলাররাই। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং। বাংলাদেশের টপ অর্ডার এদিনও সুবিধা করতে পারেনি। তবে তিনে নামা লিটন চাপ সামাল দিয়েছেন শুরুতে। মাঝে হৃদয়কে নিয়ে গড়েছেন গুরুত্বপূর্ণ জুটি।
দারুণ বোলিং পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপ-অভিষেকেই ম্যাচসেরা হয়েছেন রিশাদ হোসেন।
মাঝের ওভারে খারাপ ব্যাটিং করেছি। শেষ ২ ম্যাচে ব্যাটাররা তাদের কাজ করতে পারেনি।
সবার শরীরী ভাষায় খুশি—বোলার, ফিল্ডারদের। রান তাড়া কঠিন ছিল। তারা ভালো বোলিং করেছে, তবে এ উইকেটে আরেকটু সহজভাবে ব্যাটিং করা উচিত ছিল আমাদের। (লিটন) গত কয়েক সিরিজে ভুগছিল, তবে আজ স্কিল দেখিয়েছে। (দর্শকেরা) আশা করি পরের ম্যাচেও আসবেন।