ইংল্যান্ডের ব্যাটিং যেন অহংকারের বহিঃপ্রকাশ

‘ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল’, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গত কয়েক দিন এই আলোচনাই খুব জোরেশোরে শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড নামের একটা দলও ছিল। সেটা কেউই গ্রাহ্য করছিল না। আমরা হয়তো বুঝতে পারিনি, এটা নিশ্চয়ই ইংল্যান্ডের অহংকারে আঘাত করেছে।

২০১৫ সাল থেকে সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডই বিশ্বসেরা। কে জানে, আজ অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিস্ফোরক ব্যাটিং হয়তো সেটারই বহিঃপ্রকাশ। বিশ্বকাপ শিরোপার অন্যতম দাবিদার ইংল্যান্ড, এটা সেই বার্তাও বটে।

অথচ ইংল্যান্ডের এমন আগ্রাসী ব্যাটিং সুপার টুয়েলভ পর্বে দেখা যায়নি। সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইংল্যান্ড তাদের চেনা রূপে ফিরেছে। সেটাও এক অভাবনীয় পারফরম্যান্সে।

ভারতের মতো দলকে একদম ভেঙেচুরে দেওয়া বলতে যা বোঝায়, ঠিক সে রকম। পাওয়ারপ্লের পর ম্যাচটা কার্যত শেষ। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। সে সময়টা তারা ধীরলয়ে খেলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারত। কিন্তু তা না করে তারা ১৬ ওভারেই ম্যাচটা শেষ করে দিয়েছে, যা এককথায় অবিশ্বাস্য!

বাটলার–হেলসের কাছে পাত্তাই পায়নি ভারত

জিততেই হবে—ইংল্যান্ড আজ এই মানসিকতা নিয়েই খেলেছে। আর ভারত খেলেছে যেন না হারে সে জন্য। দুটি কিন্তু দুই রকম মানসিকতা। অ্যাডিলেডে নিরাপদ স্কোর ১৬০-১৬৫ রানের মতো।

ভারত সেটা মাথায় নিয়েই খেলেছে। যথেষ্ট ঝুঁকি নেয়নি। কোহলি ও হার্দিকের জুটিটা কিন্তু বেশ জমেছিল। দুজনই ১৪ ওভার থেকেই মেরে খেলতে পারত। কিন্তু দুজনই শেষ চার ওভারের জন্য অপেক্ষা করেছে। এখন হয়তো সেই অপেক্ষার জন্য আক্ষেপ করছে ভারত। আরেকটু চেষ্টা করলে আরও কিছু রান হলেও হতে পারত।

একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামলে এমন হয়। ভারত ধরে নিয়েছে এই উইকেটে ১৬০ রান যথেষ্ট। তখন ম্যাচের অবস্থা যদি আরও রান করার সুযোগ করেও দেয়, তাহলেও সে একই গতিতে খেলে যেতে দেখা যায়। ভেতরে ভেতরে শেষের দিকে গিয়ে মেরে খেলার একটা পরিকল্পনা থাকে। ভারতও আজ তাই করেছে। আরেকটু দ্রুত ব্যাট চালিয়ে ১৮০ রান করতে পারলেও যে অন্য রকম কিছু হয়ে যেত, সেটা বলছি না। তবে আরও কিছু রান থাকলে হয়তো ভারত আরেকটু আক্রমণাত্মক বোলিং করতে পারত।

ভুবনেশ্বরকে দেখলাম অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে বল করছে। যেন উইকেট নেওয়া প্রাথমিক লক্ষ্য নয়। রান থামানোর চেষ্টাই দেখলাম সবার মাঝে। ইংল্যান্ডে সেই সুযোগটা দুই হাতে লুফে নিয়েছে। পাওয়ারপ্লেতে পেয়ে যাওয়া সেই মোমেন্টাম ইংল্যান্ড আর হাতছাড়া করেনি। ভারতের চাহালকে না খেলানো নিয়ে নিশ্চয়ই অনেক আলোচনা হবে। আমরা আদিল রশিদকে দেখেছি খুবই ভালো করতে। চাহালও হতে পারত ভারতের ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার কারিগর। এটাও বলতে হয়, আজ উইকেটে টার্ন ও বাউন্সও ছিল, যা ভারতীয় স্পিনারদের ব্যবহার করতে দেখিনি।  

আর বাটলার-হেলসও ছিল খুনে মেজাজে। ভালো বলেও মারছিল। এমন ব্যাটিং করতে সাহস লাগে। এখানে অনেক কিছু হারানোর ভয় থাকে। কিন্তু দিন শেষে যারা ওই ভয়টাকে অতিক্রম করতে পারে, ঝুঁকি নিতে পারে, তারাই অনেক দূর যেতে পারে। এই ইংল্যান্ডকেই এখন শিরোপার দাবিদার মনে হচ্ছে। কারণ, ইংল্যান্ড যে ব্যাটিংটা করবে, সেটা অন্যরা করতে পারবে না। অনেকে বলছে ১৯৯২ সালের ফাইনালের কথা।

কাকতালীয়ভাবে ’৯২–এর মতো এবারও ফাইনালে উঠল পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড। কিন্তু পরিসংখ্যান, ইতিহাস—মনে হয় না এসব খুব একটা গুরুত্ব বহন করবে। কারণ, বড় দলগুলো ইতিহাস বদলে দেয়। যে কারণে ইংল্যান্ডকেই এখন ফাইনালের ফেবারিট মনে হচ্ছে। বলছি না যে পাকিস্তানের কোনো সুযোগ নেই। তবে আমি ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রাখব।

ভারতকে তাদের মানসিকতা নিয়ে একটু ভাবতে হবে। তারা হয়তো মনে করে আইপিএল তাদের জন্য খুব ভালো প্রস্তুতি। আইপিএলের নিজস্ব কাঠামো আছে। সেটার চাপ অন্য রকম। চলেও অন্য রকম গতিতে। সেখানে চ্যালেঞ্জ আছে অবশ্যই। তবে সেটা নিজ দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের চ্যালেঞ্জ। অন্য দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের চ্যালেঞ্জ কিন্তু অন্য রকম। কন্ডিশন আলাদা। বিদেশি ক্রিকেটারদের কাছে প্রত্যাশা আলাদা। এসবই কিন্তু বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে এসে জোড়া লাগে।

ফিরে আসার গল্প লিখে ম্যাচসেরা হেলস

আজ হেলসের কথাই ধরুন। সে আইপিএল খেলে, বিগ ব্যাশেও। অ্যাডিলেডে আজ তার বিগ ব্যাশ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছে। মাঠে আকৃতি বুঝে খেলেছে। ভারতে গেলেও সেখানকার মাঠ সম্পর্কে একই ধারণা থাকবে হেলসের। এমন অভিজ্ঞতায় কিন্তু ভারতীয়রা কিছুটা পিছিয়ে। আইপিএল খেলে যে খুব ভালো প্রস্তুত হতে পারছে, তা কিন্তু নয়। বড় আসরের নকআউট ম্যাচগুলোতে এসে সেটাই দেখা যাচ্ছিল। আজও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল।