সেশনটা শুরু হয়েছিল তাসকিন আহমেদের উল্লাসে, দেশের মাটিতে এ পেসারের প্রথম টেস্ট উইকেটটি যে বিরাট কোহলির! ৯৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দারুণ চাপে থাকা ভারত অবশ্য ঋষভ পন্ত ও শ্রেয়াস আইয়ারের প্রতি-আক্রমণে ম্যাচে ফিরেছে দারুণভাবে। আর বাংলাদেশের সঙ্গী হয়েছে সুযোগ হাতছাড়া করার সেই ‘হাজার বছরের পুরোনো’ আক্ষেপ। জীবন পেয়েছেন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে চা-বিরতিতে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যানই।
মিরপুর টেস্টে দ্বিতীয় দিন দ্বিতীয় সেশনে ভারত ২৫ ওভারে ৫.৬০ হারে তুলেছে ১৪০ রান, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রথম ইনিংসে তাদের রানের ব্যবধান নেমে এসেছে মাত্র ১ রানে। মাত্র ৮৯ বলেই ৮৬ রান করে ফেলেছেন ঋষভ পন্ত, শ্রেয়াস আইয়ার অপরাজিত ৬৮ বলে ৫৮ রানে। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ১৩২ রানের জুটিতে ওভারপ্রতি এসেছে ৫.৬৫ রান। দুজন মিলে এখন পর্যন্ত ১২টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৭টি ছক্কা।
মধ্যাহ্নবিরতির আগে নড়বড়ে কোহলি সেশনটা শুরু করেছিলেন তাইজুল ইসলামকে দারুণ এক অন ড্রাইভে চার মেরে। তবে অফ স্টাম্পের বাইরের চ্যানেলের পুরোনো ভূত ফিরে এসেছে তাঁর। তাসকিন আহমেদের গুডলেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
তাসকিন এরপর শর্ট বলের তত্ত্ব কাজে লাগানোর চেষ্টা করে যান শ্রেয়াসের বিপক্ষে, ডিপ ফাইন লেগ ও ডিপ স্কয়ার লেগে ফিল্ডার রেখে। বাড়তি বাউন্সের বলেই স্ল্যাশ করতে গিয়ে গালিতে ক্যাচও তোলেন শ্রেয়াস। অবশ্য লাফিয়ে উঠে করা মিরাজের ভালো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, মুখ থুবড়ে পড়া মিরাজ এরপর মাঠ ছাড়েন রক্তাক্ত নাক নিয়ে। পরে অবশ্য মাঠে ফিরে বোলিং-ও করেন।
১৯ রানে প্রথম জীবন পাওয়া শ্রেয়াস পরের জীবনটি পান ২১ রানে। সাকিবের বলে পরাস্ত হয়ে স্টাম্পিং হতে পারতেন, তবে সহজতম সুযোগটি কোনো একভাবে মিস করে যান উইকেটকিপার নুরুল হাসান। পরের জীবনটি পান পন্ত। মিরাজের বলে লং অনে ক্যাচ তুলেছিলেন, তবে বাউন্ডারির বেশ ভেতরে ছিলেন মুশফিক, হাত লাগালেও রাখতে পারেননি ক্যাচ। তাঁর উচ্চতার কেউ পন্তের মতো কারও ব্যাটিংয়ের সময় কেন সীমানায় ফিল্ডিং করবেন, সে প্রশ্নটাও তোলা যায় ভালোভাবেই। জীবন পাওয়ার সময় পন্তের রান ছিল ৫৯। তাইজুলকে ছক্কা মারার পর ডাবলস নিয়ে এর আগেই ৪৯ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি।
বিরতির আগে দিয়ে দুজন চড়াও হন আরও। তাইজুলকে চারের পর ছক্কা মারেন পন্ত, পরের ওভারে মিরাজকে মারেন আরও দুটি ছক্কা। ৬০ বলে ফিফটি পূর্ণ করা শ্রেয়াস সাকিবকে টেনে লং অন দিয়ে মারেন ছয়।
এর আগে প্রথম সেশনটি ছিল তাইজুলের। বিনা উইকেটে ১৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা ভারত ৬৭ রান যোগ করতে হারায় ৩ উইকেট। প্রান্ত বদলের জন্য ১ ওভার বিরতি বাদ দিলে ১৩ ওভার বোলিং করে ভারতের দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও শুবমান গিলের পর চেতেশ্বর পূজারাকেও ফেরান তাইজুল। মিরপুরের উইকেটের টার্ন ও বাউন্স কাজে লাগিয়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষার সামনে ফেলেছিলেন।
রাহুল ও গিল—দুজনই হন এলবিডব্লিউ। গতকাল একবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন রাহুল, আরেকবার তাঁর বিপক্ষে নেওয়া রিভিউ ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশের। আজ বাংলাদেশ তাঁর উইকেট পেয়েছে রিভিউ নিয়েই। সামনে এসে খেলতে গিয়ে মিস করেছিলেন ভারত অধিনায়ক।
গিল সুইপ করতে গিয়ে মিস করে যান। আম্পায়ার শরফউদ্দৌলার আউটের সিদ্ধান্ত রিভিউ করারও প্রয়োজন বোধ করেননি গিল। ভারত ২ উইকেট হারায় ১১ রান ও ১৩ বলের মধ্যে। ৩৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় তারা। অষ্টম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৭ হাজার রান পূর্ণ করা পূজারা আউট হন ইনসাইড-এজে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে। মুমিনুল ক্যাচ ঠিকঠাকই নিয়েছেন, এমন রায় দেন টেলিভিশন আম্পায়ার মাইকেল গফ।
পন্ত ও কোহলি, দুজনের বিপক্ষেই ‘হাফ-চান্স’ তৈরি করেছিলেন মিরাজ। নিচু হওয়া বলে কোহলির আউটসাইড-এজ উইকেটকিপার নুরুলের প্যাডে লাগার পর যায় স্লিপের নাগালের বাইরে দিয়ে। পরে পন্তের আউটসাইড-এজে লাফিয়ে উঠে হাত লাগাতে পারলেও ক্যাচ নিতে পারেননি স্লিপে থাকা লিটন দাস।
তবে পরের সেশনে এসেছে আরও সহজ সুযোগ, বাংলাদেশ হাতছাড়া করেছে সে সবও।