বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ কাল তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে
বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ কাল তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে

১১ রানেই নেই শেষ ৭ উইকেট—শুধু বাংলাদেশই এমন নয়, অন্যরাও আছে

বাংলাদেশ দলের খেলা থাকলে বাসায় ফিরেই টিভি ছেড়ে দিয়ে একবার স্কোর দেখে নেওয়া এ দেশের অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর অভ্যাস। কাল রাতেও কেউ কেউ টিভি ছেড়ে দিয়ে হয়তো অন্য কোনো কাজ করেছেন। কিন্তু কাজ শেষে টিভিতে মুখ ফিরিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা সুখকর নয়।

শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে কাল ২৩৫ রান তাড়া করতে নেমে একপর্যায়ে ২ উইকেট হারিয়ে ১২০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। ৩ উইকেট পড়েছিল ১৩২ রানে। রহস্যময় স্পিনার আল্লাহ গজনফরের সঙ্গে রশিদ খানের ঘূর্ণি–জাদুতে সেখান থেকে আর ১১ রান যোগ করতেই অলআউট নাজমুল হোসেন দল! ৯২ রানের জয়ে ৩ ম্যাচ সিরিজে আফগানরা এগিয়ে গেছে ১–০ ব্যবধানে

বাংলাদেশের এমন অবিশ্বাস্য ব্যাটিং–ধস ওয়ানডে ইতিহাসে নজিরবিহীন তো নয়ই; একেবারে বিরলও নয়। আদতে ১১ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট খোয়ানো বাংলাদেশের জন্য নতুন কোনো ঘটনাও নয়। ২০১৪ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ৮ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট হারিয়েছিল তারা।

কোন ম্যাচের কথা বলা হচ্ছে, মনে করতে পারছেন নিশ্চয়! স্টুয়ার্ট বিনির ম্যাচ। সে বছর আইপিএল শেষেই সিরিজ পড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়েছিল ভারত।

মিরপুরে বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সুরেশ রায়নার নেতৃত্বাধীন ভারতকে মাত্র ১০৫ গুটিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। রান তাড়ার একপর্যায়ে ৩ উইকেটে ৫০ রান তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সবাই যখন স্বাগতিকদের জয় নিশ্চিত ধরে নিয়েছিল, তখনই বল হাতে সফরকারীদের ত্রাতা বনে যান বিনি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) বর্তমান সভাপতি রজার বিনির ছেলে মাত্র ৪ রান দিয়ে নেন ৬ উইকেট। তাঁর ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ৩ উইকেটে ৫০ থেকে ৫৮ রানে অলআউট বাংলাদেশ।

২ উইকেটে ১২০ থেকে ১৪৩ রানে শেষ—আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ধসে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং

গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মোহাম্মদ শামির ৫৭ রানে ৭ উইকেটের আগে সেটিই ছিল এই সংস্করণে কোনো ভারতীয় বোলারের সেরা বোলিং। খুব সম্ভবত মিরপুরের সেই ম্যাচই বাংলাদেশ ক্রিকেটে ‘পঞ্চপাণ্ডব’ হিসেবে পরিচিত মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর জন্য একসঙ্গে সবচেয়ে বাজে স্মৃতি হয়ে আছে।

তবে ওয়ানডেতে সবচেয়ে কম রানের ব্যবধানে শেষ ৭ উইকেট হারানোর বিব্রতকর বিশ্ব রেকর্ডটা বাংলাদেশের নয়। এ তালিকায় সবার ওপরে জিম্বাবুয়ে। ২০০৮ সালে হারারেতে শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরন ও অজন্তা মেন্ডিসের ঘূর্ণিতে ৩ রানের মধ্যে (১২৪/৩ থেকে ১২৭/১০) ৭ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে।

যে আফগানিস্তান কাল বাংলাদেশকে তেতো স্বাদ দিয়েছে, সেই দলটারও এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে এ বছরই। পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত ফেব্রুয়ারিতে ৭ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে বসে হাশমতউল্লাহ শহীদির দল। বাংলাদেশের গত রাতের ম্যাচের মতো ১১ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেটে হারানোর ঘটনা ওয়ানডে ইতিহাসে আরও তিনটি আছে।

স্টুয়ার্ট বিনি সেদিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে স্রেফ ছেলেখেলায় মেতেছিলেন (বাঁয়ে)

২০১৪ সালে মিরপুরে বাংলাদেশের ৮ রানে শেষ ৭ উইকেট হারানোর নজির আছে আরেকটি। নেপালের বিপক্ষে ২০২০ সালে কীর্তিপুরে ওয়ানডে ইতিহাসের দলীয় সর্বনিম্ন ৩৫ রানে অলআউট হওয়ার দিনে ৬ রানের ব্যবধানে (২৭/৩ থেকে ৩৫/১০) শেষ ৭ উইকেট হারিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।