১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১০ ওভারে ৭৩ রান তুলতেই ৪ উইকেট নেই নিউজিল্যান্ডের। শেষ ১০ ওভারে দরকার আরও ১২১ রান। মানে ওভারপ্রতি কিউইদের রান তুলতে হতো ১২ করে।
ক্রিজে মার্ক চ্যাপম্যানের সঙ্গে তখন সবে ব্যাটিংয়ে নেমেছেন জিমি নিশাম। এরপর স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে ছিলেন শুধু রাচিন রবীন্দ্র। শাহিন আফ্রিদি-হারিস রউফদের তখনো একাধিক ওভার করে বাকি। এ অবস্থায় ক্রিকেট কম বোঝা মানুষটিরও পাকিস্তানের পক্ষে বাজি ধরার কথা। রাওয়ালপিন্ডিতেও তো তখন ঈদের রেশ থাকতেই আরেকটি আনন্দের উপলক্ষ প্রায় এসে গেছে।
কিন্তু নিশামকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানিদের হতাশায় ডোবান চ্যাপম্যান। শাহিন-রউফদের পাড়ার মানের বোলারে নামিয়ে দুজন গড়েন ৫৮ বলে ১২১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। ৪ বল বাকি থাকতেই নিউজিল্যান্ডকে এনে দেন ৬ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয়।
এ জয়ে দুটি রেকর্ডও গড়ে ফেলেছে নিউজিল্যান্ড। চ্যাপম্যান-নিশামের জুটিটা টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ। আর এই সংস্করণে এটি কিউইদের ১০০তম জয়। সফরকারীদের জন্য তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, এ জয়ে সিরিজ ২-২ সমতায় শেষ করতে পারা।
অথচ এই নিউজিল্যান্ড পূর্ণশক্তির দল নয়। মূল দলের সবাইকে আইপিএল খেলার সুযোগ দিয়ে পাকিস্তানে ‘দ্বিতীয় সারি’র দল পাঠিয়েছে কিউই বোর্ড (এনজেডসি)। চ্যাপম্যানের ঝোড়ো সেঞ্চুরি (১০৪*) আর নিশামের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে (৪৫*) ভাঙাচোরা এই দলই কাল ম্যাচ জিতিয়ে সিরিজ ড্র করে ফেলল।
ঘরের মাঠে খর্বশক্তির একটা দলের সঙ্গে সিরিজ ড্রয়ের জন্য স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের কাঠগড়ায় তুলতে শুরু করেছেন সাবেকরা। তবে অধিনায়ক বাবর আজম দায় চাপিয়েছেন শাদাব খানের কাঁধে। ১৪তম ওভারের পঞ্চম বলে লং অনে চ্যাপম্যানের সহজ ক্যাচ ছাড়েন শাদাব। চ্যাপম্যান তখন ৬৭ রানে অপরাজিত, নিউজিল্যান্ডের তখনো দরকার ৩৮ বলে ৭০ রান।
ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাবর বলেন, ‘শাদাব অতীতে অনেক ভালো পারফর্ম করেছে। তবে এই সিরিজে ভালো করতে পারেনি। শাদাবের ওই ক্যাচ হাতছাড়া করার মাশুল গুনতে হয়েছে।’
শাদাবের ক্যাচ মিসকে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট মনে করলেও সতীর্থ অলরাউন্ডারের পাশেই দাঁড়িয়েছেন বাবর, ‘একটা সিরিজে ভালো করতে না পারলেই ওকে আলাদা চোখে দেখার কারণ নেই। আমরা ওকে সমর্থন দিয়ে যাব। আশা করি, ও আবার ভালো করবে।’
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৫১ রান তুলে ফেলেন বাবর ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। বাবর আউট হতেই ছোটখাটো ধস নামে। ১ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান। এরপর কিছুটা রয়েসয়ে খেলেন রিজওয়ান। ইফতিখার আহমেদের পর ইমাদ ওয়াসিমকে নিয়েও গড়েন বড় জুটি।
তবে পুরো ২০ ওভার খেললেও ব্যাট হাতে শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারেননি রিজওয়ান। ২ রানের জন্য নিজে তো সেঞ্চুরি করতে পারেনইনি, তাতে দলের রানও কিছু কম হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে বাবরের জবাব, ‘এই উইকেটে আমরা যেভাবে শুরু করেছিলাম, মাথায় ১৮০ থেকে ১৯০ রান তোলার ভাবনা এসেছিল। পরে রিজওয়ান-ইফতিখারের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছিল ২০০ রান হতে পারে। কারণ, উইকেট আরও ব্যাটিং–সহায়ক হয়ে উঠেছিল। শেষ ৩ ওভারে রিজওয়ান রান বাড়াতে খুব চেষ্টা করেছে, কিন্তু ব্যাটে-বলে হয়ে ওঠেনি। তবে সে খুব ভালো করেছে। আবার এটাও বলা যায়, আমরা কিছু রান কম করেছি।’