সাকিব ক্রাইস্টচার্চে থেকেও খেলেননি প্রথম ম্যাচ
সাকিব ক্রাইস্টচার্চে থেকেও খেলেননি প্রথম ম্যাচ

সাকিব অধিনায়ক হয়েও যদি এমন করেন...

ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি নিয়ে তিন অধিনায়কের ফটোসেশন। কিন্তু পাকিস্তানের বাবর আজম আর নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন থাকলেও সেখানে ছিলেন না বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

সিরিজ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলন। বিশ্বকাপের প্রস্তুতিমূলক সিরিজ বলে দলের পরিকল্পনা নিয়ে অধিনায়কই বলতে পারতেন বিস্তারিত। সেখানেও অনুপস্থিত সাকিব!

কাল ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ দল। সবাইকে বিস্ময়ের সাগরে ভাসিয়ে এই ম্যাচেও টস করতে নামলেন সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান! সাকিব ক্রাইস্টচার্চে থেকেও খেললেন না ম্যাচটা।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুসের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন সাকিব কাল খেললেন না? তিনি অনুমিত উত্তরই দিলেন, ‘লম্বা ভ্রমণ করে ৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছে পরদিনই খেলতে নেমে যাওয়াটা কঠিন ছিল।’ অধিনায়ক হয়েও সাকিব কেন ম্যাচের আগের দিন নিউজিল্যান্ডে পৌঁছালেন, সেটিরও জানা ব্যাখ্যাই দিলেন ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান। যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার পথে ট্রানজিট–জটিলতায় পড়েছিলেন সাকিব।

ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফির সঙ্গে কেইন উইলিয়ামসন, বাবর আজম ও নুরুল হাসান।

সিপিএলের জন্য বিসিবি সাকিবকে ছুটি দিয়েছিল ২ অক্টোবর পর্যন্ত। ২৮ সেপ্টেম্বর গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্সের সিপিএল শেষ হয়ে যাওয়ার পর সাকিব চেয়েছিলেন ৩০ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা দিতে। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বরের টিকিট তিনি পাননি। পেলে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছে যেতে পারতেন ২ অক্টোবরের মধ্যেই। পরের যে টিকিট পেয়েছেন, সেই টিকিটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাহিতি হয়ে সাকিবের ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছানোর কথা ৪ অক্টোবর। সেটা হলে সাকিব হয়তো পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা খেলতে পারতেন। কিন্তু সেখানেও বাধে গোল।

তাহিতিতে ট্রানজিটের জন্যও যে ভিসা নিতে হয়, সেটি জানা ছিল না সাকিবের। এয়ার তাহিতিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার উদ্দেশে বিমানবন্দরে গিয়েও তাই উঠতে পারেননি বিমানে। পরে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তাহিতির ভিসা সংগ্রহ করে সাকিব ক্রাইস্টচার্চে যান। কিন্তু মাঝের দুই দিন চলে যাওয়ায় তিনি সেখানে পৌঁছান ৬ অক্টোবর।

সাকিবকে ছাড়া বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে হেরেছে ২১ রানে

এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে টিকিট, ভিসা, ফ্লাইটের জটিলতার কথা সাধারণ যাত্রীরা বললে মানায়। সাকিবের মতো একজন বিশ্বচারী ক্রিকেটারের তো এসব ক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি থাকবে, বিশেষ করে তিনি যখন এমন একটা সিরিজ খেলতে যাবেন, যেখানে তিনিই দলের অধিনায়ক। এ ক্ষেত্রে বিসিবিরও কিছুটা দায় নিতে হবে। ২ অক্টোবর ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পরও কেন অধিনায়ক দলের সঙ্গে যোগ দিলেন না, সেই খোঁজ কি তাঁরা নিয়েছিলেন?

বাংলাদেশ দল যে এই সময়ে নিউজিল্যান্ডে থাকবে এবং ৭ অক্টোবর ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ম্যাচ খেলবে, সেটা আগে থেকেই জানা। এ–ও জানা ছিল যে সাকিব ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিপিএল খেলে নিউজিল্যান্ডে যাবেন। তাহলে তাঁর ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে সময়মতো নিউজিল্যান্ডে পৌঁছানোর সব পরিকল্পনাও আগে থেকেই ঠিক থাকা উচিত ছিল।

কিন্তু সাকিব বিষয়টিকে সে রকম গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না। নয়তো তিনি বিমানবন্দরে গিয়েই কেন জানবেন, তাঁর তাহিতির ভিসা লাগবে? করোনাকাল শেষে সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর সব এয়ারলাইনসের নিউজিল্যান্ডের টিকিটের প্রচণ্ড সংকট। এ অবস্থায় একেবারে শেষ মুহূর্তে কেন তিনি নিউজিল্যান্ডের টিকিট কাটতে গেলেন, যখন তা এয়ার তাহিতি ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না?

সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়

দলে অধিনায়কের ভূমিকা বাকি ক্রিকেটারদের মতো নয়। মাঠে নামার আগে দলটাকে এক সুতায় বাঁধার কাজটা তাঁকেই করতে হয়। সিপিএলে খেলার জন্য এশিয়া কাপের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই ম্যাচের সিরিজে সাকিব দলে ছিলেন না। সে কারণেই দলটাকে বুঝতে ও বোঝাতে নিউজিল্যান্ডে সিরিজ শুরুর আগে তাঁর হাতে যথেষ্ট সময় থাকা উচিত ছিল, যেটা নিশ্চিত করতে পারেনি বিসিবিও।

সাম্প্রতিক সময়ে মাঠের বাইরের অনেক বিতর্কেও সাকিবের নাম জড়িয়েছে। ‘ক্রিকেটের বিষয়’ নয় বলে নাহয় সেসব প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে পেরেছে বিসিবি, কিন্তু নিউজিল্যান্ডে সাকিবের সময়মতো দলের সঙ্গে যোগ দিতে না পারাটা তো সে রকম ঘটনা নয়। আর স্বয়ং অধিনায়কই যখন দেরিতে দলে যোগ দিয়ে ম্যাচ খেলতে পারেন না, সে অধিনায়ক সতীর্থদের কীভাবে বলবেন, ‘সবার আগে কিন্তু দল!