টেস্টের তৃতীয় দিনকে বলা হয় ‘মুভিং ডে’, মানে টেস্ট কোন দলের দিকে ঝুঁকছে তা বোঝা যায় এ দিনে। রাঁচির অসম বাউন্সের অননুমেয় উইকেটে তৃতীয় দিন টেস্ট ঝুঁকে পড়েছে স্বাগতিক ভারতের দিকে। সকালে ধ্রুব জুরেলের প্রতি-আক্রমণে প্রথমে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ব্যবধান কমায় ভারত, এরপর স্পিনাররা ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নামান ধস। প্রথম ইনিংসে ৪৬ রানে লিড পাওয়া ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৪৫ রানেই। ১৯২ রানের লক্ষ্যে শুরুটা দারুণ করেছেন ভারতের দুই ওপেনার অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও যশস্বী জয়সোয়াল, ৮ ওভারে অবিচ্ছিন্ন থেকে দুজন তুলেছেন ৪০ রান। এক টেস্ট হাতে রেখেই সিরিজ জিততে ১০ উইকেট হাতে থাকা ভারতের প্রয়োজন এখন ১৫২ রান।
প্রথম ইনিংসে বড় লিডে চোখ রেখে দিন শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডের, ১৩৪ রানে এগিয়ে ছিল সফরকারীরা। তবে ভারতকে খাদের কিনার থেকে বেশ স্বস্তিকর একটা জায়গায় নিয়ে আসার কাজে নেতৃত্ব দেন ধ্রুব জুরেল। শেষ ৩ উইকেটে ভারত যোগ করে ১৩০ রান, সেঞ্চুরি থেকে ১০ রান দূরে থামলেও ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা জুরেলের ইনিংস ছিল দুর্দান্ত।
কুলদীপ যাদবের সঙ্গে তাঁর ৭৬ রানের অষ্টম উইকেট জুটি সকালে ইংল্যান্ডকে হতাশ করে বেশ কিছুক্ষণ। দিনের প্রথম ঘণ্টার শেষ দিকে গিয়ে ১৩১ বলে ২৮ রান করা কুলদীপকে বোল্ড করে সে জুটি ভাঙেন অ্যান্ডারসন। আকাশ দীপের সঙ্গে নবম উইকেটে ৪০ রান তুলে লড়াই চালিয়ে যান জুরেল। ৯৬ বলে ফিফটি করেন, ১৪৬ বলে ৯০ রানের ইনিংসে ৬টি চারের সঙ্গে মারেন ৪টি ছক্কা।
দীপকে এলবিডব্লু করে সে জুটি ভাঙেন শোয়েব বশির। ইংল্যান্ড অফ স্পিনারের সেটিই ছিল পঞ্চম উইকেট, টেস্টে তো বটেই প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারেই এই প্রথম ৫ উইকেট পেলেন তিনি। রেহান আহমেদের পর ইংল্যান্ডের সবচেয়ে কম বয়সী বোলার হিসেবে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তিও হয় বশিরের। পল অ্যাডামসের পর ভারতের বিপক্ষে তাদের মাটিতে সবচেয়ে কম বয়সে ইনিংসের অর্ধেক উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও গড়েন তিনি। জুরেল অবশ্য মাইলফলকে যেতে পারেননি, হার্টলির বলে বোল্ড হয়ে থামতে হয় তাঁকে। তবে ইংল্যান্ডের লিড ৪৬ রানে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখেন ২৩ বছর বয়সী এ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।
৪৬ রানের লিড নিয়ে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি ইংল্যান্ডের। পঞ্চম ওভারে পরপর ২ বলে বেন ডাকেট ও ওলি পোপকে ফেরান রবিচন্দ্রন অশ্বিন। রক্ষণাত্মক শট খেলতে গিয়ে ব্যাট প্যাডে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন ডাকেট, পেছনে পায়ে ভর করে অফ স্পিনের আশায় খেলতে গিয়ে এলবিডব্লু হন পোপ। হায়দরাবাদে ডাবল সেঞ্চুরি করা পোপ এ টেস্টে ২ ইনিংস মিলিয়ে টিকলেন মাত্র ৩ বল।
জোড়া উইকেটের ধাক্কা অনেকটাই সামাল দিয়ে এনেছিলেন সতর্ক জো রুট ও প্রতি-আক্রমণ করা জ্যাক ক্রলি। অশ্বিন এরপর আঘাত করেন আবার। ফুল লেংথের বল মিস করে এলবিডব্লু হন প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা রুট, ভারত সে উইকেট পায় রিভিউ নিয়ে। বল ট্র্যাকিংয়ে সূক্ষ্ম ব্যবধানে দেখায় তিন ‘লাল’, যদিও সে সিদ্ধান্তে খুব একটা সন্তুষ্ট মনে হয়নি ইংল্যান্ডকে।
দীর্ঘদেহী ক্রলি তাঁর লম্বা পদক্ষেপ কাজে লাগিয়ে স্পিনারদের ড্রাইভ করেন দারুণভাবে, সিরিজে তৃতীয় ফিফটিও পেয়ে যান। তবে আবারও ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে ব্যর্থ তিনি, এবার চা-বিরতির ঠিক আগে ৬০ রান করে বোল্ড হন কুলদীপের বলে। সে সময় কাভারে ফিল্ডার ছিল না, সে দিকে খেলতে গিয়েই নিজের বিপদ ডেকে আনেন ক্রলি। শুরুর নড়বড়ে অবস্থা কাটিয়ে এগোতে পারেননি বেন স্টোকসও, ম্যাচে দ্বিতীয়বার বেশ নিচু হওয়া বলে আউট ইংল্যান্ড অধিনায়ক। এবার কুলদীপের বলে একটু পা বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে প্যাডে লেগে বোল্ড তিনি। অবশ্য দুবারই পা আরেকটু বাড়িয়ে খেলতে পারতেন কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সে পর্যন্ত বেশ স্বচ্ছন্দ ছিলেন জনি বেয়ারস্টো, কিন্তু চা-বিরতির পর ঠিক প্রথম বলেই মনযোগ নড়ে যায় তাঁর। জাদেজাকে আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে শর্ট কাভারে ক্যাচ তোলেন ৪২ বলে ৩০ রান করে। চাপে পড়া ইংল্যান্ডের ফিরে আসার লড়াই এরপর হয়ে পড়ে বেশ কঠিন।
বেন ফোকস ক্রিজে সময় কাটিয়ে একটু প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন, তবে সেটি ঠিক কাজে আসেনি। প্রথম ইনিংসের মতো এবার আর শেষদিকে তেমন অবদান রাখতে পারেননি কেউ। টম হার্টলি ও ওলি রবিনসনকে ফেরান কুলদীপ যাদব। অশ্বিনের বলে রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লু থেকে বাঁচলেও তাঁকেই ফিরতি ক্যাচ দেন ফোকস। পরে অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করে ইনিংসে ৩৫তম বার ৫ উইকেট নিয়ে অনিল কুম্বলেকে ছুঁয়ে ফেলেন অশ্বিন। ৫ উইকেট নেওয়ার পথে অবশ্য দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার তালিকায় কুম্বলেকে (৩৫০) ছাড়িয়ে গেছেন অশ্বিন। তাঁর ওপরে এখন আছেন শুধু মুত্তিয়া মুরালিধরন (৪৯৩), জেমস অ্যান্ডারসন (৪৩৪) ও স্টুয়ার্ট ব্রড (৩৯৮)।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৩৫৩ ও ৫৩.৫ ওভারে ১৪৫ (ক্রলি ৬০, ডাকেট ১৫, পোপ ০, রুট ১১, বেয়ারস্টো ৩০, স্টোকস ৪, ফোকস ১৭, হার্টলি ৭, রবিনসন ০, বশির ১*, অ্যান্ডারসন ০; অশ্বিন ৫/৫১, জাদেজা ১/৫৬, সিরাজ ০/১৬, কুলদীপ ৪/১৬)।
ভারত: ১০৩.২ ওভারে ৩০৭ (জুরেল ৯০, জয়সোয়াল ৭৩, গিল ৩৮, কুলদীপ ২৮; বশির ৫/১১৯, হার্টলি ৩/৬৮, অ্যান্ডারসন ২/৪৮) ও ৮ ওভারে ৪০/০ (রোহিত ২৪*, জয়সোয়াল ১৬*)।—তৃতীয় দিন শেষে।