বিশ্বকাপে টানা ১২ ম্যাচে হারের পরিসংখ্যানকে সঙ্গী করেই এবার ভারতে পা রেখেছে আফগানিস্তান দল। ১৫ অক্টোবর দিল্লিতে আফগানরা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামে সংখ্যাটাকে ‘১৪’ বানিয়ে। বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করা সেই আফগানিস্তানই সেদিন ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়ে হারিয়ে দেয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে। এর আট দিন পর আফগানদের জালে ধরা পড়ে আরেকটি বড় শিকার—পাকিস্তান।
নিজেদের বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ১৪ ম্যাচে যাদের মাত্র একটি জয় ছিল, সেই আফগানরা পরের তিন ম্যাচে পেয়ে গেল দুটি জয়। কীভাবে বদলে গেল ভাগ্য, কাল সংবাদ সম্মেলন আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি জানালেন সেটাই। গত কয়েক বছরের ‘কঠোর পরিশ্রম’ ও ‘পরিকল্পনা’র ফসলই এবার ঘরে তুলছে আফগানরা, মনে করেন অধিনায়ক।
বিশ্বকাপে চমক দেখানো আফগানদের সামনে আজ আরেক সাবেক চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের হারিয়ে দিতে পারলে আফগানিস্তানের সেমিফাইনালের স্বপ্ন বড় হবে আরও। সেই ম্যাচের আগে গতকাল সংবাদ সম্মেলনেই শহীদি জানান কীভাবে বদলে গেছে তাঁর দল, ‘দলটার যাত্রা বিশ্বকাপ থেকে শুরু হয়নি। গত দুই বছর এই দল নিয়ে আমরা কাজ করেছি। আমরা এ সময় পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মতো দলের সঙ্গে নিয়মিত খেলেছি। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রচুর ৫০ ওভারের ক্রিকেট খেলেছি আর নিজেদের পরিকল্পনায় স্থির থেকেছি।’
খেলোয়াড়দের ওপর আস্থা রাখার ফল পাওয়ার কথাও বললেন ২৮ বছর বয়সী শহীদি, ‘আমরা আস্থা রেখেছি দলটির ওপর। যখন আমরা ভালো খেলতে পারিনি, তখনো দলের খেলোয়াড়দের ওপর আস্থা ছিল। আমরা ওদের অনেক সুযোগ দিয়েছি। ভালো কিংবা খারাপ সময়, আমরা বিশ্বাস হারাইনি। আমার মনে হয়, ঠিক এ কারণেই বিশ্বকাপে আমরা ভালো করছি।’
আফগানদের মতো শ্রীলঙ্কাও প্রথম পাঁচ ম্যাচের দুটিতে জিতেছে। প্রথম তিন ম্যাচে হারার পর ১৯৯৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা টানা দুই ম্যাচে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে। লঙ্কানরা অবশ্য আফগানদের চেনা প্রতিপক্ষই। গত দুই বছরে দুবার শ্রীলঙ্কা সফর করেছে আফগানিস্তান। দুবারই তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি জিতেছিল তারা। এ ছাড়া লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে খেলেন আফগানিস্তানের বেশ কিছু খেলোয়াড়। শহীদির কথায়ও আলাদাভাবে এল পারস্পরিক জানাশোনার কথা, ‘আমরা সবাই ওদের ভালোভাবে চিনি, ওরাও আমাদের সম্পর্কে সব জানে’।
‘চেনা’ দুই দলের লড়াইটাকে স্পিন-লড়াই হিসেবেও চালিয়ে দেওয়া যায়। আফগানিস্তান তো আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে নামিয়ে দিয়েছিল চার স্পিনারকে। মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, মুজিব উর রেহমানের সঙ্গে সেদিন যোগ দিয়েছিলেন ১৮ বছর বয়সী বাঁহাতি লেগ স্পিনার নুর আহমেদ।
শ্রীলঙ্কারও বড় শক্তি স্পিন। তবে দলটি বিশ্বকাপের আগেই চোটের কারণে হারিয়ে ফেলেছে মূল স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে। মহীশ তিকশানা ও দুনিত ভেল্লালাগেরা অবশ্য আছেন দলে।
লঙ্কানদের চোটের সঙ্গেও লড়তে হচ্ছে বেশ। কাল তৃতীয় লঙ্কান হিসেবে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে পেসার লাহিরু কুমারার। কুমারার বদলে শ্রীলঙ্কা দলে টেনেছে দুষ্মন্ত চামিরাকে। চামিরা অবশ্য ১৯ অক্টোবর থেকেই রিজার্ভ খেলোয়াড় হিসেবে শ্রীলঙ্কা দলের সঙ্গে ভারতে ছিলেন।
আফগানদের মতো চোটের সঙ্গে লড়াই করা শ্রীলঙ্কারও আজকের ম্যাচটি শেষ চারের স্বপ্ন উজ্জ্বল করার উপলক্ষ। পুনেতে আজ ম্যাচ শেষে কার স্বপ্ন বড় হয়, সেটাই দেখার অপেক্ষা।