ভারতের দুই ওপেনার জয়সোয়াল ও রাহুল ১৭২ রান তুলে অবিচ্ছিন্ন আছেন
ভারতের দুই ওপেনার জয়সোয়াল ও রাহুল ১৭২ রান তুলে অবিচ্ছিন্ন আছেন

জয়সোয়াল-রাহুলের দুর্দান্ত জুটি, অস্ট্রেলিয়াকে চোখ রাঙাচ্ছে ভারত

সারা দিনে একবারও খেলা দেখেননি, কোনো মাধ্যমে খোঁজও নেননি—এমন কারও পার্থ টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষের স্কোর দেখলে চমকে ওঠার কথা। আগের দিন যা ছিল ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমি, আজ সেটিই হয়ে উঠল বোলারদের জন্য মহাসড়ক! নাহ, পিচের আচরণ পুরোপুরি বদলে যায়নি, কিন্তু স্কোরবোর্ড তেমনই বলছে।

প্রথম দিনে ১৭ উইকেটের পতন দেখা পার্থ টেস্ট দ্বিতীয় দিনে দেখল মাত্র ৩ উইকেট। এই তিন উইকেট নিয়েছেন ভারতের বোলাররা। আর কোনো উইকেট যে পড়েনি, সেই কৃতিত্বও ভারতেরই। যশস্বী জয়সোয়াল ও লোকেশ রাহুলের উদ্বোধনী জুটিই কাটিয়ে দিয়েছে পুরো দুই সেশন। দ্বিতীয় ইনিংসে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ১৭২ রান তুলে ভারত এখন পার্থ টেস্টে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায়। প্রথম ইনিংসে ৪৬ রানের লিড নেওয়া সফরকারীরা দ্বিতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এগিয়ে ২১৮ রানে। হাতে আছে পুরো ১০ উইকেট, ম্যাচ বাকি তিন দিন।

ম্যাচে ভারতকে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা জয়সোয়ালের। ২২ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ওপেনার দিন শেষ করেছেন ৯০ রানে অপরাজিত থেকে। দুপুরে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হওয়ার পর ব্যাট থেকে প্রথম দুটি বাউন্ডারি আসে তাঁর ব্যাট থেকেই। এর পর ধীরে ধীরে রানের জন্য ব্যাট চালাতে শুরু করেন রাহুলও। প্রথমে দুজনের জুটিতে দলীয় রান পঞ্চাশ পার করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আগের দিন এই রানে পৌঁছাতে ভারত হারিয়েছিল ৪ উইকেট, অস্ট্রেলিয়া ৬।

সেঞ্চুরি থেকে ১০ রান দূরে জয়সোয়াল

শুরুর ওই চাপ সামলাতে গিয়েই জয়সোয়াল-রাহুল দলের রান প্রথম ৫০-এ নিতে নিতে খেলে ফেলেন ১৫ ওভার। এরপর অবশ্য বেলা যত গড়িয়েছে, রানও এসেছে সহজে। দুজনে দলের রান ৫০ থেকে ১০০, এরপর ১০০ থেকে ১৫০ রানে নিয়ে গেছেন বড় কোনো অস্বস্তি ছাড়াই। নিজেরাও পেরিয়েছে ব্যক্তিগত ফিফটির মাইলফলক।
দিনের শেষ সেশনে অবশ্য জয়সোয়াল-রাহুলকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছিল উইকেট। স্টার্ক, কামিন্সদের কয়েকটি ডেলিভারি নিচু হয়েছে, অসম বাউন্সেরও দেখা মিলেছে।

এর মধ্যেই অবশ্য উইকেটে টিকে থেকে দারুণ কিছু মাইলফলক অর্জন করেছেন দুই ভারতীয়। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ১৭২ রান অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অতিথি দলের ওপেনিংয়ে ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০১০ সালে মেলবোর্ন টেস্টে ১৫৯ রানের জুটি গড়েছিলেন ইংল্যান্ডের অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস ও অ্যালিস্টার কুক। আর অ্যাশেজের বাইরে অন্য কোনো দেশের অস্ট্রেলিয়ায় ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ ১৯৮৬ সালে সিডনিতে সুনীল গাভাস্কার ও ক্রিস শ্রীকান্তের ১৯১।

দুই সেশন কাটিয়ে দিয়েছেন রাহুল–জয়সোয়াল

নিজেদের দুই পূর্বসূরিকে হয়তো আগামীকালই ছাড়িয়ে যাবেন জয়সোয়াল-রাহুল। ভারতের দুই ওপেনার ভেঙে দিতে পারেন আরেকটি পুরোনো রেকর্ডও। ২০১০ সালের অ্যাশেজে ব্রিজবেনে ৬৬.২ ওভার ব্যাট করেছিলেন স্ট্রাউস-কুক। এরপর অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে নেমে আর কোনো বিদেশি দলের ওপেনিং জুটি ৫০ ওভার পার করতে পারেনি। জয়সোয়াল-রাহুলরা কাল সকালে তা ছাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়।

অবশ্য সবচেয়ে বড় অপেক্ষা অস্ট্রেলিয়াকে রান-চাপা দেওয়ার। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত মাইলফলকে নজর তো থাকবেই। ক্যারিয়ারের ১৫তম টেস্ট খেলতে নামা জয়সোয়াল এখন চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১০ রান দূরে। আর রাহুলও চাইবেন ২০১৫ সালের পর অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম সেঞ্চুরি পেতে, যিনি দ্বিতীয় দিন শেষে অপরাজিত ৬২ রানে।

বুমরা নেন ৩০ রানে ৫ উইকেট

রাহুল-জয়সোয়াল দুই সেশন কাটিয়ে দেওয়ার আগে দিনের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া তাদের প্রথম ইনিংসে শেষ ৩ উইকেট নিয়ে ২৪.২ ওভারে ৩৭ রান যোগ করে। ৭ উইকেটে ৬৭ রান নিয়ে নামা দলটি এক শ পেরোয় মূলত মিচেল স্টার্কের ব্যাটে। নয়ে নামা এই বাঁহাতি ১১২ বল খেলে করেন ২৬ রান, যা বল ও রান দুই দিক থেকেই অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের সর্বোচ্চ। ভারতের হয়ে ৩০ রানে ৫ উইকেট নেন যশপ্রীত বুমরা। এ নিয়ে কপিল দেবের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এশিয়ার বাইরে ৯ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন পার্থে অধিনায়ক হিসেবে খেলতে নামা এই পেসার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত: ১৫০ ও ১৭২/২ (জয়সোয়াল ৯০*, রাহুল ৬২; হ্যাজলউড ০/৯)। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ৫১.২ ওভারে ১০৪ (স্টার্ক ২৬, ক্যারি ২১, হেড ১১, ম্যাকসুয়েনি ১০; বুমরা ৫/৩০, হর্ষিত ৩/৪৮, সিরাজ ২/২০)।