টেস্টে দ্বিতীয়বার ১০ উইকেট পেলেন তাইজুল
টেস্টে দ্বিতীয়বার ১০ উইকেট পেলেন তাইজুল

সেই সিলেটেই তাইজুলের ‘অন্য রকম’ ১০ উইকেট

সিলেটের অভিষেক টেস্ট। সিলেটবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ও রোমাঞ্চ ছিল ভরপুর। আয়োজকেরাও সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের প্রথম টেস্টটাকে রাঙাতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেননি। অভিষেক উপলক্ষে উপস্থিত সাংবাদিকদের দেওয়া হয়েছিল বিশেষ স্যুভেনিরও।

প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে আর এমন কী! তাই ম্যাচ শুরুর আগেই যেন সিলেটজুড়ে জয়ের ঘ্রাণ! কিন্তু মাঠের খেলা শুরু হতেই ভোজবাজির মতো সব বদলে গেল। কঠিন উইকেটে প্রথম ইনিংসে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, শন উইলিয়ামস ও পিটার মুরের তিন ফিফটিতে জিম্বাবুয়ে করল ২৮২ রান। বল হাতে ১০৮ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিলেন তাইজুল।

জবাব দিতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে শুরু থেকেই চোখে শর্ষে ফুল দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। ১৯ রানে ৪ উইকেটে হারানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল অলআউট হলো ১৪৩ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য জিম্বাবুয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারল না। তাদের না পারার পেছনে মূল কলকাঠিটা সেদিন নেড়েছিলেন তাইজুলই। ৬২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়েকে তাইজুল থামিয়ে দেন ১৮১ রানে। তাইজুলের এমন লড়াইয়ের পরও অবশ্য ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছিল।

বাংলাদেশ যখন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে, তখন তাদের সামনে থাকা ৩২১ রানের লক্ষ্যটা এভারেস্ট জয়ের মতোই কঠিন ছিল। সেই কঠিন আর পাড়ি দিতে পারল না বাংলাদেশ। ১৬৯ রানে গুটিয়ে গিয়ে সিলেটের অভিষেকের আনন্দকে বিষাদে মুড়িয়ে দিলেন লিটন-মুশফিকরা। আর দলগত ব্যর্থতার কারণে তাইজুলের টেস্টে প্রথম ১০ উইকেট প্রাপ্তির কৃতিত্বও সেদিন সেই বিষাদের চাদরেই ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। সে ম্যাচে তাইজুলকে হতাশ করায় মন কিছুটা হয়তো সিলেট স্টেডিয়ামের পুড়েছিলও! কে জানে, তাই হয়তো ৫ বছর পর কিছুটা কাকতালীয় মিলের ভেতর দিয়েই সেদিনের দায়টা শোধ করল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম।

ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে তাইজুল

আজ সেই সিলেটেই টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো ১০ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। এই ম্যাচে মতো সেই ম্যাচও শুরু হয়েছিল নভেম্বরে। বাংলাদেশকে বিব্রতকর হার উপহার দেওয়ার সেই ম্যাচে জিম্বাবুয়ে জিতেছিল ১৫১ রানে। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ বছর পর বাংলাদেশ সেই সিলেটে জিতল ১৫০ রানে

সেই ম্যাচে তাইজুলের বোলিং ফিগার ছিল ৬৮.১ ওভারে ১৫ মেডেনে ১৭০ রানে ১১ উইকেট। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এবারের ম্যাচে তাইজুলের বোলিং ফিগার ছিল—৭০.১ ওভারে ১৭ মেডেনে ১৮৪ রান দিয়ে ১০ উইকেট। দুটি বোলিং ফিগারে পুরো মিল না থাকলেও সংখ্যাগুলো কেমন যেন খুব কাছাকাছি!

ইকোনমি রেট ও বোলিং গড়ও বেশ কাছাকাছি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই টেস্টে তাইজুলের ইকোনমি ছিল ২.৪৯ এবং বোলিং গড় ছিল ১৫.৪৫। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেটি ২.৬২ ও ১৮.৪০। আলাদা দুই ম্যাচে তাইজুলের দুটি পারফরম্যান্সের এমন কাছাকাছি থাকা আশ্চর্যকরই। কিন্তু এটি নিশ্চয় তাইজুলকে অন্য রকম এক তৃপ্তিই দেবে।

অন্তত হারা ম্যাচে ১০ উইকেট প্রাপ্তির গ্লানি তাঁকে আর বয়ে বেড়াতে হবে না। বরং সমালোচনার মুখে থাকা বাংলাদেশকে যে মুহূর্তে তিনি জয়টি এনে দিয়েছেন সেটিই অন্য রকম আত্মবিশ্বাস জোগাবে তাইজুলকে। আর হ্যাঁ, সিলেট টেস্টে ১০ উইকেট নিয়ে তাইজুল একটি কাতারেও নাম লিখিয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে এত দিন এক ম্যাচে দুবার করে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন শুধু সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। সিলেট টেস্টে ১০ উইকেট নিয়ে তাইজুলও নাম লেখালেন সাকিব-মিরাজের তালিকায়।