তিন ম্যাচের সিরিজ। প্রথম ম্যাচে হারের পর প্রশ্নটা এখন অবধারিত—শারজায় আজ দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে বাংলাদেশ কি পারবে সিরিজে সমতা ফেরাতে?
গত জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটি বাদ দিলে প্রতি সিরিজেই বাংলাদেশ দলের একই দশা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অতীত রেকর্ড আর প্রিয় ওয়ানডে সংস্করণ বলে শারজায় প্রথম ম্যাচে স্বস্তিতে ফেরার আশা ছিল। ফলাফল কী, তা তো সবারই জানা।
শারজায় আজ দ্বিতীয় ম্যাচে হারলেই সিরিজ শেষ বাংলাদেশের, জিতলে ফিরবে সমতায়। তখন ১১ নভেম্বরের শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের স্বপ্নও দেখা যাবে; কিন্তু তার আগে আজ সিরিজে ফেরার কাজটাই যে কঠিন! একে তো ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে বড় রান নেই, সঙ্গে প্রথম ম্যাচে পাওয়া চোটে সিরিজ থেকে ছিটকে গেছেন মুশফিকুর রহিম, দেশে ফিরে আসতে পারেন আজই। মিডল অর্ডারে তাই শূন্যতা থেকেই যাবে। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ সেটি কতটুকু পূরণ করতে পারবেন, প্রথম ম্যাচে রশিদ খানের বলে তাঁর আউটের ধরনই জাগাচ্ছে সে সংশয়।
উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান মুশফিকের জায়গায় আজ খেলাতে হবে জাকের আলী কিংবা জাকির হাসানকে। দলে এ দুজনই উইকেটকিপার আছে এখন। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ও সাম্প্রতিক ফর্মে এগিয়ে থাকায় জাকের আলীরই হয়তো আজ খেলার সম্ভাবনা বেশি। সেটি হলে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে যাবে তাঁর।
বাংলাদেশ–আফগানিস্তানের একটি অতীত পরিসংখ্যানও এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিপক্ষে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৭ ম্যাচে ১১টিতে জিতলেও প্রথম ম্যাচ হেরে বাংলাদেশ কখনো সিরিজ জিততে পারেনি তাদের বিপক্ষে। ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে দুই দলের সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারার পর দ্বিতীয় ম্যাচেও হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার অবশ্য দ্বিতীয় ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলের শক্তি একদিক দিয়ে বাড়ছেও। ভিসা জটিলতায় প্রথম ওয়ানডের আগে দলে যোগ দিতে না পারা পেসার নাহিদ রানা ও স্পিনার নাসুম আহমেদ দলে যোগ দিয়েছেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর প্রথমবার ওয়ানডে দলে এলেন নাসুম। আর ফাস্ট বোলার নাহিদ রানা তো এবারই প্রথম ওয়ানডে দলে ডাক পেলেন।
আজকের ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ শুধু এই সিরিজের জন্য নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই শারজার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আরাধ্য হয়ে উঠেছে জয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতে আসার পর গত দুই মাস ধরে নানা পরিবর্তন আর বিতর্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
টেস্ট ও টি–টোয়েন্টিতে ভুগছে বাংলাদেশ দল। আশা যা একটু ওয়ানডে নিয়ে। এই সিরিজের আগে খেলা সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজও বাংলাদেশই জিতেছিল। আফগানিস্তানের কাছে সিরিজ হার সেই স্বস্তিতে কাঁটা হয়ে বিঁধবে নিশ্চিত। সে রকম পরিস্থিতি এড়াতে আজ নাজমুল ও মেহেদী হাসান মিরাজদের নিতে হবে বাড়তি দায়িত্ব, যেটা তারা পারেননি সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে। সেই ম্যাচে ২৩ রানে শেষ ৮ উইকেট হারানোর ধসটা শুরু হয়েছিল অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের আউট দিয়ে। এরপর ভালো শুরু করেও দলকে ১৩২ রানে রেখে ফিরে যান মিরাজ।
দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে কাল সংবাদ সম্মেলনে মিরাজও স্বীকার করেছেন, ম্যাচটা তাঁদের শেষ করে আসাই উচিত ছিল, ‘দুজন যেভাবে থিতু হয়ে গিয়েছিলাম, একজনের শেষ করা উচিত ছিল। আমি শান্তকে (নাজমুল) বারবার বলছিলাম, আমাদের দুজনেরই যেহেতু সমস্যা হচ্ছে খেলতে, তাই পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য অনেক কঠিন হবে।’
তবে সিরিজে ফেরার ম্যাচ নিয়ে মিরাজ আশার কথাও শুনিয়েছেন, ‘আমাদের এখনো সুযোগ আছে। একটা ম্যাচ হেরেছি, এখনো দুটি ম্যাচ আছে। আমরা যেহেতু একটু ব্যাকফুটে আছি, পরের ম্যাচটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
আজকের ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ শুধু এই সিরিজের জন্য নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই শারজার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আরাধ্য হয়ে উঠেছে জয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতে আসার পর গত দুই মাস ধরে নানা পরিবর্তন আর বিতর্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সম্প্রতি মাঠ থেকেও সুবাতাস হারিয়ে গিয়ে ভর করেছে অস্বস্তির গুমোট হাওয়া। বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রাণ ফেরাতেই তাই আজকের ম্যাচটা জিতে সিরিজ জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হবে নাজমুল হোসেনের দলকে।