হার্দিক পান্ডিয়া এমনিতেই মুম্বাই ইন্ডিয়ানস সমর্থকদের দুয়ো শুনছেন। আজকের ম্যাচের পর পান্ডিয়া যে আরও বেশি সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হতে থাকবেন, তা অনুমান করাই যায়। এটি যে যেনতেন ম্যাচ নয়; আইপিএল ইতিহাসের সফলতম দুই দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস আর চেন্নাই সুপার কিংসের মর্যাদার লড়াই, যেটি এখন আইপিএলের ‘এল ক্লাসিকো’ নামে পরিচিত।
এমন মহারণতুল্য ম্যাচে একজন অধিনায়ক দলকে যতভাবে ডোবাতে পারেন, পান্ডিয়া যেন সেটারই বন্দোবস্ত করেছেন। এর আগে ৩ ম্যাচে বোলিংয়ে বেদম মার খাওয়ার পরও আজ আবার বল হাতে তুলে নিয়েছেন পান্ডিয়া। এবার ৩ ওভারে দিয়েছেন ৪৩ রান। এরপর ব্যাট হাতেও ‘সুপার ফ্লপ’। করেছেন ৬ বলে মাত্র ২ রান। পান্ডিয়ার বাজে পারফরম্যান্সের রাতে রোহিত শর্মার দারুণ এক সেঞ্চুরিও কাজে আসেনি। ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মোস্তাফিজ–ধোনিদের চেন্নাইয়ের কাছে মুম্বাইকে হারতে হয়েছে ২০ রানে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড় ও শিবম দুবের ফিফটি আর ধোনির শেষের তাণ্ডবে তুলেছিল ২০৬ রান। জবাবে রোহিত শর্মার আইপিএল ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পরও ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৬ রানে আটকে গেছে মুম্বাই।
মুম্বাইয়ের সাবেক অধিনায়ক রোহিত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলে ৬৩ বলে ১০৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। চেন্নাইকে ম্যাচ জেতাতে বোলিংয়ে সবচেয়ে বড় অবদান মাতিশা পাতিরানার। ‘বেবি মালিঙ্গা’ খ্যাত শ্রীলঙ্কার এ পেসার ২৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। আইপিএল ক্যারিয়ারে এটিই পাতিরানার সেরা বোলিং। ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও উঠেছে তাঁর হাতে।
এ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থান পাকাপোক্ত করেছে চেন্নাই। ৪ পয়েন্টে আটকে থাকা মুম্বাই নেমে গেছে আট নম্বরে।
মোস্তাফিজ আজ ১ উইকেট পেলেও ৪ ওভারে দিয়েছেন ৫৫ রান, যা তাঁর আইপিএলে ক্যারিয়ারে যুগ্ম বাজে বোলিং ফিগার। ২০১৮ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষেও তিনি ৫৫ রান দিয়েছিলেন। সে ম্যাচে ছিলেন উইকেটশূন্য। ওই মৌসুমে তিনি খেলেছিলেন আজকের প্রতিপক্ষ মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে।
১৩.৮০ ইকোনমি রেটে রান বিলিয়ে চেন্নাই বোলারদের মধ্যে মোস্তাফিজই সবচেয়ে খরুচে ছিলেন। তবে বাউন্ডারি লাইনের কাছে পাতিরানার বলে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে সূর্যকুমার যাদবকে (০) ফিরিয়েছেন মোস্তাফিজ। সেই ক্যাচ চেন্নাইকে ম্যাচেও ফিরিয়েছে।
ওয়াংখেড়ের ব্যাটিং–স্বর্গে আগের ম্যাচে বেঙ্গালুরুর দেওয়া ১৯৭ রানের লক্ষ্য ২৭ বল বাকি থাকতেই টপকে গিয়েছিল মুম্বাই। এ ম্যাচে মুম্বাইকে তার চেয়েও কম লক্ষ্য তাড়া করতে হবে বলে মনে হচ্ছিল।
কিন্তু চেন্নাই ইনিংসের শেষ ওভারে বল করতে আসা পান্ডিয়ার শেষ ৪ বলে ৩ ছক্কা ও একটি ডাবলসে ২০ রান নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন ধোনি। ৪৩ ছুঁই ছুঁই বয়সেও ফিনিশারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দলের সংগ্রহে ২০০–এর ওপারে নিয়ে গেছেন।
লক্ষ্য তাড়ায় মুম্বাইয়ে উড়ন্ত শুরুই এনে দিয়েছিলেন রোহিত ও ঈশান কিষান। দুজন ৭ ওভারে তুলেছিলেন ৭০ রান। কিন্তু অষ্টম ওভারে পাতিরানা প্রথমবার বোলিংয়ে এসেই কিষানকে আউট করে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন। এক বল পরেই আইসিসি টি–টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান সূর্যকুমারকে ফেরান মোস্তাফিজের ক্যাচ বানিয়ে।
এরপর তিলক ভার্মাকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৬০ রানের জুটি গড়ে মুম্বাইকে ভালোভাবেই ম্যাচে রেখেছিলেন রোহিত। তবে পাতিরানা নিজের দ্বিতীয় স্পেল করতে এসেই তিলককে আউট করেন। এরপর পান্ডিয়া, টিম ডেভিড, রোমারিও শেফার্ড, মোহাম্মদ নবীদের কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। রোহিতের একার লড়াই তাই দলের কোনো কাজে আসেনি।
চেন্নাই সুপার কিংস : ২০ ওভারে ২০৬/৪
(গায়কোয়াড় ৬৯, দুবে ৬৬*, রবীন্দ্র ২১, ধোনি ২০*; পান্ডিয়া ২/৪৩, গোপাল ১/৯, কোয়েৎজি ১/৩৫)
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস : ২০ ওভারে ১৮৬/৬
(রোহিত ১০৫*, তিলক ৩১, কিষান ২৩; পাতিরানা ৪/২৮, দেশপাণ্ডে ১/২৯, মোস্তাফিজ ১/৫৫)
ফল : চেন্নাই সুপার কিংস ২০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মাতিশা পাতিরানা।